×

জাতীয়

কোতোয়ালি থানায় টাকায় সব সম্ভব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০১৮, ০২:৪৮ পিএম

কোতোয়ালি থানায় টাকায় সব সম্ভব
সকাল ১১টা। কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে বেশ জটলা বেঁধে আছে। ৩ জন যুবক ও একজন বয়স্ক লোক পুলিশ সদস্যদের যেন কি বুঝাতে চেষ্টা করছেন। কাছে গেলে শোনা যায় বয়স্ক লোকটি বলছেন, আমার ছেলে এমন কাজ করতেই পারে না, এটি একটি চক্রান্ত। যেভাবেই হোক কিছু একটা করেন স্যার। পরে সিভিল পোশাকে থাকা এক পুলিশ সদস্য ওই বয়স্ক লোকটিকে বলেন, ‘পারসোনাল কথা সবার সামনে বলতে হয় না। বাইরে আসুন’। তখন কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার মাইনুল বলেন, শুধু একজনকে ভিজিট (টাকা) দিলে হবে? আমি এই থানার ডিউটি অফিসার, আমার জন্য কি করলেন? ভিজিট যখন দিবেন আমাকেও দেন। ভিজিট দিলে এই থানায় সব সম্ভব বলতেই শব্দ করে হেসে ওঠেন সবাই। পরে ওই সিভিল পোশাকের পুলিশ সদস্যকে নিয়ে থানা চত্বরেই চলতে থাকে রফা দফা। একপর্যায়ে ওই ৩ যুবক ও বয়স্ক লোকটি থানা থেকে বেড় হয়ে যায়। পরিচয় গোপন করে ওই ৩ যুবকের একজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ওই যুবকের নাম আরিফ। সে জানায়, তাদের বাসা ইসলামপুর রোডে। পারিবারিক কলহের জেরে তার ভাবি তার ভাই সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে পুলিশ সুমনকে আটক করে। এখন তারা সুমনকে মুক্ত করতে এসেছেন। কিন্তু পুলিশ একটু বেশি টাকা চাচ্ছে। আমরা টাকা জোগাড় করতে পারলে সুমনকে ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর কি হয়েছে তা আর বুঝতে বাকি থাকে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিভিল পোশাকে থাকা ওই পুলিশ সদস্য হচ্ছেন থানার ওয়ারেন্ট অফিসার এসআই শহিদুল ইসলাম। ওসির খুব কাছের হওয়ায় বিভিন্ন আসামি ছাড়াতে তারই স্মরণাপন্ন হন সবাই। দুপুর দেড়টার দিকে লুঙ্গি ও শার্ট পড়া একজনকে ওয়ারেন্টের ফটোকপি চাইতে শোনা যায় এসআই শহিদুলের কাছে। তখন শহিদুল হাসতে হাসতে বলেন, বকশিস ছাড়া কি বেআইনি কাজ করা যায়। লোকটি বকশিস দিতে রাজি হলে তাকে নিজ রুমে নিয়ে যান ওই এসআই। গত ২৪ এপ্রিল সরজমিনে কোতোয়ালি থানার এসব দেখা যায়। সূত্র জানায়, এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে কোতোয়ালি থানায়। ঊর্ধ্বতন অফিসাররা বিষয়টি জানলেও অজানা কারণে থাকেন নিশ্চুপ। দুপুর আড়াইটার দিকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে আসেন এক বয়স্ক মহিলা। জিডি শেষে তিনি ডিউটি অফিসারের হাতে ২০ টাকার নোট গুজে দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন ডিউটি অফিসার বলেন, আমরা ২০, ৫০ টাকা নেই না। ওটা আপনার কাছেই রাখুন। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ওই মহিলা জানান, পারিবারিকভাবে অত্যাচারের শিকার হয়ে জিডি করার জন্য ৩ দিন ধরে ঘুরছি। অবশেষে জিডি নিল। শুধু পুলিশ সদস্য নয়, কোতোয়ালি থানা নিজেই নানা সমস্যায় জড়িত। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জনবল সঙ্কট, নারী ও শিশু ডেস্ক না থাকাসহ নানা কারণে ব্যাহত হচ্ছে এ থানার নাগরিক সেবা। থানা সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার সদরঘাট, বাবু বাজার ব্রিজের নিচ থেকে নয়া সড়ক, জিন্দাবাহার, তাঁতিবাজার, রায়শাবাজার, ইসলামপুর, শাঁখারিবাজার, আউলাদ হোসেন রোড, নবাববাড়ি রোড, আহসান আলি রোড, পাটুয়াটুলী লেন, কুমারটুলী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও কোটকাচারি এলাকা নিয়ে কোতোয়ালি থানা গঠিত। এই এলাকাগুলোতে দেড় লাখেরও অধিক লোক থাকলেও পুলিশ সদস্য আছেন মাত্র ৯৭ জন। ভিক্টোরিয়া পার্ক ও কোটকাচারি এলাকার নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য। ফলে অন্য জায়গায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। কোতোয়ালি থানার ওসি এ বি এম মশিউর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আগে গাড়ির সমস্যা ছিল। সম্প্রতি নতুন ২টি গাড়ি দেয়ায় সেই সমস্যা নেই। তবে, জনবল ও আবাসন সমস্যাসহ কিছু কিছু সমস্যা আছে। এগুলো থাকবেই। কিন্তু এর মধ্যেও আমরা সর্বাত্মক সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। এই থানা এলাকায় কি ধরনের অপরাধ বেশি হয় জানতে চাইলে ওসি বলেন, এই থানায় মাদক সম্পর্কিত মামলা বেশি হয়। এর বাইরে ভুয়া উকিল নোটিশ দেয়া ও ভুয়া সাক্ষীদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App