×

জাতীয়

‘মডেল’ থানা হলেও অঢেল সমস্যায় জর্জরিত শ্যামপুর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০১৮, ০৩:২৮ পিএম

‘মডেল’ থানা হলেও অঢেল সমস্যায় জর্জরিত শ্যামপুর
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে পোস্তগোলা ব্রিজ পাড় হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করলেই বাম দিকে চোখে পড়ে শ্যামপুর মডেল থানা। এ থানা রাজধানীর প্রবেশদ্বারে এবং বুড়িগঙ্গার তীরে হওয়ায় এ এলাকাতেই হাতবদল হয় দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা সব মাদক। থানার মামলার পরিসংখ্যান দেখেও সে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া গেল। চলতি বছরের ৪ মাসে এ থানায় ১১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক সংশ্লিষ্ট মামলাই শতাধিক। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এলাকাটিতে নি¤œ আয়ের মানুষের বসবাস বেশি হওয়ায় মাদক ব্যবসার প্রবণতাও অনেক বেশি। এদিকে নামে ‘মডেল’ হলেও বাস্তবে এ থানার অবস্থা অন্যান্য সাধারণ থানা থেকেও করুণ। জনগণকে উন্নত সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে একটি মডেল থানায় যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তার কিছুই নেই শ্যামপুর মডেল থানায়। উল্টো জনবল ও আবাসন সংকট, বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিকল থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে থানাটি। ফলে সাধারণ মানুষ বাড়তি তো দূরের কথা, ন্যায্য সেবা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়, ভবনের প্রতিটি কোনায় ময়লার স্ত‚প আর দুর্গন্ধে থানার মধ্যে অবস্থান করাই কষ্টসাধ্য। জানা গেছে, থানাটিতে যে জনবল আছে তা দিয়ে জোড়াতালির কাজ চললেও মহিলা অফিসার এবং আলাদা সেল না থাকায় চরম বেকায়দায় পড়েন নারী ভিকটিমরা। তারা সব বিষয় পুরুষ ডিউটি অফিসারের কাছে খুলে বলতে পারেন না, আবার ডিউটি অফিসারও তাদের সব ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন না। নারী ভিকটিম এলে কী করেন? জানতে চাইলে কর্তব্যরত এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের একজন মহিলা এএসআই আছেন। তিনি দিনের বেলায় ডিউটি করেন। আর রাতের বেলায় আমরা নিজেরাই চালিয়ে নেই। তবে ১৬ মে সারাদিন থানায় অবস্থান করেও কোনো মহিলা এএসআইয়ের দেখা পাননি এই প্রতিবেদক। ওই দিন দুপুরে ডিউটি অফিসারের রুমের বাইরে কয়েক জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। থানায় আসার কারণ জানতে চাইলে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক আলহাজ মিয়া বলেন, পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে আমরা পরিবারের সদস্যরা একটি জিডি করতে এসেছি। কিন্তু ডিউটি অফিসারের রুমে জায়গা খুবই কম, তাই এখানে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মানুষকে উন্নত পুলিশি সেবা দেয়ার উদ্দেশে ২০০৭ সালে শ্যামপুর থানাকে মডেল থানায় উন্নীত করা হয়। মডেল থানার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সেবা-প্রত্যাশীদের জন্য সুন্দর কক্ষে বসার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ, টয়লেট ইত্যাদি থাকার কথা। কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, থানার ভেতরে জায়গা খুব কম থাকায় বিভিন্ন মামলায় আটক মোটরসাইকেল বাইরে স্ত‚প করে রাখা হয়েছে। পোস্তখোলা ব্রিজ সংলগ্ন জায়গায় আরো ১০০-১৫০ গাড়ি পার্ক করা। যেগুলোর বেশির ভাগেই মরিচা ধরে গেছে। এ ছাড়া মূল রাস্তার পাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায় আটককৃত বাস। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া জায়গার অভাবে বেশ কয়েকটি স্টিলের আলমারি থানার বারান্দায় স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে থানার গেটের পাশে পথচারীদের লাইন ধরে প্র¯্রাব করতে দেখা যায়। ফলে দুর্গন্ধে থানার গেটে দাঁড়ানোই মুশকিল। মহিলা হাজতখানা থাকলেও এর একাংশে বিভিন্ন মালামাল জড়ো করে রাখতে দেখা গেছে। অভ্যাগতদের জন্য নেই কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা। থানায় যে টয়লেট রয়েছে সেটির অবস্থাও করুণ। নেই কোনো জেনারেটরও। কর্তব্যরত এক পুলিশ সদস্য জানান, এ থানায় বিদ্যুতের সমস্যা প্রকট। দিনের বেশির ভাগ সময় লোডশেডিংয়ের কারণে থানায় বিদ্যুৎ থাকে না। পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ এবং ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে শ্যামপুর থানা গঠিত। এর মধ্যে ধোলাইপাড়, ঢাকা-মাওয়া রোড, পোস্তগোলা ক্যান্টনমেন্টের এপাড়, বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়, মিরহাজীরবাগ ক্রসিং, ফরিদাবাদ স্কুল, ঢালকানগর, বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি, আইজি গেট ও ঘূর্ণিঝড় এলাকা রয়েছে। থানার এরিয়া বড় হলেও এ থানায় পুলিশি সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নেই। শ্যামপুর মডেল থানার ওসি মীজানুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, নামে মডেল থানা হলেও বাস্তবে এর কোনো ছোঁয়া লাগেনি এ থানায়। বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে মডেল থানা হিসেবে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে আমরা আরো উন্নত সেবা দিতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App