×

মুক্তচিন্তা

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিন

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০১৮, ০৯:১৭ পিএম

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিন

জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও ইতিবাচক। তবে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন হলেও একই সঙ্গে এটি হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার মাস মার্চেই জাতিসংঘের কাছ থেকে মিলতে পারে এই স্বীকৃতি। আশা করা হচ্ছে, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৯৮তম জন্মবার্ষিকীতে এ ঘোষণা আসবে এবং তা হবে বাঙালি জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। এই অর্জনে আত্মবিশ্বাস বাড়বে দেশের। সম্মানও বাড়বে। তবে উন্নয়নশীলে উত্তরণ ঘটার পর এ রাষ্ট্রের সামনে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি হবে। যার জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি রাখতে হবে।

উন্নয়নকে টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সূচক তৈরি করে থাকে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। তারই ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ- তিন শ্রেণিতে ভাগ করে সিডিপি। প্রতি তিন বছর পরপর জাতিসংঘের সিডিপি এ তালিকায় থাকা দেশগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্থার তথ্যমতে, একটি দেশ এলডিসি থেকে বের হতে যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়, তা আগেই সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। এই তিন শর্ত হলো- মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় তিন বছরের গড় হিসাবে ১ হাজার ২৪২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়া। বাংলাদেশে এখন মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলার। আর মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ১০০-এর মধ্যে ৬৬ বা এর বেশি অর্জন করতে হয়, বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭০-এ। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ বা তার নিচে থাকার শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান ২৫.০৩-এ। বর্তমানে ৪৭টি দেশ স্বল্পোন্নত তালিকায় রয়েছে। অর্থনীতির সার্বিক গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে সিডিপির ২০১৮ সালের মূল্যায়নে বাংলাদেশের এলডিসির তালিকা বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন প্রায় নিশ্চিত। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সিডিপির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারের উচ্চ মহলের একাধিক আলোচনা হয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের একাধিক প্রতিনিধিদল জাতিসংঘে গিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সূচকের সর্বশেষ অবস্থান অবহিত করে এসেছে। এরপর গত অক্টোবর মাসে জাতিসংঘের সিডিপির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। এদিকে বাংলাদেশে সফররত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করছেন। তিনি আশার বাণী শুনিয়েছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তা কতটা সম্ভব- এ প্রশ্নে তাকেহিকো নাকাও বলেন, অসম্ভব নয়। তবে খুবই কঠিন। উন্নত দেশ হওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। আর সে জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালোভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও ইতিবাচক। তবে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন হলেও একই সঙ্গে এটি হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশকে কিছু কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। এর বহুমাত্রিক প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে বড় আকারে দুই ধরনের ঝুঁকি রয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর একটি হলো- স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব থেকে এখন যতটা সহজ শর্তে ঋণ পায়, উন্নয়নশীল দেশ হলে সেটি পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পাওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হবে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখে সামনে অগ্রসর হতে হবে। তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে স্বীকৃতি অর্জনে দেশের মানুষ সুফল ভোগ করবে- এমনটাই প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App