×

মুক্তচিন্তা

ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:০২ পিএম

ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়, অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, লুটপাটের খবরাখবর গ্রাহকদের মনে নানা সংশয় ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। এতে করে আর্থিক খাতে বাড়ছে ঝুঁকি, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের উদাহরণ হিসেবে সর্বশেষ জানা গেল এবি ব্যাংকের নাম। অতি সম্প্রতি দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বড় পরিবর্তনের পর বেরিয়ে আসে দুর্নীতি-অনিয়মের নানা তথ্য।

সাম্প্রতিক কালে ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়, অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, লুটপাটের খবরাখবর গ্রাহকদের মনে নানা সংশয় ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। এতে করে আর্থিক খাতে বাড়ছে ঝুঁকি, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের উদাহরণ হিসেবে সর্বশেষ জানা গেল এবি ব্যাংকের নাম।

অতি সম্প্রতি দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বড় পরিবর্তনের পর বেরিয়ে আসে দুর্নীতি-অনিয়মের নানা তথ্য। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, বিভিন্ন সময়ে বিএনপিকে অর্থ জোগানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আজকের এ পরিণতির জন্য ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোর্শেদ খান ও তার ছেলে ফয়সল মোর্শেদ খানকে দায়ী করা হচ্ছে। গতকালের ভোরের কাগজের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনই তথ্য দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ফয়সল মোর্শেদ খান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিদেশে পলাতক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, তিনি প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মাহিন এন্টারপ্রাইজকে এবি ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন, যার বেশির ভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর ডালিমের মেয়ে স্বস্তি হকের ঢাকার একটি বাড়ি প্রচলিত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে এবি ব্যাংক কিনে নেয়, সেখানেও ফয়সল খানের হাত ছিল। এই অতিরিক্ত অর্থ মেয়ের মাধ্যমে মেজর ডালিমের কাছে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। ফয়সল নিজেও অর্থ পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এবি ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় প্রায় ৫৪ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন কৌশলে পাচার করেন ফয়সল। সম্প্রতি ব্যাংকটির পদচ্যুত চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে ২০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এক কথায় এতদিন হরির লুট চলেছে ব্যাংকটিকে ঘিরে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন দেখা গেছে, নিয়মনীতি না মেনে ঋণ দেয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশের আর্থিক খাতে। ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গত ৯ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দি ফারমার্স ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিস্থিতি কয়েক বছর ধরে খারাপ হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে এসব ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না। এগুলোর সঙ্গে এখন বেহাল তালিকায় যুক্ত হলো এবি ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতে এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেবল আমানতকারী বা ব্যবসায়ীরাই ব্যাংকবিমুখ হবেন না, উৎপাদন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অবশ্য অবস্থার পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো কিছু তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। গত প্রায় দুই বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি বেশ কিছু ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। খেলাপি ও কু-ঋণ আদায়ে আলাদা কোম্পানি গঠন, বড় ঋণখেলাপিদের যৌথভাবে তদারকি করা, দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা এবং ব্যর্থদের সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো খুবই জরুরি। এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হওয়ার আশা রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরিচালনা পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি তার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের যথাযথ নজরদারির অভাবই ব্যাংকিং খাতকে এই নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার বড় চ্যালেঞ্জ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের সামনে। শক্ত হাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App