×

জাতীয়

যাত্রাবাড়ীর ওসির নামে চাঁদাবাজি হয় ফুটপাথে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০১৮, ০৪:৩৩ পিএম

যাত্রাবাড়ীর ওসির নামে চাঁদাবাজি হয় ফুটপাথে
১৮ মে, ২০১৮ বিকাল ৪টা। যাত্রাবাড়ী মোড়ে পর্যায়ক্রমে বসা শুরু করেছে ফুটপাথের দোকানিরা। আধা ঘণ্টা পর যাত্রাবাড়ী থানার একটি পুলিশের গাড়ি সেখানে আসে। গাড়ি থেকে নেমে এএসআই বাবলু, কনস্টেবল রুহুল ও বেলাল ফুটপাথে বিক্ষিপ্তভাবে বসা সব দোকানিকে এক পাশ করে বসান। ওই পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রম দেখলে প্রাথমিকভাবে মনে হবে, তারা হয়তো পথচারীদের সুবিধার্থে এমনটা করছেন। কিন্তু একটু পরই তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়। আরো কিছু দোকানিও যাতে বসতে পারে সেজন্যই এই পুলিশি তৎপরতা। এরপর চলে যান পুলিশ সদস্যরা। দোকানগুলোতে ইফতার পর্যন্ত চলে হরদম বিকিকিনি। ইফতারের পরেই ভিন্ন চিত্র। পর্যায়ক্রমে ভিড় করতে থাকে চাঁদাবাজরা। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, একটি ক্লাব, সায়েদাবাদ ফাঁড়ি ও যাত্রাবাড়ী থানার ওসির নামে চাঁদা তুলতে সক্রিয় একাধিক গ্রæপ। চাঁদাবাজির বিষয়ে আগেই এক দোকানির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ওই দোকানি বলেন, ভাই আসল চিত্র দেখতে পাবেন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর। আপনি আমার পাশেই থাকেন। সে অনুযায়ী ওই দোকানির পাশে অবস্থান করে দেখা যায়, একজনের পর একজন চাঁদা নিতে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি দোকানে যাচ্ছেন। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. আজিজুর রহমানের নামে চাঁদা উঠাতে থাকেন মধ্যবয়স্ক কাবিলা ওরফে চাউল আলা নুরু, তার ছেলে জনি, জামাতা সেলিম ও মধ্যবয়স্ক আরেক ব্যক্তি আজিজ গাজী। তারা ৪ জন প্রতি দোকান থেকে ‘ওসি স্যারের টাকা’ বলে ৫০-১৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। ওসি স্যারের চাঁদা দিতে অভ্যস্ত এই দোকানিরা। তাই কেউ কোনো প্রতিবাদ করেন না। এখানে ব্যবসা করতে সবার চাঁদা দিতে হবেÑ এটা তারা মেনেই নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দোকানি বলেন, এখানে কমপক্ষে ১৫০টি দোকান বসে। প্রতি দোকান থেকেই ওসি স্যারের নামে কমপক্ষে ১০০ টাকা নেয়া হয়। এই টাকার বিনিময়ে পুলিশ আমাদের কোনো ঝামেলা করে না। এর আগে যখন আনিস স্যার ওসি ছিলেন তখন তার নামেই চাঁদা তোলা হতো। সম্প্রতি নতুন ওসি এসেছেন, তাই ওসি স্যারের চাঁদাই বলা হয়। একাধিক সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার গোলাপবাগ, কে এম দাস লেন, গোপীবাগ, ধলপুর, সায়েদাবাদ, বৌবাজার, দয়াগঞ্জ, মীরহাজীরবাগ, শহীদ ফারুক রোড, কাজলা, কাজীরগাঁও, কুতুবখালী ও শনিরআখড়া এলাকার ফুটপাথ থেকে লাইনম্যানরা পুলিশের নামে চাঁদা তোলে। এ টাকার একটি নির্দিষ্ট অংশ পৌঁছে যায় ওসির পকেটে। নাজমুল শেখ নামে এক ভ্রাম্যমাণ ফল দোকানি বলেন, এই থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ভ্যানে করে তিনি ফল বিক্রি করেন। জায়গা বুঝে তার কাছ থেকে ২০-৫০ টাকা নেয়া হয়। ওসির নামে চাঁদাবাজির বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমিও শুনেছি আমার নামে চাঁদা উঠানো হয়। কারা উঠায় এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি। তবে এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাঁদাবাজদের নাম ওসিকে জানালে তিনি বলেন, নামগুলো একটু লিখে দেন। আমি এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। এদিকে থানা সূত্র জানায়, নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি হওয়ায় এই থানায় নারী নির্যাতন মামলা বেশি হয়। কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, থানার নারী ও শিশু পরামর্শ কেন্দ্রে আসামি রাখা হয়েছে। ওই কক্ষে নারী ও শিশুদের বিষয়ে কোনো কার্যক্রম চলে বলে মনে হয়নি। তবে অন্য থানাগুলোতে জায়গার সংকট, আবাসিক ও পানির সমস্যা, পার্কিংয়ের জায়গা না থাকাসহ বিভিন্ন সদস্যা থাকলেও এই থানাটিতে সেসব সমস্যা নেই। জনসাধারণকে উন্নত সেবা দেয়ার মতো সবই আছে এখানে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App