×

মুক্তচিন্তা

বাজেটের বাজেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০১৮, ০৬:৩৯ পিএম

প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকেই প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু হওয়া উচিত, বাজেট প্রায় চূড়ান্ত করে এপ্রিল মাসে এসে প্রাক-বাজেট আলোচনার উপযোগিতা যথেষ্ট কমে যায়। প্রাক-বাজেট আলোচনার সুপারিশসমূহ নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যথাসময়ে পৌঁছানো সম্ভব হলে বাজেট প্রণয়নে সরকার ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

বাজেট নিয়ে চারদিকে চলছে বিস্তর আলোচনা। সরগরম চারদিক। কিন্তু বাজেটের প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের চালচিত্র নিয়ে চিন্তাভাবনার অবকাশ তো শেষ হওয়ার নয়। কেননা যে বাজেট ব্যক্তি, সমাজ দেশ ও জাতীয় উন্নয়নের দর্শন ও পথ নির্দেশক সেই বাজেটের মৌল উদ্দেশ্য, বিধেয় ও এর প্রকৃতি ও পারঙ্গমতার পর্যালোচনা সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে আমাদের মতো পোড়খাওয়া অর্থনীতির দেশে, যেখানে মৌসুমি বন্দনায় বাজেটের সময় বাজেটকে নিয়ে চলে অনেক আলোচনা আর বাজেট দেয়া হয়ে গেলে থেমে যায় সব কিছুই। অথচ বাজেট কোনো বিশেষ মাসের বা সময়ের বিবেচ্য বিষয় নয়, বাজেটের প্রভাব ছড়িয়ে থাকে জড়িয়ে থাকে সারা বছরের শরীরে।

বাজেট মূলত মুখ্য পরিকল্পনার দলিল, আয় ব্যয়ের খতিয়ান, আর্থসামাজিক উন্নয়ন অভিপ্সার পথ নকশা, ব্যক্তি ও সমষ্টির জীবনমান উন্নয়নের উপায় নির্দেশক, সামষ্টিক অর্থনীতির তথা সার্বিক আর্থিক কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি (accountability), দক্ষতা (efficiency) ও উপযোগিতা (efficacy) নির্ধারক। আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজনীতিতে বাজেটই রাজনীতি ও অর্থনীতি উভয়কে স্পশর্ই শুধু করে না- রীতিমতো নিয়ন্ত্রণ করে। বাজেটে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তিও বরাদ্দ থাকে, কর রাজস্বের নীতিমালা ও ধার্যকরের তালিকা থাকে, অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির বিবরণ থাকে। বাজেট জনজীবনের নিত্যনৈমিত্তিক চলাচলের, আশা আকাক্সক্ষার, আনন্দ সর্বনাশের সীমা বেঁধে দেয়ার দলিল।

সময়ের প্রেক্ষাপটে বাজেট একটি অর্থবছরকে ঘিরে আবর্তিত হলেও বাজেট অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে একসঙ্গে ধারণ করে অতীতের মূল্যায়ন, বর্তমানের অবস্থান এবং ভবিষ্যতের ভাবনাকে তুলে ধরে। সে কারণে বাজেট কসরত বিশেষ গুরুত্ব পায় অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির পথ পরিক্রমায়। অতীতের বাজেট ভাবনা কর্মকাণ্ডের বাস্তবায়ন এবং তার আলোকে বর্তমানের বরাদ্দ নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতের ভাবনা একসঙ্গে তুলে ধরা হয় বাজেটে এবং সে সুবাদে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিংবা অগ্রগতি কোন পর্যায়ে আছে তা অনুধাবন উপলব্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে জাতীয় বাজেট। বাজেটের প্রতি আগ্রহ তাই বাড়ছে আর মিডিয়ার ভূমিকা এই আগ্রহ সৃষ্টির অন্যতম উদ্যোক্তা। গতানুগতিক ধারায় উপস্থাপনের পরিবর্তে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট এখন সংসদে উপস্থাপিত হয় অর্থনীতির নানা নির্দেশক সূচক তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল বিশ্লেষণের মাধ্যম। সবাই এখন উন্নয়নের ধারা, এর প্রতিবন্ধকতা, উত্তরণের উপায় ও সমস্যাসহ সমাধান প্রস্তাবসমূহ এ সবই জানতে আগ্রহী। বাজেট প্রস্তাবনা পেশের আগে জনমত সৃষ্টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় সারাবিশ্বে। আমাদের দেশে এ তৎপরতা শুধু মিডিয়াতে যেন সীমাবদ্ধ।

বাজেটকে গণমুখীকরণে, জনবোধ্যকরণে, বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধকরণে নানান সংস্কারধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ এর আবশ্যকতার প্রসঙ্গটি এ নিরিখে এসেই যায়। বাজেটে জনগণের প্রতি সরকারের এবং রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের দায়বদ্ধতার উপায় হিসেবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বস্তুত জনগণের প্রতি সরকারের আয়-ব্যয়ের দায়বদ্ধতার দলিল হিসেবেই বাজেটকে দেখার সুযোগ রয়েছে।

এ দেশে আধুনিক বাজেট প্রণয়ন, উপস্থাপন ও অনুমোদনের প্রথা প্রবর্তিত হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে এ দেশের শাসন ভার অর্পিত হওয়ার পর। ১৮৬০ সালের ৭ এপ্রিল জেমস উইলসন (১৮০৫-১৮৬০) কলকাতায় ভারতে ব্রিটিশ সরকারের প্রথম বাজেট বক্তৃতা দেন এবং ১৮৬০-৬১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত ফসলি সনের আদলে তখন এপ্রিল-মার্চকে অর্থবছর ধরে বাজেটটি উপস্থাপিত হয়েছিল। এই বাজেটইে প্রথম একটি সরকার ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক দায় দায়িত্ববোধের কর্তব্য কর্মধারার পথ নকশা নির্দেশিত হয়। এর আগে ভারত বর্ষে অর্থনীতি বরাবরই ছিল রাজা বাদশাহ আর একশ বছরব্যাপী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোম্পানি দৃষ্টিভঙ্গি সুলভ। এই প্রথম আধুনিক গণতান্ত্রিক ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপের সরকার পদ্ধতির আওতায় সরকারের আয় ব্যয়ে ব্যবস্থাপনার বাজেট পেশ করা হয়। প্রথম বাজেটেই প্রথম অর্থমন্ত্রী জেমস উইলসন এ দেশে আধুনিক আয়কর ব্যবস্থাও প্রথম প্রবর্তন করেন। এর আগে এ দেশে অন্য বিভিন্ন প্রকার কর বা খাজনা প্রকৃতির রাজস্ব আয়ের উপায় উপলক্ষ প্রবর্তিত থাকলেও আধুনিক আয়কর সে বছর থেকেই ঘোষিত হয়। ইকোনমিস্ট প্রত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা জেমস উইলসন সাহেব এর আগে ব্রিটিশ সরকারের অর্থ সচিব ছিলেন, ছিলেন কয়েকটি কমিটি কমিশনের প্রধান এবং সংসদের পক্ষে সংসদীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, নীতিনির্ধারক। ভারতে ব্রিটিশ সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ১৮৫৯-এর নভেম্বরে এসে ১৮৬০-এর এপ্রিলে বাজেট পেশের পাঁচ মাসের মাথায় ডায়রিয়া ও ডিসেনট্রিতে ভুগে তিনি মারা যান কলকাতাতেই। বাজেট উপস্থাপনের সেই ঔপনিবেসিক রীতিনীতি এখনো অনুসৃত হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ভারতে ব্রিটিশ সরকারের ৯০ বছর, ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানের ২৩ বছর এবং স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের ৪৬ বছর অতিবাহিত হয়েছে, বাজেট প্রণয়ন, পেশ ও বাস্তবায়ন রীতিনীতিতে পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় কিছু কতিপয় সংস্কার সাধিত হলেও মূল দৃষ্টিভঙ্গির তেমন কোনো গুণগত পরিবর্তন হয়নি। বাজেটকে প্রকৃত বাজেট হতে হলে তার সার্বিক অবয়ব যুগোপযুগীকরণের আবশ্যকতা রয়েই গেছে। দেশ ও সরকার তার পরিবেশ ও জনগণের জন্যই তো। আর বাজেটের বিধৃত বিধানাবলির আলোকে যেহেতু জনগণের জন্য সরকারের পথচলা উচিত বিধায় বাজেটকে গণমুখীকরণের প্রয়াস অব্যাহত থাকা উচিত।

জাতীয় সংসদে এখন বাজেট প্রস্তাব শুধু পাঠে সীমাবদ্ধ নয় পাওয়ার পয়েন্টে হাইলাইটসগুলো সঙ্গে সঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে। বুলেট পয়েন্টে অগ্রগতির এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার সারাৎসার তুলে ধরা হয়। এখন সবাই জানতে পারেন সম্পদ কোত্থেকে আসছে আর কোথায় কোন খাতে ব্যয় হবে ইত্যাদি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া উৎসবের আমেজে বাজেটের ওপর বিশেষ আলোচনা পর্যালোচনা সভার আয়োজন করছে। কিন্তু বাজেট হিসেবে আমজনতার অর্থনীতিতে তাৎপর্য ও অর্থবহ অবয়বে ঠাঁই পাচ্ছে কিনা সে বিষয়টি দেখার দিন এখনো অনাগত। বাজেট প্রাক্কলন, বাজেট অনুমোদন বাজেট সংশোধনের বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যকর কসরত তৎপরতা উঠে আসছে কিনা দেখার বিষয়। বাজেটের আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজনে তা জরুরি।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন এ এখনো অন্যতম পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা হলো- ওপর থেকে আসা বাজেটের প্রাক্কলন ও নীতি নির্দেশনার আলোকে হিসাব মিলিয়ে নিচ থেকে বাজেট তৈরি করতে হয়, এভাবে আরোপিত বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয়, একাধিকবার সংশোধন ও পরিবর্তন করতে হয়। অথচ মাঠ পর্যায়ের ভাবনা, চাহিদা ও দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাজেটের প্রস্তাব করা হলে বাজেট বাস্তবায়ন আরো অনেক বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে, আরো দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি হতে পারেন এর বাস্তবায়নকারীরা। বাজেটে আয়-ব্যয়ের প্রাক্কলন বাস্তবতার ও বাস্তবায়নযোগ্যতার নিরিখে নির্ধারিত হলে অধিকতর স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত হতে পারে। বাংলাদেশে আয়-ব্যয়ের প্রাক্কলন এখনো নিচ থেকে ওপরে ওঠার পথ পায়নি। যদিও মাঠ পর্যায় থেকে বাজেটের চাহিদা চাওয়ার রীতি আছে কিন্তু শেষমেশ কেন্দ্রীয়ভাবে বেঁধে দেয়া বাজেটের আকার এর আদলে সেই মূল চাওয়া আর পাওয়ার পথ পায় না। মন্ত্রণালয় ওয়ারি বরাদ্দ শেষমেশ সম্পদ কমিটি থেকে দেয়া ভাগ বাটোয়ারার আওতায় পুনর্বণ্টনের বিপাকে পড়ে। আর রাজস্ব আহরণের বাজেট রীতিমতো ওপর থেকে দেয়া আকারে রাখতে গিয়ে এটি হিসাব মেলানোর বাজেটে পরিণত হয়। জাতীয় রাজস্ব আহরণের দায়িত্বে নিয়োজিত দপ্তর-উপদপ্তর সংবছরে এমন কোনো হিসাব-নিকাশ প্রস্তাব প্রণয়নে যান না যা আগামী অর্থবছরে প্রাক্কলিত হতে পারে। সুতরাং মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন খাত ও ক্ষেত্র থেকে কি পরিমাণ রাজস্ব আহরণের সম্ভাবনা বিদ্যমান তা বাস্তবায়নে কি ধরনের পদক্ষেপে যাওয়া আবশ্যক তার চিন্তাভাবনা আরো বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চলতি বছরের প্রকৃত আয়ের ওপর ভিত্তি করে একটা যুৎসই প্রবৃদ্ধি কষে পরবর্তী বছরের প্রাক্কলন ওপর থেকে বেঁধে দেয়া হলে আর তা আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক খাতে হারাহারি মতে বিভাজিত করতে হলে তো বাস্তবায়নুগ বাজেট বলা যাবে না তাকে। গত বছরের তুলনায় এবারের বর্ধিত অংশ কীভাবে সংস্থান হবে তার প্রস্তাব প্রণয়নের প্রশ্নটা তখন সেই প্রান্তিক পর্যায়ের সামনে এসে যায়। তখন যথা তথ্য-উপাত্ত ও খুঁটিনাটি বিষয় বিশ্লেষণ ব্যতিরেকেই নতুন নতুন খাতে বা পরিমাণ শুল্ক আরোপের ও ছাড়ের প্রস্তাব সীমাবদ্ধ অবয়বে তড়িঘড়ি করে দিতে হলে তা অর্জনে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় বৈকি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে যে সব আলোচনা হয় তার কোনো ফলাবর্তন এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে যথাযথভাবে ঠাঁই পাওয়ার সুযোগ পায় না। আবহমানকাল থেকে বাজেট (আয় ও ব্যয়ের) প্রাক্কলনের এই সনাতন রীতি চলে আসায় বাজেট বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রায়ই প্রাক্কলনের সামঞ্জস্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায় না।

সম্পূরক বাজেট কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দায়দায়িত্ব দেখভাল ছাড়াই আনুষ্ঠানিক আমেজে গৃহীত হয়। অথচ এখানে বাজেটীয় নিয়ন্ত্রণ ও পরিবীক্ষণের সাংবিধানিক অবকাশ ও সুযোগ নিহিত। বাজেট প্রাক্কলন এবং সম্পূরক আয় ব্যয় পরিবীক্ষণে সাংসদদের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রকৃতপক্ষে যথেষ্ট সীমিত। সংসদে কোনো আইন পেশের আগে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ মন্তব্য গ্রহণের বিধান/রীতি থাকলেও বাজেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির কোনো ভূমিকা নেই। সংবিধান ও সংসদ কার্যবিধিতে বাজেট প্রস্তাবের কিংবা ছাঁটাই প্রস্তাব দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা খুব সীমিত। ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতিতে চলে এমন অনেক দেশে বাজেটের ওপর সংসদীয় কমিটিকে সম্পৃক্তকরণের যে ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের দেশে সেটি অনুসৃত হতে পারে। বাজেট পেশের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য বর্তমানে গড়ে ১০ মিনিট সময় পান আলোচনার। সে আলোচনার গতি প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের নমুনা জ্ঞানগর্ভ, যুক্তিনির্ভর ও প্রাজ্ঞ প্রস্তাব পেশের অলঙ্কারে ভূষিতকরণের অবকাশ রয়েছে। বাজেটকে প্রকৃত অর্থে বাজেট মনে করতে হবে। জাতীয় সংসদে জনস্বার্থ সুরক্ষার দৃষ্টিতে বাজেটের ওপর ব্যাপক ও বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ সম্প্রসারণ এবং একই সংসদীয় পদ্ধতির দেশগুলোর ন্যায় সংসদীয় কমিটিগুলোতে স্ব স্ব বাজেট প্রস্তাব পরীক্ষা পর্যালোচনার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হতে পারে।

প্রাক বাজেট বাজেট আলোচনা শুধু বাজেট মৌসুমে সীমাবদ্ধ না রেখে সংবছরে তা পরিব্যাপ্ত হওয়া উচিত। অর্থবছরের প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। বাজেটে জনমত প্রতিফলিত হওয়ার কথা। সেই জনমত বাজেট পেশের প্রাক্কালে না শুনে সময়মতো তথ্য-যুক্তি সহকারে সংগৃহীত, পর্যালোচিত হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত বা জনমত সৃষ্টি করে বাজেটের বিধি-বিধান, প্রবিধান, ভর্তুকি, কর, ভ্যাট ও শুল্ক ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনা উচিত। যেমন- গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ প্রান্তিক পর্যায়ে যে প্রাক-বাজেট আলোচনা করেন, কৃষি বাজেটে তার প্রতিফলন অর্থবহ হতে পারে। রাজস্ব বাজেট প্রণয়নে এনবিআরের দীর্ঘমেয়াদি প্রাক-বাজেট আলোচনার অবশ্যই অবকাশ রয়েছে। ২০০৭ সালের আগে প্রাক-বাজেট আলোচনা হতো বাজেট বানানোর শেষপর্যায়ে এসে। এমনকি শুধু এফবিসিসিআইর সঙ্গে পরামর্শক কমিটির সভাটি এমন এক সময় হয় যখন নতুন প্রস্তাব বা সুপারিশ গ্রহণের সুযোগ হয়ে পড়ে সীমিত। ২০০৭-২০০৯ সময়কালে যথেষ্ট সময় দিয়ে (জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে) সব পণ্য ও খাতের সব (উৎপাদনকারী, আমদানি ও রপ্তানিকারক নির্বিশেষে) ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকেই প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু হওয়া উচিত, বাজেট প্রায় চূড়ান্ত করে এপ্রিল মাসে এসে প্রাক-বাজেট আলোচনার উপযোগিতা যথেষ্ট কমে যায়। প্রাক-বাজেট আলোচনার সুপারিশসমূহ নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যথাসময়ে পৌঁছানো সম্ভব হলে বাজেট প্রণয়নে সরকার ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : সরকারের সাবেক সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App