×

মুক্তচিন্তা

‘তোমরা সাহরি খাও, এতে অফুরন্ত বরকত রয়েছে’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০১৮, ০৬:১৫ পিএম

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার যে ঐশী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ প্রতিদিন শেষ রাতে সাহরি খাওয়া। রোজাদার সারাদিন কিছু না খেয়ে থাকবে, জঠর জ্বালায় কাহিল ও যন্ত্রণাকাতর হয়ে রোজার প্রতি এক সময় মুখ ফিরিয়ে নেবে- এই আশঙ্কা যেন দূর হয় এ জন্য সাহরি খাওয়ার নির্দেশনা পেশ করেছেন মহান আল্লাহ পাক।

আজ ৪টি রোজা পার হচ্ছে। মাহে রমজানকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দশ দিন রহমতের, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফেরাতের তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তি এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের সুসংবাদ নিয়ে আসে মাহে রমজান।

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার যে ঐশী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ প্রতিদিন শেষ রাতে সাহরি খাওয়া। রোজাদার সারাদিন কিছু না খেয়ে থাকবে, জঠর জ্বালায় কাহিল ও যন্ত্রণাকাতর হয়ে রোজার প্রতি এক সময় মুখ ফিরিয়ে নেবে- এই আশঙ্কা যেন দূর হয় এ জন্য সাহরি খাওয়ার নির্দেশনা পেশ করেছেন মহান আল্লাহ পাক। রোজার কষ্টকে হাল্কা ও সহনীয় করতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজাদারের জন্য জান্নাতি মেজবান ‘সাহরি’। মাহে রমজানে প্রতিদিনের রোজায় অনিবার্যভাবে সাহরি গ্রহণ সুন্নাত ও অধিক পুণ্যময় কাজ। রোজা রাখার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে (সূর্যোদয়ের ঠিক দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই সুবহে সাদিক শুরু হয়)। ভোর রাতে যা কিছু খাবার গ্রহণ করা হয় তাই সাহরি হিসেবে গণ্য। যদি খুব বেশি ক্ষুধা ও চাহিদা না থাকে তবুও কিছু খাবার খেতে হবে, অন্তত কয়েকটি খেজুর ও বিশুদ্ধ পানীয় গ্রহণেও সাহ্রির সুন্নাত আদায় হয়ে যায়। আরবি ‘সুহুর’ শব্দ থেকেই ‘সাহরি’। তবে আমাদের দেশে সাধারণত লোকমুখে উচ্চারিত ‘সেহরি’ শব্দটি যথার্থ নয় মর্মে উলামায়ে কেরাম মত দিয়েছেন। কেননা, আরবি ‘সেহের’ অর্থ জাদু। তাই ‘সাহ্রি’ উচ্চারণের পরিবর্তে ভুলভাবে ‘সেহরি’ বলা হলে অর্থের বিকৃতি ঘটে থাকে। ভুলকে জিইয়ে না রেখে ‘সাহরি’ বলায় ও লেখায় সবার সুদৃষ্টি আশা করছি।

রোজা রাখার শক্তি ও প্রেরণা জোগায় সাহরি। সারাদিন যেহেতু রোজাদারকে কিছু না খেয়ে কঠিন উপবাস থাকতে হয়, অনাহারে চলৎশক্তি ও কর্মচাঞ্চল্য হারিয়ে ফেলার সুযোগ তৈরি হয়, সেজন্য প্রতিদিন শেষ রাতে সাহরি গ্রহণের নির্দেশনা এসেছে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুলের (দ.) কাছ থেকে। ক্ষুধার তাড়নায় রোজাদার যাতে দুর্বল ও অতিশয় ক্লান্তিগ্রস্ত হয়ে না পড়ে এজন্য অবশ্যই সাহ্রি খাওয়া রোজাদারের প্রতিদিনের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে আলস্য ও অমনোযোগে কিংবা ঘুমকাতুরে স্বভাবের কারণে সাহরি না খেয়ে রোজা রাখার কোনো সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। রোজার ফায়দা ও পুণ্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে যদি আলস্যবশত সাহ্রি খাওয়া ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ক্ষুধা কম থাকলেও ‘সাহরি’ বর্জন করা যাবে না। অন্তত, সামান্য খাবার খেয়ে নিয়ে সাহরি নির্দেশনা পালনে অভ্যস্ত হতে হবে প্রতিটি রোজাদারকে। আল্লাহপাক বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করে রমজানের শেষ রাতে সাহ্রি খাওয়ার আদেশ দিয়েছেন। রোজার ক্ষুধা-পিপাসা লাঘব করা, ক্রমাগতভাবে ৩০ দিন ধরে রোজা রাখার শক্তি-সামর্থ্য অর্জনের জন্য ভোর রাতে সাহরি গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাহ্রি কখন ও কতক্ষণ খাওয়া যাবে এর সময়সীমা ঘোষিত হয়েছে কুরআন মজিদে। সুরা বাক্বারার ১৮৭নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, ‘আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা হতে সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়’। এখানে রাতের কালো রেখা বলতে সুবহে কাযিব এবং ঊষার সাদা রেখা বলতে সুবহে সাদিককে বুঝানো হয়েছে। রাতের ছয় ভাগের শেষ ভাগেই মূলত সাহ্রি গ্রহণ মুস্তাহাব বা উত্তম রীতি। তাই দেরিতে সাহ্রি খাওয়া উত্তম। তবে এমন দেরি করা যাবে না যাতে ফজর শুরু হয়ে যায়। ফজর শুরুর ৮/১০ মিনিট আগেই সাহ্রি সেরে নেয়া ভালো। ফজর পর্যন্ত খাওয়া, একদিকে আজান চলছে, অন্যদিকে সাহ্রি খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে ফেলার চেষ্টা- এভাবে রোজা হয় না। ফজর আজান পর্যন্ত সাহ্রি খাওয়া মানে রোজা শুরু না করেই ইফতার (ভঙ্গ) করে ফেলার শামিল। ফজরের সময় যখন শুরু হয়ে গেল তখন রোজাও শুরু। আর তখনই ঘুম থেকে উঠে খুব দ্রুত সাহ্রি খাওয়ার চেষ্টা রোজার নিয়ম-পদ্ধতিকে উপেক্ষাই করা হয়। এতে সাহরির সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি পুরো রোজাই অন্তঃসারশূন্য উপবাস হিসেবে গণ্য হবে।

সাহরির ফজিলত সম্পর্কে এক বর্ণনায় আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা সাহরির গ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করে থাকেন। রোজাদারকে আহার করানো অতীব পুণ্যময়। তা ইফতার হোক বা সাহরি হোক। মাহে রমজানে কাউকে আহার করানো কতটা পুণ্যময় কাজ তা হাদিস শরিফের বিভিন্ন বাণী থেকে জানা যায়। প্রিয় নবী (দ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পূর্ণ তৃপ্তিসহ আহার করাবে আমার হাউজে কাউছার থেকে তাকে পানি পান করানো হবে। এরপর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে তৃষ্ণার্ত হবে না (বায়হাকি)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাহরি খায় তার ওপর আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ রহমত বর্ষণ করেন।’ (তাবারানি)। সাহ্রি খাওয়া সুন্নাত। রাসুলে পাক (দ.) বলেছেন আমাদের এবং আহলে কিতাবের (ইহুদি-খ্রিস্টান সম্প্রদায়) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো ‘আমরা সাহ্রি খাই, ওরা সাহরি খায় না।’ প্রিয়নবী (দ.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, এতে অফুরন্ত বরকত রয়েছে। তাই যথাসময়ে সাহ্রি গ্রহণের অভ্যাস রপ্ত করতে হবে রোজাদারদের। আশপাশের অসচ্ছল গরিব রোজাদার যারা ঠিকভাবে সাহ্রি গ্রহণে অক্ষম তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে বিত্তবান রোজাদারদের। সাহ্রি সামগ্রী বিতরণ করে গরিব রোজাদারকেও নির্বিঘ্নে রোজা পালনের সুযোগ করে দেয়া উচিত।

আ ব ম খোরশিদ আলম খান : সাংবাদিক, কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App