×

মুক্তচিন্তা

নিয়মনীতির কঠোর প্রয়োগ দরকার

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:৩২ পিএম

গ্যাস সিলিন্ডার সংযোজনের ক্ষেত্রে যথেচ্ছাচার বন্ধ করতেই হবে। মানহীন বা মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার সংযোজন বন্ধ করতে হবে, নির্দিষ্ট সময় পরপর টেস্টিং নিশ্চিত করতে হবে, সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও নজরদারির আওতায় আনতে হবে। গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার সংযোজন সংক্রান্ত নিয়মনীতি মানা নিশ্চিত করতে দ্রুতই উদ্যোগ নিতে হবে, এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করা হলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।

সারা দেশে গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার যুক্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিককালে রাজধানীতে বেশ ক’টি যাত্রীবাহী গণপরিবহনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা আতঙ্ক তৈরি করেছে। মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার, অদক্ষ হাতে সিলিন্ডার সংযোজন করানো, সর্বোপরি এ সংক্রান্ত আইন-কানুন না মানা এবং যথাযথ তদারকির অভাবই এ অবস্থার জন্য দায়ী। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে দেড় লাখেরও বেশি যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহন একেকটি চলন্ত বোমা বিশেষ, যে কোনো সময় ঘটাতে পারে ভয়াবহ প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। কাজেই এদিকে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ মনোযোগ দরকার।

গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে একটি বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। অন্তত ৩০ জন যাত্রী নিয়ে রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের সামনের রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিল মোহাম্মদপুর থেকে খিলগাঁওগামী মিডওয়ে পরিবহনের একটি বাস। সিগন্যাল ছাড়লে বাসটি চলতে শুরু করলেই বাস থেকে ধোঁয়া উড়তে শুরু করে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় নারী-শিশুসহ সব যাত্রী প্রাণ বাঁচাতে হুড়োহুড়ি করে বাসের জানালা ও দরজা দিয়ে নামার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। শেষ তিন যাত্রী নামার আগেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে বাসটিতে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাসে। অল্পের জন্য বেঁচে যান যাত্রীরা। হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে বাসের চালক আতিক মোল্লাসহ চারজন আরোহী দগ্ধ ও আহত হন। দেশের বেশ ক’টি দৈনিকে গতকাল ছাপা হয়েছে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট। এসব রিপোর্ট জানিয়েছে, গত ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর মগবাজার এলাকায় ফ্লাইওভারের ওপর বিকট বিস্ফোরণের পর মনজিল পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগে। ৪ অক্টোবর গুলিস্তান-ডেমরা রুটের আশিয়ান পরিবহনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে। ১৬ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুরের নয়াবাড়ি এলাকায় কুমিল্লাগামী জৈনপুর পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লেগে আহত হন ৩ জন। গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জের ঘিওরে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লেগে দগ্ধ হয় ১৬ যাত্রী। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী, গত তিন বছরে ১৯৪টি গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে পরিস্থিতির ভয়াবহতা।

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে সোয়া দুই লাখের মতো সিএনজিচালিত যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় অতিক্রম করা গাড়ির সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। এগুলোর ৮০ ভাগই পুনঃপরীক্ষা করা হয়নি। সিএনজি নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মান নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার পাঁচ বছর পর পর রিটেস্টের বিধান রয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার নিয়েই এসব যানবাহন রাস্তায় চলাচল করছে। আবার অনেকে খরচ কমানোর জন্য মানহীন যেনতেন কারখানায় গিয়ে গাড়িতে সিলিন্ডার সংযোজন করাচ্ছেন, এটাও ঝুঁকি তৈরি করছে। যানবাহন মালিক, তদারককারী প্রতিষ্ঠান সবার লোভ, অসচেতনতা ও ঔদাসীন্যের ফলেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা।

তাই গ্যাস সিলিন্ডার সংযোজনের ক্ষেত্রে যথেচ্ছাচার বন্ধ করতেই হবে। মানহীন বা মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার সংযোজন বন্ধ করতে হবে, নির্দিষ্ট সময় পরপর টেস্টিং নিশ্চিত করতে হবে, সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও নজরদারির আওতায় আনতে হবে। গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার সংযোজন সংক্রান্ত নিয়মনীতি মানা নিশ্চিত করতে দ্রুতই উদ্যোগ নিতে হবে, এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করা হলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App