×

মুক্তচিন্তা

একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হলো

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০১৮, ০৯:৪৪ পিএম

একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হলো
একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হলো

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে যুক্ত হলো নতুন এক অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সফল উৎক্ষেপণ করে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেমন অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমবে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আমূল পরিবর্তন আসবে। বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে বলে মনে করেন তথ্য-প্রযুক্তিবিদরা। এ স্যাটেলাইটের কার্যক্রম এবং এর বাণিজ্যিক সুবিধা নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- রিপন কর্মকার

ভোরের কাগজ : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু করা যাবে? সৈয়দ আলমাস কবীর : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে আরো দুমাস সময় লাগতে পারে। আমরা আশা করছি, আগামী আগস্ট মাস থেকেই এর যাত্রা শুরু করা যাবে। অরবিটে পাঠানোর পর সঠিক জায়গায় স্থাপন করতে এবং অন্যান্য সব কিছু ঠিকঠাক করতে কিছু সময় লাগছে।

ভোরের কাগজ : বাণিজ্যিকভাবে কতটা সফল হবে?

সৈয়দ আলমাস কবীর : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে প্রেরণ করাটা বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এটিকে বাণিজ্যিকভাবে না নেয়াটাই ভালো। সব কিছু ব্যবসায়িক চিন্তা থেকেই করতে হবে কেন? এটাকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। তবে অবশ্যই আমরা এর বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক সুবিধাটা নেব। স্যাটেলাইট থেকে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। এটাতে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যবহার করবে ২০টি বাকি ২০টি অন্যান্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ভাড়া দেয়া হবে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর কাছেও ভাড়া দেয়া হবে। ব্রডকাস্ট এবং টেলিকমিউনিকেশনের জন্যই এগুলো ব্যবহার হবে। সেখান থেকে তো একটা আয় আসবেই। এই স্যাটেলাইট পাঠানোর ফলে কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশেষত আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে। কারণ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে খুব সহজে ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে। যেটা এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়নি বিভিন্ন কারণে, ফাইবার অপটিক যেখানে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না, চর, দুর্গম, হাওর ও পার্বত্য এলাকায় এখন খুব সহজেই এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। ফলে ওই অঞ্চলে একটা অর্থনৈতিক সুফল দেখা যাবে। সেখানকার তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেট ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে।

ভোরের কাগজ : প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিভাবে সহায়তা করবে?

সৈয়দ আলমাস কবীর : আমাদের দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় যদি কোনো প্রতিক‚ল অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং যদি কমিউনিকেশন সিস্টেম পড়ে যায় তখন আমরা খুব সহজে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করতে পারব। এটা একটা বড় পাওয়া যে দুর্যোগের সময়ও এটা কাজ করবে। আমরা টেলিমেডিসিনের কথা শুনি ই-এডুকেশনের কথা শুনি তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাবে। প্রত্যান্ত অঞ্চলে কেউ অসুস্থ হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তখন ওইখানে একটা ভি-স্যাট বসিয়ে মুহূর্তেই শহর থেকে ডাক্তার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার চিকিৎসা করতে পারবে । এই যে একটা প্রাণ বাঁচানোর ব্যাপার এটা তো টাকা দিয়ে হিসাব করা যাবে না।

ভোরের কাগজ : স্যাটেলাইটটির জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে?

সৈয়দ আলমাস কবীর : আমরা আমাদের বাংলাদেশকে একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ হিসেবে তৈরি করতে চাই। আমি বারবারই বলছি বাণিজ্যিক তর্কে যাওয়াই উচিত না। কত টাকা আসবে, খরচ উঠে আসবে কিনা এটা হিসাব করা ঠিক না বলে আমি মনে করি। এই যে স্যাটেলাইট নিয়ে এত কৌতূহল, এত উদ্দীপনা এর মানে হচ্ছে টেকনোলজি স্পেস নিয়ে উৎসাহ। কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন যে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিগুলোতে টেকনোলজি স্পেস নিয়ে পড়াশুনা শুরু হবে এবং আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে অনেক অভিজ্ঞ জনবল বের হবে। কাজেই বাংলাদেশে জ্ঞানের নতুন একটা দিগন্ত খুলে গেল। এটাতো পয়সা দিয়ে মূল্যায়ণ করা যাবে না।

ভোরের কাগজ : কিন্তু এটার যে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আছে তার জন্য করণীয় কি?

সৈয়দ আলমাস কবীর : ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১এর ফ্রুডপ্রিন্ট সীমিত। সার্কভুক্ত দেশ এবং মধ্য এশিয়ার কয়েকটা দেশ কাভার করবে। এই ফ্রুডপ্রিন্ট বা সীমিত কাভারেজ এরিয়ার জন্য আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলো হয়তো স্পেস ভাড়া নিতে চাইবে না। আমাদের সরকারের যেটা করা দরকার সেটা হচ্ছে, অন্যান্য দেশের স্যাটেলাইটগুলোর সাথে বিনিময় চুক্তি করা। তারা আমাদের একটা ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করবে আমরা তাদের একটা ব্যবহার করব। এটা যদি করা যায় তাহলে হয়তো বাণিজ্যিকভাবে বেশি প্রতিষ্ঠিত হবে। আর ভি-স্যাট এলাউ করতে হবে। এখন কিন্তু ভি-স্যাট আমদানি বন্ধ। ভি-স্যাট আমদানি যদি খোলা না হয় তবে আমদের স্যাটেলাইট থাকলেও এর সুফল আমরা নিতে পারব না। কাজেই ভি-স্যাট আমদানি অবাধ করে দিতে হবে এবং পোর্টেবল ভি-স্যাটের ওপর যে কড়া নজরদারি আছে সেগুলো শিথিল করতে হবে। আমি বলতে চাচ্ছি যে এই ভি-স্যাটগুলো আমদানিতে উৎসাহ প্রদান করে সারাদেশে এটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। একেবারে গ্রাম-গঞ্জে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিতে হবে। যেখানেই প্রয়োজন সেখানেই যেন পাওয়া যায় বা কাছাকাছি পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই কন্ট্রোল থাকবে, বিটিআরসি নিয়ন্ত্রণ করবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইন্টারনেট প্রভাইডার যারা আছে তাদের মাধ্যমে যদি এটা ছড়িয়ে দেয়া হয় তবে বিটিআরসি তাদের কন্ট্রোল করতে পারবে। আমি মনে করি এই পলিসিটা নেয়া দরকার।

ভোরের কাগজ : এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ইন্টারনেটের দাম কি এখনকার চেয়ে কম পড়বে?

সৈয়দ আলমাস কবীর : এখানে সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ- এই ভি-স্যাট ব্যবহার করে যে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যাবে তার দাম কিন্তু অনেক বেশি হবে। ফাইবার অপটিকের ব্যান্ডেড যেটা আমরা পাই তার থেকে অনেক বেশি দাম হবে। তাই বলে ওই দামে যদি সরকার বিক্রি করা শুরু করে তাহলে কিন্তু এই ইন্টারনেট কেউ নিবে না। সরকার এখানে ভর্তুকি দিয়ে একই দামে দিতে হবে। তা না হলে আমাদের যে উদ্দেশ্য সারা দেশে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়া তা সম্ভব হবে না। কাজেই এর সুফলটা পাওয়া যাবে না।

ভোরের কাগজ : ১৫ বছরের প্লট ভাড়া নিয়েছে এরপর এর ভবিষ্যৎ কি হবে?

সৈয়দ আলমাস কবীর : এটা আসলে স্যাটেলাইটের জ্বালানির ওপর নির্ভর করে করা হয়েছে। আমাদের স্যাটেলাইটটির জ¦ালানি আছে ১৫ বছরের। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে তা ১৫ বছরই হবে। এর কম বা বেশি হতে পারে। জ্বালানি যদি কম পোড়ে আর কোনো সমস্যা বা দুর্ঘটনা না হয় তবে এটা বেড়ে ১৮ বছরও হতে পারে। আবার কখনো যদি এটা কোনো সমস্যা দেখা দেয় যেমন নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে গেলে তখন আবার এটাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে আসতে জ্বালানি পুড়বে এভাবে কয়েকবার হলে মেয়াদ কমে আসতে পারে।

ভোরের কাগজ : এর স্বত্বাধিকার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে?

সৈয়দ আলমাস কবীর : এটা রাষ্ট্রের সম্পত্তি। এটাতে কারো কোনো ব্যক্তি মালিকানা নেই। ভোরের কাগজ : কখন থেকে এটা বাংলাদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং নিয়ন্ত্রণে টেকনোলজিস্ট কারা থাকবে? সৈয়দ আলমাস কবীর : আপাতত তিনটি দেশ থেকে এটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দুবছর পর বাংলাদেশের তরুণরা দেশ থেকে তা নিয়ন্ত্রণ করবে। এ জন্য একটা টিম বিদেশ থেকে ট্রেনিং নিয়েছে।

ভোরের কাগজ : ধন্যবাদ আপনাকে। সৈয়দ আলমাস কবীর : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App