×

মুক্তচিন্তা

এই যুদ্ধে জয়ী হতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০১৮, ০৫:৫৭ পিএম

মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের কড়া পদক্ষেপ দেশবাসীর মনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মাদকের অভিশাপ থেকে দেশের যুবসমাজকে বাঁচাতে অসৎ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশে দেশব্যাপী মাদক নির্মূলে অভিযান শুরু হয়েছে। এর আগেও একাধিকবার ঘোষণা দিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান হয়েছে। তবে এবারের অভিযান ভিন্ন। এবারের অভিযানে দৃষ্টি মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের দিকে। ইতোমধ্যে আইশৃঙ্খলা বাহিনী সফলও হচ্ছে। বলা যায়, এই অভিযান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জও বটে।

জানা গেছে, দেশে মাদক ব্যবসার সঙ্গে দুই শতাধিক গডফাদার জড়িত। তাদের তালিকা করা হয়েছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। আর সারাদেশে খুচরা মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা কয়েক লাখ। গত ৩ মে র‌্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে র‌্যাব সদর দফতরে জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে কড়া অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর র‌্যাব দেশের বিভিন্ন স্থানে একশরও অধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। গত পনেরো দিনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে ৯ মাদক ব্যবসায়ী নিহত আর দেড় হাজারেরও বেশি মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার এবং দুই শতাধিক মাদকসেবীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়ার ঘটনা ঘটল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কয়েক লাখ পিস ইয়াবা। সব মিলিয়ে মাদক-নির্মূলে বিরাট পদক্ষেপ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৬৬ লাখেরও বেশি মানুষ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মাদকসেবীর সংখ্যা ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এরা প্রত্যেকে দিনে দুটি করে ইয়াবা বড়ি (মূল্য ৪০০ টাকা) সেবন করে। সেই হিসাবে দিনে ২৬৪ কোটি টাকা মাদকের পিছনে ব্যয় হয়। বছরে ৯৫ হাজার কোটি টাকার ইয়াবাসহ মাদকের পিছনে ব্যয় হচ্ছে। এই টাকার অধিকাংশই চলে যাচ্ছে ইয়াবার উৎসভ‚মি মিয়ানমারে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৬০ জন গডফাদারের তালিকা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।

কক্সবজার-টেকনাফসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। ওইসব এলাকায় তরুণদের কাছে ইয়াবা ব্যবসা এখন হট স্মার্ট ব্যবসা। দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মাদক হিসেবে ইয়াবার আগ্রাসন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। দেশের বিরাট সংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত ইয়াবার নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তারুণ্যগ্রাসী ইয়াবার বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ইয়াবার থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে। দেশে ইয়াবার প্রবেশ ও বিস্তার ঠেকাতে হবে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে সব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সব সদস্য তাদের সহায়ক, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের কড়া পদক্ষেপ দেশবাসীর মনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মাদকের অভিশাপ থেকে দেশের যুবসমাজকে বাঁচাতে অসৎ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App