×

মুক্তচিন্তা

বনানীতে ফের ধর্ষণ!

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:৩৭ পিএম

বনানীতে ফের ধর্ষণ!

অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের বিচারাধীন করায় পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শনিবারের ঘটনায় দুজন আসামিকে ধরা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত আটক করতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হোটেল, গেস্ট হাউস, পার্টি সেন্টারগুলো যেন সঠিক প্রক্রিয়ায় ভাড়া ও নিয়মানুগ পরিচালনা করা হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে।

ফের ঘটল জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা। গত শনিবার রাজধানীর বনানীর একটি গেস্ট হাউসে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ডেকে নিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণ করে কয়েক যুবক। যদিও সেদিন আদৌ কারো জন্মদিন ছিল কি-না সে প্রশ্নের জবাব মিলছে না। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সোমবার তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এর আগে গত বছরের ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছিল। এরপর একই বছরের ৪ জুলাই বনানীর একটি বাসায় জন্মদিনের কথা বলে ডেকে নিয়ে একই কায়দায় তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওইসব ঘটনায় কয়েক জন আসামি আটক ও বিচারাধীন আছে। একই কায়দায় অপরাধ ঘটেই চলেছে? একই রকম ঘটনা একই জায়গায় পুনরাবৃত্তির কারণ কি? তবে কি বনানী এলাকা ধর্ষকদের জন্য অভয়ারণ্য?

ধর্ষণ এখন প্রতিদিনের খবর। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন করা হলেও ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ থামছে না। এর আগে রাজধানীর ব্যস্ত রাজপথ থেকে তুলে নিয়ে চলন্ত মাইক্রোবাসের মধ্যে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা, নারায়ণগঞ্জে এক গার্মেন্টকর্মী বাসে বাসচালকসহ বাসকর্মীদের দ্বারা ধর্ষিত হওয়া ঘটনাও আলোড়ন তৈরি করেছিল। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা হলো, জাতীয়ভাবে বড় প্রতিবাদ না হলে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন জোরালো ভ‚মিকা দেখা যায় না। সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদদপুষ্টরাই ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এ রকম অভিযোগ অজস্র। একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের এই ভূমিকা, অন্যদিকে সামাজিক প্রতিরোধও জোরালো নয়। এখনো কোথাও কোথাও গ্রাম্য সালিশে ধর্ষিতাকেও সমান দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তির ফতোয়া দেয়া হয়।

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একই কৌশলে একাধিক ধর্ষণের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বনানীর হোটেল, গেস্ট হাউসগুলো নিয়ম অনুসরণ করছে না বলে অভিযোগ আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব নিশ্চয়ই রয়েছে। রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মতো এত আলোচিত ঘটনার পরও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়েনি- এটাই বিস্ময়ের। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে। এর জন্য দরকার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হওয়া। অর্থ-প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে যেন অপরাধীরা বিচার এড়াতে না পারে সেটা নিশ্চিত করাও জরুরি। দুর্বল ভিকটিমদের পক্ষে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের বিচারাধীন করায় পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তি-সংগঠনকে। শনিবারের ঘটনায় দুজন আসামিকে ধরা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত আটক করতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হোটেল, গেস্ট হাউস, পার্টি সেন্টারগুলো যেন সঠিক প্রক্রিয়ায় ভাড়া ও নিয়মানুগ পরিচালনা করা হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App