×

অর্থনীতি

এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৪৩ পিএম

এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন না হওয়া বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি বছর সরকার যে এডিপি গ্রহণ করে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয় না। এডিপি বাস্তবায়নে কোনো কোনো প্রকল্প ধীরগতিতে এগোলেও অনেক প্রকল্পের কাজ শুরুই হয় না। প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন করুণ চিত্রের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সরকারের প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থাগুলোর দুর্নীতি ও অনিয়মকে দায়ী করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই এসব দপ্তর বা সংস্থার দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধ করে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে বলে মত দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থার সেবা কার্যকর এবং দুর্নীতিমুক্তকরণের লক্ষ্যে দপ্তর বা সংস্থাগুলোর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবে দুদক। এ জন্য সরকারি উন্নয়ন নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলীদের সঙ্গে দুদক ২৭ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসবে। দুদকের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকটি হবে। এ বৈঠকের বিষয়ে জানাতে দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত চিঠি ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠির সঙ্গে বৈঠকের কার্যপত্রও পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের প্রকৌশলসংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থাগুলো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা এবং ফলদায়ক করার জন্য উল্লেখিত দপ্তরগুলোর দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধ করে সুশাসন নিশ্চিত করা একান্ত আবশ্যক। এতে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না করে অস্বাভাবিকভাবে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণ এবং করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। প্রকল্প নির্বাচন করার সময় প্রস্তাবনা প্রণয়ন এবং টেকনিক্যাল ও ফিনান্সিয়াল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। প্রকল্প নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রকল্পের যথার্থতা এবং উপযোগিতা রয়েছে কি-না, তা স্থানীয় ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিশ্চিত করা। দরপত্র ও চুক্তিপত্রে বর্ণিত ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন নিশ্চিত করতে হবে। এতে আরো বলা হয়, প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে রক্ষণাবেক্ষণের নামে এবং মেরামতকাজে নি¤œমানের মালামাল যাতে ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে। প্রকল্পের নির্মাণ, সংস্কার, মেরামত কার্যাদি সম্পন্নের পরবর্তী একটি যৌক্তিক সময় পর্যন্ত কাজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিজ খরচে বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত করতে হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়ে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি যাতে না হয় সে লক্ষ্যে প্রধান কার্যালয়ে একটি টেলিফোনিক অভিযোগকেন্দ্র রাখা এবং ক্রয়কার্য যথাযথ হচ্ছে কি-না তা মনিটরিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক শক্তিশালী টিম গঠন করতে হবে। নি¤œমানের মালামাল সরবরাহ রোধে শিডিউল রেটের সঙ্গে বাজারমূল্যের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বা অধিক হলে সে প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখার কথাও প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। প্রকল্প শেষ হলে প্রকল্পের গাড়ি সরকারি পরিবহন পুলে জমা দেয়ার বিধান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি জমা দেয়া হয় না। ফলে গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহারে অনিয়ম দেখা দেয়। এ বিষয়ে নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। বিল চূড়ান্ত করার আগে সোশ্যাল অডিটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীন প্রকৌশল কার্যক্রমসংশ্লিষ্ট সব অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা সংস্থার প্রধানদের ২৭ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে ৫৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট এডিপির আকার হচ্ছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের সাত মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তাও আবার এটি গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ২৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৩ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে দুই হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছিল ৩৯ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা শতাংশের দিক থেকে ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এডিপির বাস্তবায়ন শুধু টাকার অঙ্কে বিচার করলে হবে না। যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তা সঠিকভাবে হয়েছে কি-না, তা দেখতে হবে। অন্যদিকে যারা বাস্তবায়ন করতে পারছে না, তাদের বাস্তবায়ন না করতে পারার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখার পর সরকার পরবর্তী বছরের প্রস্তুতির কথা বলে। কিন্তু পরবর্তী বছরের শুরু থেকেই আবার বাস্তবায়নের ধীরগতি দেখা দেয়। ফলে বাস্তবিক মানসম্পন্ন এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। এডিপির আওতাধীন বড় প্রকল্পগুলো বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় যে, ব্যয় বেশি করা হচ্ছে। ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রকল্প দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প দীর্ঘায়িত হওয়ায় ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App