×

মুক্তচিন্তা

সহিংসতা প্রত্যাশিত নয়

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:১৮ পিএম

জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে পারবে। অবাধ-সুষ্ঠু সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপর দেশবাসীর আস্থা জোরালো করবে। তাই রসিক নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রচারণায় ব্যস্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তেজনা। গত বৃহস্পতিবার রাতে সিটির এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে কুপিয়ে জখম করা, শনিবার এক কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও নির্বাচনী সহিংসতার আরো কিছু খবর এসেছে গণমাধ্যমে। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার এই তুঙ্গ সময়ে প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গার রংপুরে অবস্থানকে কেন্দ্র করেও প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনৈতিক শিবিরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ভোটের দিন সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। যা অনাকাক্সিক্ষত ও উদ্বেগজনক।

গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে প্রথম সহিংসতার ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থী মোখলেছুর রহমান তরুর নির্দেশে তার সমর্থকরা একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মনিরুজ্জামান মাসুদকে অপহরণের পর হারাটি গ্রামে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে রাস্তায় ফেলে যায়। পরে স্থানীয়রা মাসুদকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। তরুর বিরুদ্ধে ভোটারদের হুমকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। হুমকি দেয়ার ঘটনায় তরুর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গত শনিবার সকালে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, শনিবার ভোরের দিকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবেদ আলীর নির্বাচনী অফিসে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে। একই দিন অপর এক প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দিনে এবং ভোটের দিন আরো সহিংসতার ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। কোনো কোনো জায়গায় কেন্দ্র দখলের আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা।

এ ছাড়া রসিক নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার রংপুরে অবস্থানের বিষয়টিও এখন আলোচনার তুঙ্গে বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে রাঙ্গা রংপুরে অবস্থান করছেন এবং প্রটোকল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাফেরা করছেন। লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফার হয়ে তিনি ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারের মন্ত্রী হয়ে রাঙ্গার রংপুরে অবস্থানের কারণে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ যে কোনো সময় বিঘ্নিত হতে পারে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারের কোনো মন্ত্রী স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। নির্বাচন প্রভাবিত হয় এমন কিছুও করতে পারেন না। নির্বাচনের ঠিক আগে আগে মশিউর রহমান রাঙ্গার রংপুরে উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা হবে, ক্ষোভ-উত্তেজনা তৈরি করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাঙ্গাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, এটা ইতিবাচক।

জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে পারবে। অবাধ-সুষ্ঠু সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপর দেশবাসীর আস্থা জোরালো করবে। তাই রসিক নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনের সময় যেন কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সেদিকে বিশেষভাবে নজরদারি রাখতে হবে। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। আর সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমন কোনো আচরণ করা ঠিক হবে না, যার কারণে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হয়, সরকারকে সমালোচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App