বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে একক অভিনীত কোনো মঞ্চনাটক এই প্রথম ১৫০টি প্রদর্শনীর মাইলফলক স্পর্শ করেছে। শূন্যন রেপার্টরি প্রযোজিত ‘লালজমিন’ নাটকটির ১৫০তম প্রদর্শনী হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে গতকাল ৬ এপ্রিল নাটকটির এই বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মান্নান হীরার লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘লালজমিন’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। নাটকটিতে নিয়মিতভাবে একক অভিনয় করছেন মোমেনা চৌধুরী। অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমার অভিনয় জীবনের সেরা আনন্দের ঘটনা। আমার অভিনীত একটি নাটক ১৫০তম মঞ্চায়নের গৌরব অর্জন করেছে। এমন একটা মুহূর্তের জন্য ভীষণভাবে অপেক্ষায় ছিলাম। একজন অভিনয়শিল্পীর জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া।’ ২০১১ সালের ১৯ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমÐলে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়। এরপর ইংল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন মঞ্চে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়ে প্রশংসিত হয়েছে। মোমেনা বলেন, ‘নাটকটির অভিনয় সূত্রে নানা রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। দর্শকের প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছি এই নাটকটিতে অভিনয় করার জন্য। থিয়েটারে আমার তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পথ চলা। একজন অভিনয়শিল্পীর জন্য এটা ভীষণ আনন্দের ঘটনা। নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এই সাত বছরে নাটকটির ১৫০টি প্রদর্শনী করেছি। এই মুহূর্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আরণ্যক নাট্যদল, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে যারা আমাদের নাটকটি মঞ্চায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘লালজমিন’ নাটকের কাহিনী। কিশোরী একটি মেয়েকে ঘিরে এর গল্প আবর্তিত হয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, তারপর আরো কয়েকটি দশক। সেই কিশোরীর মনে জেগেছে নতুন কিছু প্রশ্ন। লালজমিন এমনই কিছু প্রশ্নের উৎসভ‚মি। নাটকটির সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন জুলফিকার চঞ্চল ও রামিজ রাজু। কণ্ঠ দিয়েছেন বারী সিদ্দিকী, রামিজ রাজু ও নীলা। আলোক পরিকল্পনায় সুদীপ চক্রবর্তী। কস্টিউম ডিজাইন করেছেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি এবং তাকে সহযোগিতা করেছেন নীলা মমতাজ। এই নাটকটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুদান পেয়েছে। মোমেনা চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে নাটকটি দেশজুড়ে মঞ্চস্থ করছি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ১১ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ৪৪টি জেলা, উপজেলায় ‘লালজমিন’ নাটকটির মঞ্চায়ন করা হবে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাটকটির মঞ্চায়ন করেছি। ১১ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ভ্যাট আর ট্যাক্স বাবদ কেটে নেয়া হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। সম্ভবত এই প্রথম কোনো নাটককে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে এত বড় আকারে পৃষ্ঠপোষকতা করা হলো। এভাবে যদি ভালো নাটককে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় এবং সারাদেশে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়; তবে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের অন্যরকম একটা পরিবর্তন আসবে।