×

জাতীয়

শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন এই দিনে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০১৮, ১০:৪৫ এএম

শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন এই দিনে
আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৩৮তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নরঘাতকরা ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম হত্যাকান্ডের মাধ্যমে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর দুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে সৌভাগ্যক্রমে ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পান। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে দিতে, বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা শুরু করে নানামুখী ষড়যন্ত্র। বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে জগদ্দল পাথরের মতো কাল অমাবস্যা। ঠিক এমনি এক ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন জীবন শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সেদিন রাজধানী ঢাকা মিছিলের শহরে পরিণত হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিলে-স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি লাখ লাখ মানুষের মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সারা দেশের মানুষের সেদিনের গন্তব্য ছিল রাজধানী ঢাকা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম পিতৃ হত্যার বদলা নেব’। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’। দেশের মাটিতে পা রাখার আগেই বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫, ও ১৬ ফেব্রæয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধুহত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’ ‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ তিনি বলেছিলেন, জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত থেকে বঞ্চিত হয়’। বাংলাদেশে ফিরে আসার দিন থেকে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বারবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পরিণত হয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে। আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর দীর্ঘ ৩৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মানন্নোয়ন করে এক সময়ের মঙ্গা কবলিত, দুর্ভিক্ষ জর্জরিত বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের নরঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং রায় কার্যকর হয়েছে। দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে এক অনন্য উচ্চতায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশ্বে অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ৩৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের এ পথচলা ছিল কণ্ঠকাপূর্ণ ও বিপদসংকুল। গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করার অপরাধে তাকে বারবার ঘাতকদের হামলার শিকার ও কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়। কিন্তু তিনি নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে ছিলেন পিতার মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী। বাঙালির ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। জনগণের ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়ে তৃতীয়বারের ন্যায় রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। ‘রূপকল্প-২০২১’ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ বিকেলে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। বিকেল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী। সভায় আলোচনায় অংশ নেবেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও জাতীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশের সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দোয়া, মিলাদ মাহফিল, বিজয় র‌্যালি এবং আলোচনা সভার আয়োজন করতে দলের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App