×

মুক্তচিন্তা

বিশ্বায়ন এবং বাংলাদেশে ইন্টারনেট গতি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ০৭:৪৪ পিএম

বিশ্বায়নের এই যুগে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ছাড়া আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো অনেকটা কঠিন। সম্প্রতি মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএম এসোসিয়েশন (জিএসএমএ) কর্তৃক প্রকাশিত একটি জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ইন্টারনেট গতির নানা চিত্র। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায় এশীয় দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া, ভুটান, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও নেপালের ইন্টারনেট গতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে এবং দেশগুলোতে ইন্টারনেট গড়গতির পরিমাণ যথাক্রমে ১৫.৭৮, ১৫.৪৩, ১৩.৪২, ১৩.৩৫, ১২.৭৬ এবং ১০.৭৯ এমবিপিএস। সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই ভারত ও বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গতির পরিমাণ। ভারত ও বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গড়গতির পরিমাণ যথাক্রমে ৮.৯২ ও ৫.০৮ এমবিপিএস। দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে ইন্টারনেট গতির পরিমাণ সবচেয়ে কম। (২৪ এপ্রিল ২০১৮, প্রথম আলো) বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতির পরিমাণ কম হওয়ার পেছনে যে কারণগুলোকে চিহ্নিত করা যায় তার মধ্যে তরঙ্গের দুর্বলতা এবং দুর্বল অবকাঠামো ব্যবস্থাকে মোটা দাগে চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশ অন্যান্য এশীয় দেশের তুলনায় অনেক দেরিতে চালু করে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) ইন্টারনেট সেবা। অবকাঠামোর স্বল্পতার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়াতে মোবাইল অপারেটররা এসব বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে না। শুধু ইন্টারনেট নয় অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে এখনো দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। এ কথা সত্য প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) ইন্টারনেট সেবা যুক্ত হয়েছে অনেক পরে। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। দেশের সবগুলো জায়গায় কি আমরা শতভাগ তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছি? জনগণ কি শতভাগ এর সুফল ভোগ করতে পারছে? না পারছে না। যেখানে থ্রিজি প্রযুক্তি শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি সেখানে ফোরজি প্রযুক্তি কতটুকু সফল হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। সফল হতে যে বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে তা হলো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন।তরঙ্গের দুর্বলতা এবং তরঙ্গের উচ্চ দামের ফলে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট প্রোভাইড করা সম্ভব হয় না। যখন দেশে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয় তখন দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর হাতে যথেষ্ট তরঙ্গ ছিল না। চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) ইন্টারনেট সেবা চালু করার পরও এই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এর মূল কারণ তরঙ্গের উচ্চমূল্য। টেলিযোগাযোগ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাইদ খান বলেন, টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর সংজ্ঞা এখন কোনো ভৌত সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ নয়। বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা এখন একটি বাস্তবতা। কিন্তু বাংলাদেশের আইনে এক অপারেটর অন্য অপারেটরের ফাইবার অপটিক অবকাঠামো ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে দেশ বিদেশি মোবাইল কোম্পানির উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রাপ্ত গড় ডাউনলোড গতির ওপর ভিত্তি করে। তখন বাংলাদেশে ফোরজি প্রযুক্তি ছিল না। ২০১৮ সালের ভাষা আন্দোলনের মাসে চালু করা হয় চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) ইন্টারনেট সেবা। আশা করা যায় এর ফলে পরবর্তী বছর প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের ইন্টারনেট গতির হার থাকবে সন্তোষজনক পর্যায়ে। ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের কারণে মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। যতই উন্নত প্রযুক্তির ইন্টারনেট সেবা সংযোজন করা হোক না কেন যদি সর্বসাধারণ সেটা ব্যবহার করতে না পারে তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না। ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধির কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো ডিস্ট্রিবিউশন জটিলতা। মূলত ব্যান্ডউইথ প্রদান করা হয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেটে পৌঁছানো হয়। কিন্তু ঢাকা শহরের ভেতরে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন অথবা ঢাকার বাইরে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তখন কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্যাবল লাইন ব্যবহার করতে হয়। এই ক্যাবল লাইনের জন্য ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডরদের নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করতে হয়। সে কারণেই ইন্টারনেটের মূল্য গ্রাহক পর্যায়ে বেড়ে যায়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে কীভাবে এই ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল সহজ করা যায়। আশা করা যায় এর ফলে ইন্টারনেটের মূল্য অনেকটা কমে আসবে। তা ছাড়া অপারেটরগুলোকে যথাযথভাবে নজরদারিতে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃপক্ষকে। সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জও বেড়েছে অনেকখানি। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন। আর দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যতীত তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া বিশ্বায়নের এই যুগে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই। বর্তমান পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। মহাদেশ অনুযায়ী ভাগ করলে উত্তর আমেরিকার ৩৪.৬ কোটি, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারেবীয় অঞ্চল ৪৩.৭ কোটি, ইউরোপে ৭০.৫ কোটি, আফ্রিকার ৪৫.৩ কোটি, মধ্যপ্রাচ্যের ১৬.৪ কোটি, ওশেনিয়ার ২.৮ কোটি এবং এশিয়ার ২০২.৪ কোটি মানুষ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী সক্ষম করে গড়ে তুলতে হলে উল্লেখ্য প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি এবং মূল্য হ্রাসের মাধ্যমে তা সর্বসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীতকরণের যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জনের পথে দেশকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। ফাহিম আহমেদ : ছাত্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App