×

মুক্তচিন্তা

সব কর্মক্ষেত্রেই বেতন বৈষম্য দূর করা উচিত

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:২৮ পিএম

সব কর্মক্ষেত্রেই বেতন বৈষম্য দূর করা উচিত। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেতনের ব্যবধান হবে তিন-চার ধাপের- এটা যৌক্তিক হতে পারে না। কারণ হিসেবে যোগ্যতা, নিয়োগ প্রক্রিয়ার রকমফেরসহ যেসব ম্যরপ্যাঁচ দেখানো হচ্ছে, সেগুলোই বা থাকবে কেন। আমরা মনে করি নিয়োগ, পদোন্নতি, বেতন সবকিছুই হতে হবে অভিন্ন নীতির ভিত্তিতে।

বেতন স্কেলে বৈষম্য হ্রাসের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা গত শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন করছিলেন। এই অনশনে সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক অংশ নেন। গতকাল অনশনের তৃতীয় দিনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে অনশন ভঙ্গ করেন সহকারী শিক্ষরা। অনশনকারী সহকারী শিক্ষকদের দাবি তাদের বেতন প্রধান শিক্ষকের চেয়ে তিন ধাপ নিচে থাকতে পারে না, এটা এক ধাপ নিচে করা হোক। অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ গ্রেডে হলে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১ গ্রেডে ধরা হোক। বেতন বৈষম্য কমানোর এই দাবিকে অযৌক্তিক বলার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষক সমাজের একটা বড় অংশ অনশন করবেন, অথচ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এটিকে একেবারেই আমলে নেবেন না, এটা দুঃখজনক। যাই হোক শেষ পর্যন্ত দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে শিক্ষকরা অনশন ভঙ্গ করেছেন- এটা স্বস্তির বিষয়।

অস্বীকার করা যাবে না যে, আমাদের দেশে সরকারি চাকুরেদের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে বেতন বৈষম্য প্রকট। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়, যাতে বেতন-ভাতাও বাড়ে। একইসঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল এক ধাপ উন্নীত করা হয়। এতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড-১১ এবং প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১২-এ হয়। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১৪ এবং প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১৫তে উন্নীত হয়। সে মোতাবেক, বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের তিন ধাপ নিচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষদের বেতন। এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১০তে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। এটা বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান হবে চার ধাপের। এই বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই দেনদরবার করে আসছেন। আশানুরূপ সাড়া পেতে ব্যর্থ হয়েই তারা অনশনের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। সরকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শিক্ষকদের অনশনে বসতে বাধ্য হওয়াও আমাদের জন্য লজ্জাকর। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে তিন লাখ শিক্ষক আছেন। এদের একটা বড় অংশ আন্দোলনে। কয়েকদিন পরই বই উৎসব এবং নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। এ সময় বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের ক্লাসে অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হত। ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের যেমন তেমনই শিক্ষকদেরও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন আমরা মনে করি। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সরকার ও শিক্ষক সমাজ একটা যৌক্তিক অবস্থানে আসতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা চাই, অনতিবিলম্বে উদ্ভত সংকটের সমাধান হোক।

আমরা মনে করি, সব কর্ম ক্ষেত্রেই বেতন বৈষম্য দূর করা উচিত। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেতনের ব্যবধান হবে তিন-চার ধাপের- এটা যৌক্তিক হতে পারে না। কারণ হিসেবে যোগ্যতা, নিয়োগ প্রক্রিয়ার রকমফেরসহ যেসব ম্যরপ্যাঁচ দেখানো হচ্ছে, সেগুলোই বা থাকবে কেন। আমরা মনে করি নিয়োগ, পদোন্নতি, বেতন সবকিছুই হতে হবে গ্রহণযোগ্য অভিন্ন নীতির ভিত্তিতে। জটিলতার নিরসনে শিক্ষক নিয়োগে পৃথক কর্মকমিশন গঠনের বিষয়টিও সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আনা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App