×

মুক্তচিন্তা

অরক্ষিত গণকবর, বধ্যভূমি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:০৯ পিএম

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকেও জীবন্ত করে রাখতে হবে। যারা যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাদের স্মৃতিচিহ্ন অযত্নে কিংবা অবহেলায় হারিয়ে যেতে থাকবে এটা হতে পারে না। বধ্যভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের একার নয়। মুক্তিযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির পরিবার ও নাগরিকদের উদ্যোগে দেশের বধ্যভূমিগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব।

অযত্ন, অবৈধ দখল, অবহেলা আর উদাসীনতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিগুলো নিশ্চিহ্ন হতে চলছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবরের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা যায়নি। সংরক্ষণ করা হয়নি গণশহীদদের নামের তালিকাও। মহান মুক্তিযুদ্ধের যে কোনো স্মৃতি সংরক্ষণ করা আমাদের জাতিসত্তার জন্যই অপরিহার্য। যে কোনো কারণেই হোক যদি এই বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয় তবে তা দুঃখজনক।

জানা গেছে, রাজধানীর ৭০টি বধ্যভূমির অধিকাংশেই এখন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে আবাসিক ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কাঁচাবাজার ও পাবলিক টয়লেট। আর হাতেগোনা কয়েকটিতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভগুলোও এখন জরাজীর্ণ। তবে দেশের বেশির ভাগ বধ্যভূমিতেই লাগানো হয়নি স্মৃতিফলক। কারণ সরকারি পর্যায় থেকে এ বিষয়ে কোনো জরিপ নেই। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত দেশে মোট ২০৯টি বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ১৯৩টি শনাক্ত করেছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বেশি। বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্যে ১৯৭১ সালে দেশে প্রায় ৫ হাজার ছোট-বড় বধ্যভূমি ছিল। এর মধ্যে সারা দেশে ৯২০টি শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮৮টি নদী ও ৬৫টি ব্রিজ-কালভার্ট শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলোতে শত শত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। রাজধানীতে ৭০টি বধ্যভূমির মধ্যে মিরপুরেই রয়েছে ২৩টি। কিন্তু ২৩টি বধ্যভূমির মধ্যে সংরক্ষিত হয়েছে মাত্র তিনটি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বধ্যভূমির তালিকায় ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় রয়েছে ৩৯টি বধ্যভূমির নাম। উল্লেখযোগ্য এসব বধ্যভূমিগুলো অরক্ষিত। একই চিত্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমিগুলোর। গতকাল ভোরের কাগজে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নওগাঁর আত্রাই নদীর পাড়ে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম আতাইকুলা। যেখানে বসবাস করত সনাতন ধর্মের মানুষ। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ গ্রামের ৫২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তাদের লাশ গণকবর দিয়ে রাখে এখানে। সে সব শহীদের পরিবারগুলো এখন পর্যন্ত পায়নি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের পক্ষে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল ২০০৯ সালে। অবশ্য এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ৩৫টি বধ্যভূমি ও স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু এ কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। দেশে তো আরো অনেক এরূপ স্থান রয়েছে। তাহলে উচ্চ আদালতের রায় মেনে এগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন? জানা যায়, আদালতের রায়ের পর ২০১০ সালের শেষ দিকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সারা দেশের ২০৪টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু ওই চিহ্নিত করা পর্যন্তই। সেগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি আজো। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকেও জীবন্ত করে রাখতে হবে। যারা যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাদের স্মৃতিচিহ্ন অযত্নে কিংবা অবহেলায় হারিয়ে যেতে থাকবে এটা হতে পারে না। বধ্যভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের একার নয়। মুক্তিযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির পরিবার ও নাগরিকদের উদ্যোগে দেশের বধ্যভূমিগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব। তবে সরকারকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App