অস্কারের ৯০তম আসরের পর্দা নামল গত সোমবার। এবারে সেরা ছবির পদক জেতা ‘দ্য শেইপ অব ওয়াটার’ ছবিটির বিরুদ্ধে এসেছে নকলের অভিযোগ। কেবল অভিযোগই নয়, সত্যিই বেশ কয়েকটি সিনেমার দৃশ্য, গল্পের প্রেক্ষাপট ও বিস্তারের সঙ্গে মিল রয়েছে ছবিটির। তাই ছবিটি পুরস্কৃত হওয়াতে অবাক হয়েছেন সিনেমাপ্রেমীরা! ‘দ্য শেইপ অব ওয়াটার’ গিয়েরমো দেল তোরো পরিচালিত একটি কল্পনানির্ভর ড্রামা ফিল্ম, যেখানে একজন প্রতিবন্ধী নারী অসুস্থ রিভার গড বা জলমানবের প্রেমে পড়েন। তবে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণসিংহ জেতার পরই ছবিটি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। নাট্যকার পল জিন্ডেলের লেখা জনপ্রিয় মঞ্চনাটক ‘লেট মি হিয়ার ইউর হুইসপার’ থেকে ‘দ্য শেইপ অব ওয়াটার’-এর গল্প চুরি করা হয়েছে! ১৯৬৯ সালে লেখা এ নাটক থেকে ১৯৯০ সালে একটি টেলিছবিও বানানো হয়েছিল! ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডস ফিল্ম একাডেমি থেকে মুক্তি পায় ‘স্পেস বিটুইন আস’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নেদারল্যান্ডসের চলচ্চিত্র পড়ুয়া শিক্ষার্থী মার্ক এস নলকায়েম্পারের বানানো ১৩ মিনিট ব্যাপ্তির এই ছবিটির সঙ্গেও ‘দ্য শেইপ অব ওয়াটার’ ছবির গল্পের মিল রয়েছে। এ ছাড়াও ফ্রেন্স পরিচালক জিয়ান পিয়েরে জনেট সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ‘দ্য শেইপ অব ওয়াটার’ ছবির একটি দৃশ্যের সঙ্গে তার ‘দেলিকেতেসেন’ ছবির একটি দৃশ্যের মিল রয়েছে। দুটি দৃশ্যেই একজন নারী ও পুরুষ ঘনিষ্ঠ হয়ে একসঙ্গে বসে হালকা চালের একটি নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেন, যেখানে পেছনে টেলিভিশনে একটি পুরনো সঙ্গীতনির্ভর নাটক চলতে দেখা যায়। ‘দ্য শেইপ অব ওয়াটার’ ছবিতেও এমন একটি দৃশ্য রয়েছে। তবে অস্কার জেতা সিনেমাটিতে পায়ের নাচ দেখানো হলেও ‘দেলিকেতেসেন’ ছবিতে দেখানো হয়েছে পুরো শরীর। ‘স্পেস বিটুইন আস’ ছবিটির সঙ্গে ‘দ্য শেইপ অব ওয়াটার’ সিনেমার গল্পের পটভ‚মির মিল রয়েছে। দুটো ছবিতেই একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী এক বন্দি উভচর মানুষের প্রেমে পড়ে এবং তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। তবে মঞ্চনাটক ‘লেট মি হিয়ার ইউর হুইসপার’-এর সঙ্গে ছবিটির আরো বেশি মিল রয়েছে। প্রয়াত পল জিন্ডেলের পুত্রবধূ র‌্যাচেল স্টাইলের বরাত দিয়ে হলিউড রিপোর্টার লিখেছে, ‘লেট মি হিয়ার ইউর হুইসপার’ নাটকটিতে মূল নারী চরিত্রটি বেশি রকমের অন্তর্মুখী স্বভাবের, অপরদিকে ‘দ্য শেইপ অব ওয়াটার’-এর মূল চরিত্রে স্যালি হকিন্স অভিনয় করেছেন একজন বাকপ্রতিবন্ধীর ভ‚মিকায়। এ ছাড়াও দুটি গল্পেই স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার একটি ল্যাব দেখানো হয়েছে যেটি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৬৯ এবং ২০১৭ সাল ভিন্ন সময় হলেও দুটোতেই উভচর মানবকে খাওয়ানো এবং নাচ দেখানোর কাজটি করেন অভিনেত্রী। এমনকি দুই জায়গাতেই বন্দি জলচরকে উদ্ধারে লন্ড্রিকার ব্যবহার করা হয়, এবং উদ্ধার কর্ত্রীর নাম থাকে এলিসা। তবে ‘লেট মি হিয়ার ইউর হুইসপার’-এর সঙ্গে এবারের অস্কারের সেরা ছবিটির অমিলও রয়েছে বেশ। সিনেমার নারী চরিত্রটি বাকপ্রতিবন্ধী হলেও নাটকে ‘এলিসা’ চরিত্রটি একজন স্বাভাবিক নারী। যদিও লজ্জাজনিত কারণে তাকে কথা বলতে শোনা যায় না। এ ছাড়া নাটকের জলজ প্রাণীটি একটি ডলফিন আর সিনেমায় সেটি জলমানব। দুটো কাহিনীর সমাপ্তিতে বেশ নাটকীয়তা থাকলেও পরিণতি ছিল ভিন্ন।