×

মুক্তচিন্তা

মাথা না নোয়ালে ইরানের অবস্থা ইরাকের মতো হবে?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০১৮, ০৭:৪৬ পিএম

সামনের দিনগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সমস্যা বাড়বে। সমাধানের একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ, ইরান সুবোধ বালকের মতো উত্তর কোরিয়াকে অনুসরণ করা? নইলে যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধে ইসরায়েল ও সৌদি আরব একপক্ষে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন বৈঠক ১২ জুন সিঙ্গাপুরে। বিশ্ব এ সময়ে তাকিয়ে আছে ওই বৈঠকের দিকে। বৈঠক সফলতার সম্ভাবনা ষোলআনা। এমন হলে কোরীয় উপত্যকায় শান্তির বাতাস বইবে; পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ হবে। দুই কোরিয়া একদিন একত্রীকরণের সম্ভাবনা দেখা দেবে। কোরিয়ার মতো ইরানে কি শান্তি আনা সম্ভব? আপাতত নয়। তবে মার্কিন প্রশাসন এবার ইরানের দিকে আরো গভীর মনোনিবেশ করবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে ‘ইরান পরমাণু চুক্তি’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর ফলে এই চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। ইরান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ না দিলে দেখে নেবে? ট্রাম্প হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ইরান পরমাণু প্রকল্প পুনরায় চালু করলে খবর আছে। ইরান পার্লামেন্টের ভেতরে মার্কিন পতাকা পুড়িয়েছে। বারবার উচ্চারিত হয়েছে, ‘ডেথ টু আমেরিকা’। উত্তর কোরিয়ার পর এখন দেখার সময় ইরান কিভাবে মাথা নত করে, শান্তি না যুদ্ধের পথে?

সিরিয়ায় ইরানি বাহিনী ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে ইসরায়েল আক্রমণ চালিয়েছে। সৌদি আরব বলেছে, ইরান যদি পরমাণু বোমা বানায় তাহলে তারাও বোমা বানাবে। সৌদি আরব আরো বলেছে, ইয়েমেন থেকে রিয়াদে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, সেই ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের দেয়া। অভিযোগ গুরুতর। ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভাষণে বলেছিলেন, ইরানি জনগণ কট্টর মৌলবাদী শাসকগোষ্ঠীর হাতে ‘জিম্মি’। তেহরান সেটি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে সামাজিক মিডিয়ায় ইরানের মানুষ বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা জিম্মি, আমাদের উদ্ধার করুন’।

ইরান কথা না শুনলে ইরানের অবস্থা ইরাকের মতো হবে। কিছু উন্মাদ ভাবছেন, ইরান একা নয়, রাশিয়া ও অন্যান্য শক্তি এবার ইরানের পাশে আছে। ইরানের জন্যে রাশিয়া আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবে না, তবে অস্ত্র বিক্রি করবে। আমেরিকা-ফ্রান্স অস্ত্র বিক্রি করবে সৌদি আরবের কাছে। মাঠে যুদ্ধ করবে শিয়া ও সুন্নিরা। আমেরিকা-ইসরায়েলের সহায়তায় সুন্নিদের বিজয় নিশ্চিত। ইরানের পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। আমেরিকা কিছু ভোলে না। সত্তর দশকে মোল্লাতন্ত্রের ‘মার্কিন জিম্মি নাটক’ আমেরিকা ভোলেনি। আজ হোক কাল হোক প্রতিশোধ নেবেই।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইরান বলেছে, তারা চুক্তিতে আবদ্ধ থাকবেন। চীন ও রাশিয়া এই চুক্তির অংশীদার এবং তারা চুক্তি ভঙ্গের জন্য আমেরিকাকে দোষারোপ করছেন। ইরান ইতোমধ্যে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করেছে। ইরানের বিদেশমন্ত্রী সর্বত্র ছুটে বেড়াচ্ছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি হুমকি দিয়েছেন যে, আলাপ-আলোচনায় কাজ না হলে তারা কয়েক সপ্তাহ পর ‘সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম’ তৈরি শুরু করবেন, তবে বোমা বানাবেন না? এই চুক্তির অন্য ইউরোপীয় অংশীদার ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি চেষ্টা করেছিল যাতে ট্রাম্প চুক্তি থেকে বেরিয়ে না যান, কিন্তু কাজ হয়নি। এরা মার্কিন বন্ধু, তাই বিপাকে আছে, কি করবে। যুক্তরাষ্ট্র শুধু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়নি বরং ইরানের ওপর আরো কঠোর ‘অর্থনৈতিক অবরোধ’ আরোপ করেছে। ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, মার্কিন অবরোধের বিরুদ্ধে সহায়তার সুনির্দিষ্ট আশ্বাস তিনি এখনো পাননি।

যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান পরমাণু চুক্তি টিকুক বা না টিকুক, মার্কিন কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ ঠেকানো না গেলে ইরান এই চুক্তিতে থেকে কি করবে? এই অবরোধ ইরানের ওপর কঠিন আঘাত। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এক মেমোতে ৯০ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা গুটানোর পরামর্শ দিয়েছে। তবে এই অবরোধের সফলতা কিছুটা নির্ভরশীল বিদেশি সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।

ট্রাম্প অবশ্য ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির আভাস দিয়েছেন। নতুন চুক্তি হতে হলে পুরনো চুক্তি বাতিল হতে হবে? কিন্তু চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি চাইলে পুরনো চুক্তি বহাল রাখতে পারে এবং সেক্ষেত্রে মার্কিন অবরোধ ততটা জোরালো হবে না। চুক্তি না থাকলে ইরান পুনরায় এর পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করতে পারবে। কিন্তু এতে ইউরোপ বিগড়ে যেতে পারে। আর আমেরিকা সেটি হতে দেবে বলে মনে হয় না। মোটকথা, সামনের দিনগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সমস্যা বাড়বে। সমাধানের একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ, ইরান সুবোধ বালকের মতো উত্তর কোরিয়াকে অনুসরণ করা? নইলে যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধে ইসরায়েল ও সৌদি আরব একপক্ষে?

শিতাংশু গুহ : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App