×

জাতীয়

পল্টনে রাজনীতির পেছনে ছুটে সময় শেষ পুলিশের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০১৮, ০৫:০৭ পিএম

রাজধানীর পল্টন মডেল থানার পুলিশকে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে। কারণ দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পল্টন মডেল থানা এলাকায়। এ ছাড়া ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের মহানগর কার্যালয়সহ বেশ কিছু সংগঠনের অফিসও এই থানার অধীনে হওয়ায় সদা তৎপর থাকতে হয় পুলিশ সদস্যদের। ফলে যথাযথ পুলিশিসেবা থেকে বঞ্চিত হন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পাশাপাশি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রয়েছে রাজনৈতিক চাপ ও অনিয়মের অভিযোগও। মডেল থানা হিসেবে যেসব বাড়তি সুবিধা থাকার কথা ঘাটতি রয়েছে সেখানেও। থানার কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ মেনে নিয়েও দাবি করেন, পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। জনবল ও পরিবহন সংকট দূর হলে অন্যান্য সমস্যাও সমাধান করা সম্ভব হবে। মানুষকে উন্নত পুলিশিসেবা দেয়ার উদ্দেশে ২০০৭ সালে পল্টন থানাকে মডেল থানায় উন্নীত করা হয়। মডেল থানার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য সুন্দর কক্ষে বসার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ, টয়লেট ইত্যাদি থাকার কথা। কিন্তু পল্টন থানায় অভ্যাগতদের বসার ব্যবস্থা থাকলেও পানি পানের ব্যবস্থা নেই। থানা ভবনের ভেতরের দিকে টয়লেট থাকলেও সেখানকার চিত্র ভয়াবহ। অপরিচ্ছন্নতা ও দুর্গন্ধের কারণে ভেতরে ঢোকাই মুশকিল। এদিকে থানা চত্বরের অর্ধেক অংশজুড়ে রয়েছে জঙ্গল এবং বিভিন্ন ঘটনায় আটক গাড়ি। এসব আটককৃত গাড়ি আইনি জটিলতার কারণে দিনের পর দিন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকাই পল্টন থানার আওতাধীন। পাশাপাশি ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডেরও কিছু অংশ এই থানার আওতায়। ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পল্টন থানার ব্যাপ্তি। এর মধ্যে রয়েছে চামেলীবাগ, রাজারবাগ, জিপিও, মুক্তাঙ্গন, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড়, শান্তিনগর এবং বিজয়নগর। এসব এলাকায় আবাসিকভাবে বসবাস করেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। এ ছাড়া দাপ্তরিক ও অন্যান্য কাজে প্রতিদিন আনাগোনা করেন ১০-১৫ লাখ মানুষ। এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে পুলিশিসেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও যানবাহন নেই। বর্তমানে ওসিসহ দুই পরিদর্শক (এসআই), ৩২ জন উপপরিদর্শক (এসআই), ৪৫ জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), শতাধিক কনস্টেবল ও একজন মাত্র কর্মচারী রয়েছেন। এদিকে গাড়ি সংকটের কারণে ঘটনাস্থলে দ্রæত পৌঁছানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে বলে জানা গেছে। গত ১৪ মে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, থানার ডিউটি অফিসারের রুমে পুলিশ সদস্যরা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। অনেকে বসার জন্য জায়গা পাচ্ছিলেন না। থানাটিতে মহিলা ও শিশু ডেস্ক থাকলেও সেটি খালি পাওয়া যায়। সন্ধ্যার দিকে থানাটিতে বেশ কয়েকজন দালালের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তারা থানার ভেতরেই এক আসামির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। রাত ১০টা থেকে সার্ভিস ডেলিভারি অফিসার (এসডিও) প্রায় ১ ঘণ্টা অনুপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা মানুষ তো সবসময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। কোনো কাজে গেছে হয়তো। এখনই চলে আসবে। পল্টন মডেল থানার ওসি মো. মাহ্মুদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, মডেল থানা হওয়ার পরে যেসব সুবিধাগুলো পাওয়ার কথা ছিল সেগুলো এখনো সম্পূর্ণভাবে দেয়া হয়নি। ফলে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েই গেছে। তবুও আমরা জনসাধারণকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকি। আর সভা-সমাবেশ নিয়ে পুলিশকে সবসময় সতর্ক থাকতেই হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, এই থানায় মাদক ও আদম ব্যবসা সংক্রান্ত মামলা বেশি। মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। অন্য বিষয়গুলোও গুরুত্বসহকারে দেখা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App