iPhone 8 এবং iPhone X এর খুঁটিনাটি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৪:১২ পিএম
অ্যাপল ২০১৭ সালে iPhone 8 ও iPhone X (আইফোন টেন) নামের দুটি ফোন বাজারে ছাড়ছে। এরই মধ্যে ২২ সেপ্টেম্বরে বাজারে এসেছে iPhone 8, নভেম্বরের ৩ তারিখে আসছে iPhone X। স্মার্টফোনের জগতে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে ফোন দুটো। বিশেষ করে iPhone X নিয়ে মানুষের কৌতূহলের সীমা নেই। অ্যাপল দীর্ঘ ১০ বছরের পথচলায় এই প্রথম তাদের কোনো স্মার্টফোনের ডিজাইনে এত বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। চলুন, অ্যাপল পরিবারের এই নতুন দুই সদস্যের সাথে পরিচিত হওয়া যাক।
ডিসপ্লে
নতুন কোনো স্মার্টফোন নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই আসে ডিসপ্লের কথা। নতুন এই ফোন দুটির ডিসপ্লে হবে এরকম:- iPhone X- ৫.৮ ইঞ্চি, ১৮.৫:৯ ট্রু টোন OLED, ২৪৩৬ x ১১২৫ পিক্সেলস (৪৫৮ ppi), ৮২.৯% স্ক্রিন-টু-বডি রেশিও।
- iPhone 8- ৪.৭ ইঞ্চি, ১৬:৯ ট্রু টোন LCD, ১৩৩৪ x ৭৫০ পিক্সেলস (৩২৬ ppi), ৬৪.৬% স্ক্রিন-টু-বডি রেশিও।
ডিজাইন
iPhone X-এর স্ক্রিন সাইজের সাথে iPhone 8-এর স্ক্রিন সাইজের তফাৎ লক্ষ্য করলে মনে হবে, iPhone X নিশ্চয়ই বেশ বড় দেখতে কোনো স্মার্টফোন। কিন্তু অ্যাপল এখানে ক্রেতাদের জন্য চমক রেখেছে। কী সেই চমক? সেটি ফোন দুটোর বডি সংক্রান্ত তথ্য দেখলে আন্দাজ করা যায়।- iPhone X- এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা যথাক্রমে ১৪৩ x ৭০.৯ x ৭.৭ মিমি (৫.৬৫ x ২.৭৯ x ০.৩০ ইঞ্চি)এবং ওজন ১৭৪ গ্রাম
- iPhone 8- এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা যথাক্রমে ১৩৮.৪ x ৬৭.৩ x ৭.৩ মিমি (৫.৪৫ x ২.৬৫ x ০.২৯ ইঞ্চি) এবং ওজন ১৪৮ গ্রাম
- iPhone 8 Plus-এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা যথাক্রমে ১৫৮.৪ x ৭৮.১ x ৭.৫ মিমি (৬.২৮ x ৩.০৭ x ০.৩২ ইঞ্চি) এবং ওজন ২০২ গ্রাম।
পারফর্মেন্স
বাহ্যিক বিষয় নিয়ে অনেক কথা হলো। এবার আলোচনা করা যাক ফোন দুটির পারফর্মেন্স নিয়ে। iPhone X ও iPhone 8 দুটোতেই রয়েছে- Apple A11 বায়োনিক চিপসেট, সিক্স কোর CPU, সিক্স কোর GPU ও M11 মোশন কো-প্রসেসর। পার্থক্য রয়েছে র্যামে। iPhone X-এ থাকছে ৩ জিবি র্যাম। অন্যদিকে iPhone 8- এর র্যাম ২ জিবি। কারণ iPhone 8-এর ডিসপ্লে তুলনামূলক কম রেজুলেশনের এবং এতে আছে সিঙ্গেল লেন্সের ক্যামেরা। তাই এই র্যামের পার্থক্য ফোন দুটির সামগ্রিক পারফর্মেন্সে বেশ ভাল প্রভাব রাখবে। অ্যাপলের দাবী অনুযায়ী, তাদের নতুন A11 চিপসেটটি পূর্ববর্তী A10 চিপসেটের চেয়ে ২৫% দ্রুত CPU পারফর্মেন্স ও ৩০% দ্রুত GPU (গ্রাফিক্স) পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম। এছাড়া মাল্টিটাস্কিংয়ের ক্ষেত্রে ৭০% বেশি দ্রুতগতি দিতে সক্ষম এই নতুন চিপসেট। কিন্তু ‘বায়োনিক’-এর ব্যাপারটি কী? iPhone X এখানেই অনন্য! অ্যাপল বিতর্কিতভাবে iPhone X থেকে টাচ আইডি/ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম সরিয়ে নিয়ে নতুন একটি সিস্টেম সংযুক্ত করেছে। অ্যাপলের ভাষ্যমতে, এটি দ্রুতগতি সম্পন্ন ও অনেক নিরাপদ।ফেইস ও টাচ আইডি সিস্টেম
এমন নয় যে, ফেইস আইডি তথা ফেসিয়াল রিগনিশন সিস্টেম এবারই প্রথম বাজারে আসছে। এর আগে স্যামসাং-ও এটা বাজারে এনেছিল, কিন্তু খুব একটা মানসম্মত কিছু দিতে পারেনি তারা। কিন্তু এই বায়োনিক চিপের মাধ্যমে iPhone X-এ নতুন সেন্সর যুক্ত হয়েছে। ফেইস স্ক্যানারে এটির অবস্থান ফোনের সামনে; ডিসপ্লের ঠিক উপরে, মাঝ বরাবর। এই সেন্সরের সাহায্যে iPhone X ব্যবহারকারীর চেহারার থ্রিডি ম্যাপ তৈরি করতে পারবে। অ্যাপলের দাবী, সেটি এতটাই দক্ষ ও সুচতুর হবে যে, সেই ব্যক্তির ছবি দিয়ে কিংবা ব্যক্তির চেহারার নকল করে বানানো মুখোশ পরেও সিস্টেমকে ধোঁকা দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বায়োনিক চিপ একটি নিউরাল ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ করে, যেটি নিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ বিলিয়ন অপারেশন করতে সক্ষম। এই ইঞ্জিন ব্যবহারকারীর চেহারা সম্পর্কে ‘শিখে’ নিতে পারে! ব্যবহারকারী যদি চোখে সানগ্লাস পরে, মাথায় হ্যাট দেয় কিংবা যদি তার গালে দাড়িও গজায়, এই ইঞ্জিন সেটি বুঝতে পারবে। নতুন এই প্রযুক্তি কতটা ভালভাবে কাজ করবে, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে অ্যাপল নিশ্চয়তা দিয়েছে, তারা ফোন থেকে ব্যবহারকারীর কোনো ফেসিয়াল ডেটা সংগ্রহ করবে না। সমস্ত তথ্য ফোনেই থেকে যাবে। অন্যদিকে iPhone 8-এ ফেইস আইডি সিস্টেম না থাকলেও টাচ আইডি তথা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারটি থাকছে। অর্থাৎ দুটো সুবিধা একই ফোনে ব্যবহারকারী উপভোগ করতে পারবে না। তাকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। ফেইস আইডির জন্য iPhone X, টাচ আইডির জন্য iPhone 8।ক্যামেরা
অ্যাপলের নতুন দুই স্মার্টফোনের মধ্যে অন্যতম বড় পার্থক্য এসেছে ক্যামেরায়। দুটো ফোনেই ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা থাকলেও iPhone X-এর ডুয়েল ক্যামেরায় ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ও টেলিফটো লেন্সের বাড়তি সুবিধা থাকছে। এই বাড়তি সুবিধার কারণে বেশ ভাল জুমিং করা সম্ভব হবে। এছাড়াও iPhone X-এর টেলিফটো লেন্সের অ্যাপারচার কম, মাত্র f/2.4, সাথে থাকছে অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন সিস্টেম (OIS) এবং পোর্ট্রেট মোড। এগুলোর একটিও iPhone 8-এ নেই। ফ্রন্ট ক্যামেরার ক্ষেত্রে, দুটো ফোন ৭ মেগাপিক্সেল, অ্যাপারচারও একই f/2.2; তবে iPhone X-এ নিজের চেহারা ব্যবহার করে থ্রিডি ইমোজি তৈরি করার সুযোগ থাকছে। এই অপশনের নাম দেওয়া হয়েছে অ্যানিমোজি, যেটি iPhone 8-এ নেই। এছাড়া দুটো ফোনের মধ্যে আর বাড়তি কোনো পার্থক্য নেই। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, iPhone 7 ও iPhone 7 Plus-এর ক্যামেরাও প্রায় একই স্পেসিফিকেশনের। তবে এখানেও পার্থক্য গড়ে দিয়েছে A11 বায়োনিক চিপসেট। এই চিপে ইমেজ সিগন্যাল প্রসেসর (ISP) রয়েছে, ফলে এটি পিক্সেল প্রসেসিং ও কম আলোয় ভাল অটোফোকাস করবে ও নয়েজ কমিয়ে দেবে। ফেইস আইডি সেন্সর থাকায় iPhone X ফ্রন্ট ক্যামেরাতেও পোর্ট্রেট মোডের সুবিধা দিতে পারবে। যেসব প্রাহকের অপটিক্যাল জুম ও পোর্ট্রেট মোড নিয়ে মাথাব্যথা নেই, তারা মূল্য বিবেচনায় নিশ্চিন্তে iPhone 8-কে এগিয়ে রাখতে পারেন। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, স্মার্টফোন ক্যামেরার জগতে সাম্প্রতিক সময়ে স্যামসাং ও গুগলের ফোনগুলো যেরকম সুনামের সাথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, আইফোন কি এবার তাদের সাথে পাল্লা দিতে পারবে?ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং সিস্টেম
স্মার্টফোনে যতই নতুন অপশন আপগ্রেড আসুক না কেন, ব্যাটারি লাইফে যদি সেই মোতাবেক উন্নতি না আসে, তাহলে ঠিক জমে না। হতাশাজনক ব্যাপার হলো, iPhone 7-এর ব্যাটারি লাইফ যা ছিল, iPhone 8-এ তা-ই থাকছে। তবে পরিবর্তন এসেছে iPhone X-এ। পরিবর্তনটা খুব বড় না হলেও, অ্যাপল দাবি করছে, iPhone X ফোনটির ব্যাটারি চার্জ iPhone 7-এর চেয়ে দুই ঘণ্টা বেশি সময় টিকবে। তবে পরিস্কার করে কোনো সংখ্যা বা পরিমাণ অ্যাপল জানায়নি। টকটাইম, ভিডিও প্লেব্যাকের ব্যাপারে তথ্য থাকলেও এটির কোনো উল্লেখ নেই তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও। মজার ব্যাপার হলো, এবারই প্রথম অ্যাপল তাদের নতুন দুটো স্মার্টফোনে ওয়্যারলেস চার্জার যোগ করেছে। সাথে থাকছে তারের মাধ্যমে কুইক চার্জিং সিস্টেম। iPhone 7-এ Qi চার্জার ছিল। কিন্তু সেটি মাত্র ৭.৫ ওয়াট করে ধীরগতিতে চার্জ নিতো। তবে এবার মাত্র ৩০ মিনিটে ৫০% চার্জ হয়ে যাবে। এই সুবিধা iPhone X ও iPhone 8 দুটোতেই থাকছে। তবে অ্যাপল কুইক চার্জার ফোনের বক্সে দিচ্ছে না। সেটি গ্রাহককে আলাদাভাবে কিনতে হবে। জানিয়ে রাখা ভালো, কুইক চার্জারের দামও নেহাত কম নয়।মেমোরি স্টোরেজ ও মূল্য
অ্যাপলের নতুন দুটো ফোনেই মেমোরি পাওয়া যাবে ৬৪ জিবি স্টোরেজ থেকে। আগে ৩২ জিবি থেকে শুরু হলেও, এবার সেটি হচ্ছে না। এবার গ্রাহকদেরকে মাত্র দুটো অপশন দিচ্ছে অ্যাপল। ৬৪ জিবি এবং ২৫৬ জিবি। আগের ১২৮ জিবি স্টোরেজ অপশনটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। iPhone 7-এর চেয়ে iPhone 8-এর দাম মাত্র ৫০ ডলার বেশি। তবে আকাশ ছোঁয়া মূল্য ধরা হয়েছে iPhone X-এ।- iPhone X- ৬৪ জিবি (৯৯৯ ডলার বা ৮২,০৯৩ টাকা), ২৫৬ জিবি (১,১৪৯ ডলার বা ৯৪,৪২০ টাকা)
- iPhone 8- ৬৪ জিবি (৬৯৯ ডলার বা ৫৭,৪৪১ টাকা), ২৫৬ জিবি (৮৪৯ ডলার বা ৬৯,৭৬৭ টাকা)