×

জাতীয়

জোট শরিকদের চাপে দুদল : বিএনপির প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে ২০ দলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০১৮, ০৪:৪৮ পিএম

জোট শরিকদের চাপে দুদল : বিএনপির প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে ২০ দলে
দুর্নীতির মামলায় কারাগারে অবস্থান করছেন ২০ দলীয় জোটের প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে বিএনপির প্রতি অসন্তেুাষ বাড়ছে ২০ দলীয় জোটের। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ডাকা কর্মসূচির ধরন, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দলের কৌশল নির্ধারণ, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ও আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা, জোট সম্প্রসারণসহ দলীয় কোনো বিষয়েই জোটের নেতাদের পাত্তা দিচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। যার কারণে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছেন ২০ দলীয় জোটের নেতারা। মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মতদ্বৈধতা। জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এমন আভাস পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আপাতদৃষ্টিতে বিএনপির সঙ্গে জোটের সম্পর্ক সুসংহত মনে হলেও নানা ইস্যুতে ভেতরে ভেতরে এখন যত দল তত মত। তারেক রহমানের নেতৃত্ব না মেনে নেয়া ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অহিংস কর্মসূচি- এ দুয়ের বিষয়েই জোট শরিকদের ভিন্ন অবস্থান। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার ২ দিন পর জোটের নেতাদের সঙ্গে গুলশান অফিসে বৈঠকে বসেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। বৈঠকের এক পর্যায়ে ফোন আসে তারেক রহমানের। টেলিফোনে তারেক রহমান ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সংক্রিয় থাকার নির্দেশনা দিলে তারা সরাসরি জানিয়ে দেন দলে খালেদা জিয়ার বাইরে কোনো নেতৃত্ব তারা মানেন না। জোটের এই বিরূপ মনোভাব আঁচ করতে পেরেই দলের সব কার্যক্রম থেকে জোটকে দূরে রাখছেন বিএনপির নেতারা। ২০ দলীয় জোটের নেতারা জানান, দলীয় প্রধান কারাগারে যাওয়ার পরে দলের পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ২০ দলীয় জোট। প্রতিদিন বিইেনপর সিনিয়র নেতারা বৈঠক করলেও সেই বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হচ্ছে- সে বিষয়ে কোনো ‘মেসেজ’ পাচ্ছেন না জোট শরিকরা। তাদের মতামত উপেক্ষা করেই নির্বাচনমুখী আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এমনকি দলের একাধিক অহিংস কর্মসূচি পালন করা হলেও সেখানে জোটভিত্তিক কোনো কর্মসূচি নেই। অথচ দলের বুদ্ধিজীবী, শ্রেণি-পেশার মানুষ শুভাকাক্সক্ষী বিদেশি গণমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। নতুন নতুন কর্মসূচি আসছে। জোট নেতারা মনে করেন, দলের শীর্ষ নেতাকে কারাগারে পাঠানোর পর বিএনপির সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শন করা উচিত ছিল। কারণ এটা দলের জন্য ‘প্রেস্ট্রিজ ইস্যু’। অথচ দলের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সিদ্ধান্তগুলো আসছে উল্টো। তা ছাড়াও দলীয় প্রধানের কারাগারে যাওয়ার ইস্যু আন্তর্জাতিকভাবে কাজে লাগাতেও বিএনপির নেতারা ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। জোট নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে জোট পরিবর্তন করলে এমপি, মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু আদর্শ এবং বিএনপির হাইকমান্ডের কাছ থেকে পরবর্তীতে মূল্যায়ন পাওয়ার আশ্বাসে তারা যাননি। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে যদি বিএনপি সেই কথা না রাখে আর নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন না দেয় বা দলীয়ভাবে সেভাবে মূল্যায়ন করা না হয় তাহলে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে তারা বলেন, বড় দুই দলের জোট বড় করার প্রতিযোগিতার কারণে নাম ও ব্যানার সর্বস্ব কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উত্থান। তাদের নিয়েই দলের জোট শক্তি। তাদের অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে। তবে দলে তাদের অবদান খুব বেশি থাকে না কখনোই। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তাদের সঙ্গে রাখা ছাড়া উপায়ও নেই। কিন্তু দলের সব সিদ্ধান্তে তাদের সঙ্গে রাখতে হবে এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়মও নেই। কিছু কিছু ‘সিক্রেট’ তো থাকবেই। এটা নিয়ে তাদের ভেতরে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হওয়াটা দলের জন্য অস্বস্তিকর। তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি জোটের সঙ্গে এখন কৌশলী ভূমিকা পালন করবে। আন্দোলন ও নির্বাচনের বিষয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝেই আলোচনা করবে। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, ২০ দলের সঙ্গে ঐক্যটা সম্পূর্ণভাবে আন্দোলনকেন্দ্রিক। এর সঙ্গে আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো সম্পর্ক নেই। ২০ দলকে সঙ্গে নিয়ে দলের অধিকাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু ‘সিক্রেট’ রেখে চলতে হচ্ছে। এটাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, দলীয় প্রধান কারাগারে যাওয়ার আগে আন্দোলন কর্মসূচির ব্যাপারে যে ধরনের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, সেই মোতাবেক কর্মসূচি চলছে। তিনি সহিংস কর্মসূচির বিপক্ষে ছিলেন। এ বিষয়ে ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, বিএনপির কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ২০ দলীয় জোট অনেকটাই অন্ধকারে। আমরা আগামী দিনের কোনো সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছি না। জোটগত কর্মসূচি নেই। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। তিনি বলেন, দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন প্রশ্নে বিএনপির এমন নমনীয় আচরণ তরুণসহ তৃণমূল নেতারা হতাশার চোখে দেখছে। ক্ষমতাসীন দল ব্যঙ্গ করছে। তা ছাড়া খালেদা জিয়ার রায় হওয়ার পরপরই কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হলে সারা দেশে নেতাকর্মীদের মনোবল আরও চাঙ্গা হতো এবং ক্ষমতাসীনরাও চাঙ্গা হতো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ দলীয় জোটের ঐক্যকে আরও প্রসারিত করার জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটের নেতারা কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে খুব শিগগিরই তারা আলাদাভাবে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। ১২৫টি আসনে ছাড়ের দাবি মাথায় রেখেই নিজেদের প্রার্থী তালিকাও প্রস্তুত করছে। নির্বাচন সামনে রেখে তাদের অনেকে আবার নিজ নিজ এলাকায়ও তৎপর হয়ে উঠেছেন। জোটের আরেক শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম বলেন, আগে যা হয়েছে তা তো হয়েছেই। দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা দলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে চাই। দলের পক্ষ থেকে সাড়া না পেলেও আমরা আমাদের যুগোপযোগী আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করে যাব। তিনি আরো জানান, এরই মধ্যে এলাডিপির পক্ষ থেকে ৩০টি আসনের দাবি জানিয়ে একটি তালিকা বিএনপি মহাসচিবের হাতে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যথা সময়ে সুরাহা না হওয়া দরকার বলে মনে করে এলডিপি। বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেন, জোট হওয়ার পর থেকে হয়তো প্রশ্ন থাকতে পারে, ঠিকমতো সমন্বয় হয়নি। কিন্তু জোটের মূল লক্ষ্য ঠিক আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App