×

মুক্তচিন্তা

এখন বাণিজ্যিক দিকগুলো প্রসারিত হোক

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০১৮, ০৯:৪৬ পিএম

এখন স্যাটেলাইটের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। এ ক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে। স্যাটেলাইটটি স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেমন অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমবে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আমূল পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকগুলো প্রসারিত করতে হবে।

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হলো। নানা কারণে বেশ কয়েকবার পেছানোর পর শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় স্পেসএক্স লঞ্চিং স্টেশন থেকে মহাকাশের পথে যাত্রা শুরু করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। ৫৭তম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে গৌরবময় অভিষেক হলো বাংলাদেশের। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে যুক্ত হলো নতুন এক অধ্যায়ের। এই অগ্রযাত্রায় জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একদিন যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্নের পথ ধরেই জাতির ইতিহাসে রচিত হলো নতুন মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প গ্রহণ, নির্মাণ এবং সফল উৎক্ষেপণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভ‚-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মহাকাশ জয়ের সূচনা করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ৪২ বছর পর লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে কক্ষপথে স্থাপিত হতে হচ্ছে এই উপগ্রহ। ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়েছে এটি। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এর জন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। সাবমেরিন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের প্রস্তাব নাকচের মতোই মারাত্মক ওই পশ্চাৎমুখী সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এ কারণে বাংলাদেশ মহাকাশে ‘অরবিটাল প্লট’ হারিয়েছে। তাই এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশকে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানির কাছ থেকে ২১৯ কোটি টাকার ১৫ বছরের জন্য কক্ষপথ বা ‘অরবিটাল প্লট’ ক্রয় করতে হয়েছে। উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রে সম্পন্ন হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় করা হয়েছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় সংকুলান হয়েছে।

বর্তমান বিশ্বে স্যাটেলাইটের কার্যকারিতা কতটা অপরিহার্য বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমান সরকার এর গুরুত্ব অনুভব করে স্যাটেলাইট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বারবার উৎক্ষেপণের তারিখ পেছানো নিয়েই অনেকে ছিলেন সন্দিহান। তবে তা উৎক্ষেপণের ব্যাপারটা আসলে পৃথিবীর কক্ষপথ, আবহাওয়াসহ আরো অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। তবে সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সব সন্দেহের অবসান হয়েছে। এখন স্যাটেলাইটের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। এ ক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে। স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ ও বিপণনের কাজটিও করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে। স্যাটেলাইটটি স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেমন অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমবে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আমূল পরিবর্তন আসবে। বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে। টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও কনফারেন্স, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভ‚মিকা রাখবে। পাশাপাশি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকগুলো প্রসারিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App