×

বিনোদন

প্রতিনিয়তই পলিটিক্সের শিকার হচ্ছি

Icon

মেলা প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৩৮ পিএম

প্রতিনিয়তই পলিটিক্সের শিকার হচ্ছি
২০০৯ সালে এনটিভি আয়োজিত সুপার হিরো সুপার হিরোইন প্রতিযোগিতা থেকে সিনেমা পেয়েছিল আসিফ ইমরোজকে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত নতুন ছবি ‘ভালো থেকো’। গত নয় বছরের পথচলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘মেলা’র কাছে পুরোপুরি অকপট রোজ। শুনলেন এম রহমান
সিনেমায় কতদিন হলো? ২০১২ থেকে কাজ করছি। কমল সরকারের ‘ভালোবাসা কেন যে কাঁদায়’ থেকে শুরু। ওই সিনেমার কোনো খবর এখন নেই বললেই চলে। মাঝেমধ্যে শোনা যায় যে, রিলিজ হবে। পরে আর হয় না। দেখা যাক ছবিটির কী হয়। আপনার এই অর্ধযুগের ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি কতখানি সন্তুষ্ট? আমরা শুনতে পাই তরুণ নায়করা পলিটিক্সের শিকার হোন। আপনাকে এ ধরনের পলিটিক্সের মুখে পড়তে হয়েছে কী? কোনোমতেই সন্তুষ্ট হতে পারি না। কারণ আমাদের সিনেমার অবস্থা সবাই জানেন। আমরা নতুন আর্টিস্টরা প্রতিনিয়তই পলিটিক্সের শিকার হচ্ছি। মনে করেন আমাকে যেখানে নেয়া উচিত সেখানে আপনারা কাকে নিচ্ছেন? যারা বাবার জমি বিক্রি করে ৩০ লাখ/৪০ লাখ টাকা আপনাদের হাতে এনে দিচ্ছে আপনারা তাদের নিচ্ছেন। আপনি আমাকে কোয়ালিটি সম্পন্ন হওয়ার পরও কেন নিচ্ছেন না? এই কারণে নিচ্ছেন না। আমার জায়গায় এসে যারা আপনার হাত গরম করছে, আপনি তাদের নিচ্ছেন। আপনি কাদের দিকে আঙুল তুলছেন? পরিচালকদের দিকে নাকি প্রযোজকদের দিকে? অনেক পরিচালক আছে যারা আর্টিস্টদের নিয়ে প্রযোজকের কাছে যায়। প্রযোজকের সঙ্গে বসে তাকে কনভিন্স করে আর্টিস্টকে সুযোগ দিয়ে দিচ্ছে। আর যদি আর্টিস্ট সরাসরি প্রযোজকের কাছে যায় তাহলে অন্য বিষয়। প্রযোজক আরো কিছু টাকা লাগিয়ে তাকে লঞ্চ করছে। যেখানে আমাদের মতো হিরোদের হওয়া উচিত সেখানে আমরা থাকতে পারছি নাি। এটাই খুব দুঃখজনক একটা ব্যাপার। অনেকেই আপনাকে সম্ভাবনাময় নায়কের কাতারে ফেলেন। তারপরও কেন ব্যস্ত নায়কের কাতারে আসতে পারছেন না? কিছু কিছু বিষয় এটাকে ভাগ্যের লিখন বলব কিনা জানি না। আমি যে ৫টা সিনেমা করেছি তার মধ্যে একটা রিলিজ হয়েছে ২০১৪ সালে- ‘দবির সাহেবের সংসার’। আরেকটা রিলিজ হবে ‘ভালো থেকো’। বাকি যে সিনেমাগুলো আমি করেছি আমি শুনতে পেয়েছি পরিচালক-প্রযোজকের দ্বন্দ্ব। কী নিয়ে তাদের দ্ব›দ্ব তা আমি জানি না। এই দ্বন্দ্বটা কাটিয়ে যদি তারা ওই সময়টাতে ছবি রিলিজ দিয়ে দিত, আমার পথচলাটা মসৃণ হয়ে যেত। আরো সিনেমায় আমি কাজ করতে পারতাম। এখন যে ব্যস্ততা তারচেয়ে ব্যস্ততা তিনগুণ বেড়ে যেত। তাদের মধ্যে কী সমস্যা হয়েছিল আমি জানি না। প্রথম ছবিটা, তারপর ‘মায়ানগর’, সর্বশেষ ‘ময়না পাখির সংসার’ যার প্রডিউসার সুইসাইড করলেন, এই যে ছবিতে প্রবলেমগুলো, এসব আমাকে এগিয়ে যেতে দেয়নি। আপনি কী মনে করেন ক্যারিয়ারের শুরুতে কোনো ভুল চরিত্র নির্বাচন আপনাকে পিছিয়ে দিয়েছে? না। আমার চরিত্র নির্বাচনগুলো পারফেক্ট ছিল। শোনা যায়, বিশেষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দুষ্কর। এই বিষয়টি মানেন কী? ১০০%। এখন মনে করেন আমার সেই সামর্থ্য নেই একটা প্রডাকশন হাউস আমাকে লঞ্চ করবে। আমাকে যদি সেভাবে লঞ্চ করতে না পারে আমি তো আর্টিস্ট নিজেকে নিজে লঞ্চ করতে পারি না। এটা তো নিয়ম না। আমরা আর্টিস্ট। আপনারা ক্যামেরা অন করবেন আমরা সুন্দরভাবে আমাদের ভেতরের প্রতিভাগুলো জাহির করব। দর্শক ভালো লাগলে নেক্সট ছবিতে চাইবে নয়তো চাইবে না। কিন্তু দেখেন ইদানীং কী হচ্ছে। আমরা নিজেরা নিজেদেরই পুশ করছি। দর্শক চাচ্ছে না, হাতে আমার ১০টা সিনেমা ১৫টা সিনেমা। একের পর এক সিনেমা ফ্লপ তারপরও সিনেমা পাচ্ছি। এগুলোর কারণ কী? আমি অমার অভিনয়ের জায়গা থেকে ১০০ দিতে পারব। এর বাইরে আমি কিছু পারব না। অবশ্যই একটা প্রডাকশন হাউস যদি চায় হিরোকে তুলতে পারে। সেই আর্টিস্টের ভেতরে যোগ্যতা থাকতে হবে। তখনই তাকে তুলতে পারবে। পারবার পুশ করলে দর্শক আসলে নারাজ হয়। এই জিনিসগুলো আমরা বুঝেও বুঝি না। ইদানীং বেড়েছে যৌথ প্রযোজনা। নায়ক আসছে, নায়ক যাচ্ছে। দুই বাংলার আদান-প্রদানের মাঝখানে আপনার অবস্থান কোথায়? যারা একটা সময় মানে আজ থেকে ৬/৭ বছর আগে এসেছেন, এখনকার পলিটিক্স তখন এতটা তান্ডব সৃষ্টি করতে পারেনি। তখন অনেকের কোয়ালিটি দেখে তাকে চান্স দেয়া হতো। কিন্তু এখন যে বিষয়টা হয়েছে, যে প্রবলেমটার কথা আগে আমি বললাম, এটা প্রচন্ড তান্ডব সৃষ্টি করেছে। সব জায়গায়ই এই প্রবলেমটা আছে। তারাই সেই জায়গাতে চান্স পাচ্ছে যারা নিজেদের নিজেরা পুশ করতে পারছে। এ ছাড়া অন্য কেউ কাজ পাচ্ছে বলে আমি মনে করি না। আর তারাও পাচ্ছে যারা আগে থেকে নিজেদের প্রমাণ করেছে। মানে সেই ৬/৭ বছর আগে। সেই চান্সটা তো আমরা পাইনি। তখন যদি আমার সিনেমাগুলো রিলিজ হতো সেই জায়গাটাতে আমি যেতে পারতাম। এখন সেই ধরনের চান্স পাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি কোনো মিরাকল ঘটে... ‘ছেলেটা তো অনেক ভালো করছে, তাকে চান্স দেয়া যাক...’ তবেই কিছু একটা হতে পারে। এখন যারা কাজ করছেন অর্থাৎ আপনার সমসাময়িক নায়ক তাদের মধ্যে কাদের অনস্ক্রিনে আপনার ভালো লাগে? জানতে চাইছি নতুনদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কেমন? বর্তমানে যারা কাজ করছেন, শাকিব-শুভ বাদে যদি আপনি বলতে বলেন, সত্যি কথা বলতে কিছু ছেলেকে আমি দেখেছি। তারা কিছু শর্টফিল্ম করেছে, ইদানীং সিনেমা করছে। এরা অনেক ট্যালেন্টেড। এ ছাড়া আর যারা আছে একজনের কাজও আমার ভালো লাগে না। আমার কাছে ন্যাকামি মনে হয়। আমার কাছে ওভারএক্টিং মনে হয়। কোন জায়গায় কোন চরিত্র কীভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে, ডান্স থেকে শুরু করে ডায়লগ ডেলিভারি পর্যন্ত, সব মিলিয়ে তারা নায়ক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। তারপরও তারা কীভাবে কাজ করছে আমার বোধগম্য নয়। আপনি যে কথাগুলো বলছেন, যেভাবে বলছেন, এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর অনেকেই আপনার ওপর রুষ্ট হতে পারে। হোক। আমি সত্য কথা বলছি। তারা ক্ষুব্ধ হলে আমার কিছু করার নেই। এখানে একটা কথাও আমি মিথ্য বলিনি। সিনেমার বাজার মন্দা। হাতে ছবি কম। এ অবস্থায় অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেয়ায় কোনো আফসোস এখন মনের মধ্যে কাজ করে? সবচেয়ে বেশি আফসোস হয় আমি আমার প্রতিভার ১০০% এই ৬/৭ বছরে দেখাতে পারলাম না। কোনো একটা জায়গায় আমার শতভাগ দিতে পরলাম না। কোনো সিনেমাতে ‘রোজকে ১০০-তে ১০০ দেখেছি’ এই কথাটা কেউ বলতে পারবে না। আমি নিজেই তো স্বীকার করি না এই জিনিসটা। বাংলাদেশে কেউ আমাকে এখন নপর্যন্ত ভাঙতে পারেন না। এই জিনিসটাই আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে। প্রফেশন হিসেবে নিলাম এই যে কষ্টটা আছে, তারচেয়ে কষ্ট আশিভাগ বেশি নিজেকে মেলে ধরতে না পারার কষ্ট। আমি ভালো অ্যাকশন করতে পারি, আমি ভালো ডান্স করতে পারি, আমি ভালো অ্যাক্টিং করতে পারি, আপনারা কিছু আমার ভেতর থেকে বের করতে পারলেন না। যতটুকু বের করছেন আমার ক্ষুধাটা মেটেনি। ক্ষুধাটা যে দিন মিটবে, আমি নিজেকে ১০০ ভাগ দেখাতে পারব, তখন যদি আমি ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিদায় নেই, তাও আমার কোনো কষ্ট থাকবে না। ‘ভালো থেকো’ আপনার অভিনয়ের ক্ষুধা কতটুকু মেটাতে পারল? ছবিটি সম্পর্কে আপনার আশাই বা কতটুকু? জাকির হোসেন রাজু স্যার যখন আমাকে ডাকেন, তখন তিনি মনে মনে ভেবে নিয়েছিলেন, রোজ হয়তো সিনেমাটা করবে না। তারপরও যেভাবে হোক রোজকে কনভিন্স করে ফেলবেন। তিনি আমার ওস্তাদ। তার কথা আমি কোনোভাবে ফেলতে পারি না। আমি একটু আমতা আমতা করছিলাম, এরকম তো আমি করি না। কেমন কী হবে। তিনি বললেন, এখানে তোর দুইটা গান আছে। ক্যারেক্টারটা এরকম এরকম। ক্যারেক্টারটা ওইভাবে ব্রিফ করেননি। তার ওপরে আমার বিশ্বাস ছিল যে, তিনি যেটা বলবেন সেটাই হবে। আমি চিন্তা করলাম দুটা গান যেহেতু আছে, স্ট্রং পারসোনালিটি আছে ক্যারেক্টারের মধ্যে, আমি রাজি হয়ে যাই। পরে একটা প্রবলেম হয়েছে। গান আমাকে একটা দেয়া হয়েছে। আমাকে যে স্ক্রিপ্ট দেয়া হয়েছিল সেটা এখনো আমার বাসায় আছে। আমি মাঝেমধ্যে দেখি। কষ্ট পাই যে এখানে দুটা গান ছিল একটা গান কেটে দেয়া হয়েছে। কেন কেটে দেয়া হযেছে আমি জানি না। ‘দবির সাহেবের সংসারে’ আমাকে দর্শকরা পজিটিভলি নিয়েছে। এবার যেটা হয়েছে আমার মতে সেটা ঠিক হয়নি । শুধু কী গানের ব্যাপারেই আপনার আক্ষেপ? নাকি আরো অতৃপ্তি আছে? ট্রেলার, পোস্টার, এসব কিছু দেখলে মানুষ বোঝে যে, এটা লিড ক্যারেক্টার এটা সাপোর্টিং ক্যারেক্টার। একটা কষ্ট আমার লেগেছে যে, সব জায়গায় আমাকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, আমাকে এরচেয়ে শক্তভাবে দেখানো যেত। বাকিটা দর্শক বলবে। তারা আমাদের পারফরমেন্স কতটা নেবে কতটা পছন্দ করবে, তারাই বলবে। তারাই বলুক আমাকে কতটা প্রাধান্য দেয়া উচিত ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App