×

জাতীয়

শাহজাহানপুর থানায় কারণে অকারণে চলে হয়রানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম

শাহজাহানপুর থানায় কারণে অকারণে চলে হয়রানি
১৩ মে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার ভেতরে পায়চারী করে বেড়াচ্ছেন এক বয়স্ক মহিলা। তার সঙ্গে এক কিশোরী এবং এক শিশুও আছে। তিনি কখনো থানার ভেতরে ঢুকছেন, কখনো থানার বাইরের গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আলাপ করছেন। আবার কখনো কাকে যেন ফোন দিয়ে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন। পরে রাত ৮টার দিকে কনস্টেবল তমছের তাদের থানার সামনে রফিকুলের চায়ের দোকানে বসিয়ে দোকানীকে বলেন, রহমান স্যারের লোক। চা-বিস্কুট দে। এটুকু বলেই তমছের আবার থানার ভেতরে চলে যান। তখন কথা হয় ওই মহিলার সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের বাসা টিটিপাড়া এলাকায়। ওই দিন সকালে তার ছেলে মনির বাসা থেকে বের হলে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে থানায় এসে জানতে পারেন তার ছেলের নামে ওয়ারেন্ট আছে। কিন্তু তার ছেলে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকায় বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। একপর্যায়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, ওয়ারেন্ট যার নামে তার নাম কী। জানানো হয় মনির। মনিরের বাবার নাম কি? এমন প্রশ্নের পরই একটু আশা খুঁজে পান। কারণ ওয়ারেন্টের মনিরের বাবা আর তার স্বামীর নাম এক নয়। বিষয়টি তিনি তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই রহমানকে বললে কাগজ যাচাই করার পরে মনিরকে ছাড়বেন বলে জানান। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে কাগজ যাচাই করা হলেও তার ছেলেকে ছাড়া হয়নি। এ পর্যায়ে ওই মহিলা হতাশ কণ্ঠে বলেন, আমি মনির ও আমার স্বামীর ভোটার আইডি কার্ড এনে দেখিয়েছি, তাতেও কাজ হয়নি। এভাবেই আমাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশের কাছে আমাদের সময়ের কোনো দাম নাই। আমার ছেলেটা কোনো দোষ না করেও সারাদিন হাজতে কাটাল। এ হয়রানিগুলো কে দেখবে? কথার ফাঁকেই চায়ের দোকানি রফিকুল বলে ওঠেন কিছু টাকা দিলেই পারেন। পুলিশ কি টাকা ছাড়া কাজ করে? পরে ওই মহিলা বলেন, টাকা ছাড়া কি আইছি? ৩ হাজার দিতে চাইছি, এখন আসবে বলছে। গরিব মানুষ, আর টাকা পাব কোথায়... বলতে বলতে থানার ভেতরে চলে যান তিনি। রাত ১০টার দিকে ওই চায়ের দোকানে এসে বসেন এএসআই মাসুদ। তখনই দোকানি রফিকুল তাকে বলেন, ভালো খবর আছে স্যার। আপনি আজ রহমান স্যারের সঙ্গে না? কী খবর? এএসআইয়ের এমন প্রশ্নে দোকানি বলেন, টিটিপাড়ার একজনকে আটক করছে রহমান স্যার। এখানে চা-বিস্কুট খেয়ে গেল আসামির মা-বোন। তখন এএসআই মাসুদ বলেন, আমি ছিলাম না। কিছুক্ষণ পর এএসআই রহমান সকালে আটককৃত মনিরকে ছেড়ে দিয়ে ওই চায়ের দোকানে আসেন। তারপর দোকানির উদ্দেশে বলতে থাকেন, পরিবারটা একদম গরিব। কোনো লাভ হইল নারে। যা ভাবছিলাম তা আর হইল না। ছাইড়া দিছি... বলেই চলে যান। কেন ওই পরিবারকে এতটা হয়রানি করা হলো তা জানতে পরদিন এএসআই রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এদিকে, শাহজাহানপুর থানায়ও দালালদের বেশ দৌরাত্ম্য দেখা গেছে। থানার গেটে এএসআই লুতফরের সঙ্গে রেজাউল নামে এক দালালকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। দালাল রেজাউল এএসআই লুতফরের মোবাইল থেকে কাউকে ফোন দিয়ে বলতে থাকেন রাশেদ স্যার, মতিঝিল গিয়ে এই রেজাউলকে ভুলে গেছেন। কত কাজ করে দিছি আপনার। শাহজাহানপুরে আসেন একদিন আড্ডা দেই। এ ছাড়া থানার ভেতরে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট পরা অন্য এক দালালকে দেখা যায়, কতজন আসামি আছে তা তদারকি করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মাদক ঢাকায় আসায় শাহজাহানপুর থানা এলাকাটি মাদকের অভয়ারণ্য। তবে এখানকার অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ীই ‘ভাসমান’। অন্যদিকে, জায়গা ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, আবাসিক সমস্যাসহ নানা সমস্যা রয়েছে এ থানায়ও। সরেজমিন দেখা যায়, জায়গার অভাবে নারী ও শিশু ডেস্ক থানার বারান্দায় স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি থানার আলমারি, বুলেট প্রæফ জ্যাকেট, হেলমেট সবকিছুর ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। থানার সমস্যা নিয়ে কথা তুলতেই কর্মরত কনস্টেবল সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ (১৩ মে) সকালে পানির অভাবে গোসল করতে পারি নাই। সারা দিন ডিউটি করে রাতে ঘুমাব সেই জায়গাও পাই না। এগুলো নিয়ে একটু লেখেন। যদি আমাদের একটু উপকার হয়। শাহজাহানপুর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম মোল্যা ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো থানা ভবন নেই। রেলওয়ের জায়গার ওপর কয়েকটি ছোট ছোট ভবনে থানার কার্যক্রম চলছে। তা ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কমলাপুর মাদকের রুট হওয়ায় এখানে মাদক মামলা বেশি হয়। তবে, আমরা সব সময় মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App