×

মুক্তচিন্তা

প্রশ্নফাঁস রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:২৩ পিএম

চিহ্নিত শিক্ষকদের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায়? প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে দুদকের তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন সত্ত্বেও কেন বোর্ড, বিজিপ্রেস, ট্রেজারি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে দায়ী করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় অনীহ তাও আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি, প্রশ্নফাঁস রোধে প্রশ্ন ছাপা ও বিতরণের কাজে জড়িত শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখার সুযোগ নেই।

গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের খবর সংবাদ মাধ্যমে এলেও এবার এর ব্যাপকতা পৌঁছেছে প্রাথমিক স্তরে। গত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর বরগুনা সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণির তিন বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। প্রশ্নফাঁসের সত্যতা পেয়ে সদর উপজেলার ২৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ গতকাল প্রশ্নফাঁসের কারণে নাটোরে ১০২টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা বাতিল করেছে উপজেলা শিক্ষা কমিটি। পরীক্ষা শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে পাওয়া যায় প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণির গণিত পরীক্ষার হাতে লেখা প্রশ্নপত্র। উদ্বেগের কথা হলো প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই মহোৎসব বন্ধে সরকারের কোনো ব্যবস্থাই ফল দিচ্ছে না, বরং শিক্ষামন্ত্রীর অসহায় মুখচ্ছবিই বারবার আমাদের দেখতে হচ্ছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত রবিবারের নীতিনির্ধারণী বৈঠকটিও পরস্পরকে দোষারোপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে, যা আমাদের কোনো স্বস্তির বার্তা দেয় না।

প্রশ্নফাঁস এখন আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটা কালব্যাধি হয়ে দেখা দিয়েছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, পাবলিক পরীক্ষা, চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের বার্ষিক পরীক্ষা কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না প্রশ্নফাঁস চক্রের থাবা থেকে। অথচ শুরুর দিকে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি স্বীকারই করত না সরকার তথা মন্ত্রণালয়। এখন স্বীকার করলেও বাস্তবতা হলো, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের প্রশ্নফাঁস রোধে নেয়া নানা ব্যবস্থার কোনো কার্যকর ফল দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে দুর্র্নীতি দমন কমিশনের তৎপর হওয়া আশার আলো দেখালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দুদকের মতানৈক্য আমাদের ফের হতাশ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে করণীয় নির্ধারণে গত রবিবার সচিবালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা বলে অভিযোগ করে দুদক। দুদকের ‘শিক্ষাসংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিমের’ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষাবোর্ড, বাংলাদেশ সরকারি প্রেস (বিজি প্রেস), ট্রেজারি ও পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ‘অসাধু’ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোচিং সেন্টার, প্রতারক শিক্ষক ও বিভিন্ন অপরাধী চক্রও যুক্ত থাকতে পারেন বলে দুদকের তদন্তকারীদের ধারণা। প্রশ্নফাঁস, নোট-গাইড, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে ৩৯ দফা সুপারিশসহ ওই প্রতিবেদন গত ১৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে পাঠানো হয়। অন্যদিকে শিক্ষকদের ওপর প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় চাপান শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য হলো, কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষকদের লোভ দেখায়, কোনোভাবে প্রশ্নফাঁস করে তাদের শিক্ষার্থীদের ভালো ফল করাতে পারলে কোচিং ব্যবসা ভালো হবে, আয় বাড়বে। এসব লোভের কারণে শিক্ষকরাই কোচিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। তার মতে, কোনো আইন না থাকায় কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায় না। তারা আদালতে গিয়ে ছাড় পেয়ে যায়। মন্ত্রী যেমন বলছেন দুদকও কিন্তু তেমনি শিক্ষকদের একাংশকে দায়ী করছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে দুদক রাজধানীর কোচিংবাজ ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করেছে। আমরা বুঝতে পারছি না, চিহ্নিত শিক্ষকদের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায়? প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে দুদকের তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন সত্তে¡ও কেন বোর্ড, বিজিপ্রেস, ট্রেজারি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে দায়ী করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় অনীহ তাও আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি, প্রশ্নফাঁস রোধে প্রশ্ন ছাপা ও বিতরণের কাজে জড়িত শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখার সুযোগ নেই। প্রশ্নফাঁস রোধ করতেই হবে। এর জন্য ফাঁসের সবক’টা রন্ধ্র বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App