×

মুক্তচিন্তা

অনাকাঙ্ক্ষিত, মর্মান্তিক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:১৬ পিএম

সুষ্ঠু তদন্তে হতাহতের কারণ চিহ্নিত হোক এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হোক। এ ঘটনায় আমাদের সবার শিক্ষা হোক। এ ধরনের মর্মন্ত্তদ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে এ রকম আয়োজনে সম্ভাব্য দুর্দৈবের আশঙ্কায় বিপর্যয় মোকাবেলার প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে রাখা হবে- এটাই প্রত্যাশিত।

আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানি উপলক্ষে আয়োজিত মেজবানে পদদলনে ১০ ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। আমরা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানচ্ছি।

গত শুক্রবার ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান নেতা সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সোমবার ছিল প্রয়াত এ নেতার কুলখানি। এ উপলক্ষে চশমা হিলের বাসভবনসহ নগরীর ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় মেজবানি। জানা যায়, মেজবানি আয়োজন পছন্দ করতেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। দলের নেতাকর্মীসহ চট্টগ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিতেন তার মেজবানিতে। প্রিয় নেতার মৃত্যুতে কুলখানি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল মেজবানির। চট্টগ্রামের অন্তত এক লাখ লোককে খাওয়ানোর এ আয়োজনে দাওয়াত পেয়েছিলেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। নগরীর আসকার দীঘির পাড়ে রীমা কমিউনিটি সেন্টারে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মাবলম্বী অমুসলিমদের জন্য মেজবানির আয়োজন করা হয়। সেখানে আসা লোকজন হুড়োহুড়ি করে ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে ১০ জন মারা যান এবং আহত হন শতাধিক। আহত ও নিহতদের সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের। বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, সড়ক থেকে খানিকটা নিচে পাহাড়ের ঢালুতে নির্মিত রীমা কমিউনিটি সেন্টার হলে প্রবেশের মূল পথটি ঢালু। ফলে ফটক খোলার পর বাইরে অপেক্ষমাণ হাজার হাজার মানুষ তাড়াহুড়া করে ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়ে সামনের কয়েকজন ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। কিন্তু পেছনের লোকজন তা বুঝতে না পারায় তারা পড়ে যাওয়া লোকজনকে পায়ে মাড়িয়ে আসতে থাকেন। এভাবে নিচে পড়া লোকজন পদদলিত হন।

অপ্রত্যাশিত এই হতাহতের ঘটনায় এরই মধ্যে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। কেন এ বিপর্যয়? এ ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকা এবং আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেন। যদিও চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার বলেছেন, নিরাপত্তার অভাব হয়নি, অতিরিক্ত মানুষের কারণে এবং ঢোকার সময় হুড়োহুড়ির কারণে অনেকে পড়ে গিয়ে পদদলিত হয়েছেন। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যাপক লোকসমাগমে পদদলনে হতাহতের ঘটনা নতুন নয়। জাকাত নিতে গিয়ে প্রতি বছরই পদদলনে বহু প্রাণহানি ঘটে, তীর্থস্থানে গিয়েও পদদলনের ঘটনা ঘটে। কাজেই এসব অভিজ্ঞতা থেকে এ ধরনের বড় আয়োজনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা মাথায় রেখে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে- এটাই প্রত্যাশিত নয় কি? চট্টগ্রামের ঘটনায় ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে- ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা পালনে উদাসীন ছিলেন। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। এসব অভিযোগের সত্যতা তদন্ত সাপেক্ষ। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তে হতাহতের কারণ চিহ্নিত হোক এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হোক। এ ঘটনায় আমাদের সবার শিক্ষা হোক। এ ধরনের মর্মন্তুদ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে এ রকম আয়োজনে সম্ভাব্য দুর্দৈবের আশঙ্কায় বিপর্যয় মোকাবেলার প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে রাখা হবে- এটাই প্রত্যাশিত। সদিচ্ছা এবং তা বাস্তবায়নে তৎপরতা থাকলে বিপর্যয় এড়ানো নিশ্চয়ই অসম্ভব নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App