×

জাতীয়

রোজায় গ্যাস সংকট তীব্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০১৮, ০১:৩১ পিএম

রোজায় গ্যাস সংকট তীব্র

বছরজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট থাকলেও রমজানের শুরুতেই তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও গ্যাস দুর্ভোগ স্থায়ী রূপ নিয়েছে। আগে দিনের বেলায় চুলা না জ¦ললেও রাতে সংকট থাকত না। তবে রোজা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে অনেক এলাকায় এখন আর রাতেও চুলা জ্বলছে না। ফলে ইফতার ও সেহরি বন্ধের উপক্রম হয়েছে বলে অনেক এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, গ্যাস সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এখন আর গ্যাস সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করছেন না। তারা বলছেন, উৎপাদন কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলেই সংকট আর থাকবে না।

গ্যাস সংকটের কারণে ঘরের ক্ষোভ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে বাইরে চলে আসছে। পাওয়া যাচ্ছে নানান ধরনের কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য। গ্যাস না থাকায় গৃহিণীদের মেজাজ চড়ে আছে। বাইরে থেকে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কেনার চাপে পড়ে গৃহস্থেরও মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। বাসায় চুলা না জ্বালাতে পেরে অনেকেই আবার বাইরে থেকেই ইফতার ও সেহরির জন্য খাবার কিনে নিচ্ছেন। গ্যাসের ভোগান্তিতে পড়ে সব গ্রাহকই রাত-দিন গ্যাস কর্তৃপক্ষের গোষ্ঠী উদ্ধার করছেন।

রোজার শুরুতেই গ্যাস সংকটের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী এম এইচ আশরাফ আলী জানান, গ্যাসের সরবরাহ কম থাকার কারণেই মূলত সংকট তৈরি হয়েছে। চাহিদার সমপরিমাণ গ্যাস আমরা গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করতে পারছি না। এখন নিয়মিতভাবে প্রায় ৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের ঘাটতি মোকাবেলা করছি। এই সমস্যা হুট করেই আমাদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ বাড়লেই সমস্যা সমাধান হবে। আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে আমরা বেশি মাত্রায় গ্যাস সরবরাহ করতে পারব। তখন আর গ্যাসের সংকট থাকবে না। এখন আমাদের এলএনজির ওপরই ভরসা রাখতে হবে। তিনি আরো জানান, রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাসের পুরনো সরবরাহ লাইনেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। লাইনে কিছু গ্যাস থাকলেও লাইনের ভেতরের সমস্যার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস পৌঁছাচ্ছে না। কয়েক মাস আগেও যেখানে সমস্যা কম ছিল, এখন সেখানেও গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে না বলে জানতে পেরেছি। আশা করছি, আগামী মাস থেকে সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

তিতাস গ্যাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের উৎপাদন না বাড়ায় সরবরাহ কম। এটাই একমাত্র সমস্যা নয়। জ্বালানি বিভাগ থেকে রোজার মাসের শুরুতেই নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্টগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। আবার পেট্রোবাংলা বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা রাত ১১টা ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনে জ্বালানি বিক্রি শুরু হয়। বাণিজ্যিক ও প্রাইভেট যানবাহনগুলো জ্বালানি নিতে শুরু করে। সঙ্গত কারণেই তখন আবাসিক এলাকায় গ্যাসের চাপ একেবারেই কমে যায়। তাই দিনের সংকট রাত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়া এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের সংকট তীব্র হয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ৫ হাজার ২২৭ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধি এবং প্রতিদিন ১৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু তা আশানুরূপ না হওয়ায় এই গ্যাস সংকট আরো বেড়েছে। চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছে। এখানেই ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি।

অন্য একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। কিন্তু প্রকৃত চাহিদা হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহকৃত এই গ্যাস মানসম্মত নয়। এ কারণে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীর পশ্চিম ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা শামীমা আক্তার অভিযোগ করেন, রোজার প্রথম দিন থেকেই গ্যাসের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। রাত ৮টার আগে গ্যাস পাওয়া যায় না। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আবার চুলা বন্ধ হয়ে যায়। তাই সেহরি ও ইফতার বাসায় তৈরি করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। এই অত্যাচার আর ভালো লাগে না। গত বছর এই এলাকায় তেমন গ্যাস সংকট ছিল না। কিন্তু এবার গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। একই রকম অবস্থা রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মিরপুর, পল্লবী, শাহ আলী, তেজগাঁও, গোলাপবাগ, ফার্মগেট, রামপুরা, বাসাবো, খিলগাঁও, মুগদা, কদমতলী, গেণ্ডারিয়া, দয়াগঞ্জ, গোপীবাগ, নারিন্দা এলাকাতেও। পুরো তেজগাঁও এলাকায় সকাল ১০ টার পর গ্যাস থাকে না। দুপুর দুইটার পর আসে। তোপখানা রোড এলাকার বাসিন্দা গুলশান আরা বেগম জানান, প্রথম রোজার দিন রাত ১০টার পর গ্যাস চল যায়। গ্যাসের অভাবে সেহরির জন্য খাবার রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। নগরীর রামপুরা এলাকায় গ্যাসের অবস্থা আরো ভয়াবহ। এই এলাকার অনেক বাসাবাড়িতে সারাদিন গ্যাস থাকে না। সন্ধ্যার দিকে গ্যাস আসতে শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসে। বাইরে থেকে ইফতার কিনে আনতে হয়। আবার নগরীর অনেক স্থানে খুব ভোরের দিকে গ্যাস থাকলেও সকাল ৮টা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ মিলেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App