×

অর্থনীতি

রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম চড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০১৮, ০২:৫৫ পিএম

রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম চড়া
প্রতিবছরের মতো এবারো ব্যবসায়ীরা সরকারকে দেয়া কথা রাখেননি। পর্যাপ্ত আমদানির পরও রমজানের আগে বাড়িয়ে দিয়েছেন নিত্যপণ্যের দাম। করছেন অতি মুনাফা। এ বিষয়ে সরকারকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে, দাম বাড়বে এই ভয়ে ক্রেতারা বেশি জিনিসপত্র নিয়ে মজুদ করায় বাজারের ওপর এক ধরনের চাপ পড়ে। এতেও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তাই পরিমাণ মতো পণ্য কেনার জন্য পরামর্শ দেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, রমজানে মূলত ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে আড়াই লাখ টন, চিনি ৩ লাখ টন, ছোলা ৮০ হাজার টন, খেজুর ১৮ হাজার টন এবং পেঁয়াজ ৪ লাখ টন। বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে ২২ দশমিক ৫৯ লাখ টন, চিনি ৪ দশমিক ৩৫ লাখ টন, ছোলা ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন, খেজুর ৬৪ হাজার টন ও পেঁয়াজ ১৭ দশমিক ৯১ লাখ টন। এ হিসাবে দেশে চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি নিত্যপণ্যের মজুত রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও এসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। এরপরও রোজা শুরুর আগেই রাজধানীর বাজারে অতিপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। খেজুর, চিড়া মুড়ি, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের পাশাপাশি শসা, বেগুন, পেঁপে, ধনেপাতা, টমেটো ইত্যাদি নিত্যপণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। তবে কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমতির দিকে। আবার একই ধরনের সবজির দাম একেক বাজারে একেক রকম দাম। এ পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও বাজার, মতিঝিল এজিবি কলোনি বাজারে গতকাল বুধবার দেখা গেছে, পণ্যের বাড়তি কেনাকাটা করতে ক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন। শান্তিনগর বাজারে আসা মাহফুজুর রহমান জানান, রোজা রেখে প্রতিদিন বাজার করা কঠিন। এ কারণে রোজার আগে যতটা সম্ভব কেনাকাটা করে নিচ্ছি। নিত্যপণ্যের দাম বাড়তির জন্য চাঁদাবাজি ও বৈরী আবহাওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম থেকে বর্তমানে একটি ট্রাক আসতে সময় লাগে ২-৩ দিন। ভাড়া গুনতে হয় ৩৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির সময় পেঁয়াজ, আলুসহ কাঁচা সবজি দ্রুত পচে যায়। এ জন্য দামও বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, অনেক মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাড়ছে চিনি ও পেঁয়াজের দাম। বাজার ব্যবস্থাপনায় মনিটরিং জোরদার করলে দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকত। এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একসঙ্গে পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে সরকারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ইফতার উপকরণের দাম আকাশছোঁয়া : রোজায় ইফতারিতে বেগুন একটি অপরিহার্য সবজি। বেগুনি ও চপ তৈরিতে ব্যবহার হয় লম্বা বেগুন। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে এ সবজির দাম অনেক বেড়েছে। প্রতি কেজি বেগুন এখন প্রায় ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। যা সপ্তাহখানেক আগেও ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ছিল। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে কাঁচামারিচ ৬০ এবং শসা ও টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। দুসপ্তাহের ব্যবধানে ৮০ টাকা কেজি ধনেপাতা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। চিনির দামও কয়েক ধাপে বেড়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা পরিশোধিত চিনি এখন ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চিনির দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। বেড়েছে চিড়া ও মুড়ির দামও। প্রতি কেজি মোটা মুড়ি ১২০ ও চিকন মুড়ি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল যথাক্রমে ৬৫ ও ৫৫ টাকা। অনেকটা স্থিতিশীল আছে খেজুরের দাম। প্রতি কেজি সাধারণ খেজুর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোজায় মসলা পণ্যের ব্যবহার বাড়ে। পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন খাবারে বেশি ব্যবহার হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও দুসপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫২ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App