×

মুক্তচিন্তা

গণতন্ত্র : ভিন্ন দৃষ্টিতে

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:৩১ পিএম

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সব দলের জন্য সমান সুযোগ ও সব দলের অংশগ্রহণে হোক- এটা চাই। তবে এ নিয়ে জাতির চিন্তাশক্তি ও কর্মকৌশল সবটা নিয়োজিত রাখা ঠিক নয়। নির্বাচনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনীতিতে আছে এবং সেদিকে জাতির চিন্তাশক্তি ও শ্রমশক্তি নিয়োগ করা দরকার। ভবিষ্যৎ ভেবে দূরদর্শিতার সঙ্গে চিন্তা ও কাজ করতে হবে।

গণতন্ত্র বললেই সবাই এখন কেবল নির্বাচন বুঝেন। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন, সব দলের জন্য সমান সুযোগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ইত্যাদি কথা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রতিদিন ক্রমাগত প্রচারিত হচ্ছে। মাঝখানে জাতীয় সংসদের চারটি নির্বাচন অরাজনৈতিক নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে দুই বছর জরুরি অবস্থা গিয়েছে। নির্বাচনের বাইরে গণতন্ত্র সম্পর্কে আর কোনো চিন্তাই খুঁজে পাওয়া যায় না। গণতন্ত্র মানে কি কেবল নির্বাচন? পাশ্চাত্য প্রচার মাধ্যম ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোও বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে বারো মাস নির্বাচনের কথা প্রচার করে।

ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতা আন্দোলনের কালে গণতন্ত্র বলে কেবল নির্বাচন বোঝানো হতো না। যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা আন্দোলনের কালে গণতন্ত্র বলে অবশ্যই কেবল নির্বাচন বোঝানো হতো না। ১৯৬০-এর দশকে ছয় দফা আন্দোলনের কালেও গণতন্ত্র বলে অবশ্যই কেবল নির্বাচন বোঝানো হতো না। জাতীয়তাবাদ অবলম্বনে রাষ্ট্র গঠনের গরজ ছিল। সেকালে এ দেশে গণতন্ত্রের সঙ্গে জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্র গঠনের ধারণা যুক্ত ছিল। তখন গণতন্ত্র বলে বোঝানো হতো জনজীবনের সমাধানযোগ্য সমস্যাবলির সমাধান এবং জাতি গঠন, রাষ্ট্রগঠন ইত্যাদি। এসব করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল গঠন এবং দলের নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে সরকার গঠন করে সরকারের মাধ্যমে এসব করা। নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন যেসব কথা বলা হয়, যে বিবাদ-বিসংবাদ দেখা যায়, সেগুলো সেকালে ছিল না। তখন রাজনৈতিক নেতাদের কথাবার্তায় পারস্পরিক সৌজন্য ও উন্নত রুচিবোধের পরিচয় ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কর্মসূচি ও বক্তব্য নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। রাজনীতি ক্ষেত্রে তখন প্রতিযোগিতা ছিল রাষ্ট্র, জাতি ও জনগণের কল্যাণে সবচেয়ে ভালো কর্মসূচি কোন দলের এবং সেই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করা যাবে কীভাবে ইত্যাদি নিয়ে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৯৮০-এর দশক থেকে গণতন্ত্র পরিহার করে তার জায়গায় গ্রহণ করা হয়েছে নির্বাচনতন্ত্র। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করার সামর্থ্যও রাখে না। ব্রিটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে নির্বাচন এক রকম করা হতো। নির্বাচন নিয়ে এত অশ্লীল ভাষা এবং এত অশালীন কাণ্ড কারখানা তখন দেখা যায়নি। একদল যখন অন্যদলকে নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসার কথা বলে, তখন কি তাতে কোনো উন্নত রুচি, গণতান্ত্রিক মানসিকতা, উৎকৃষ্ট রাজনৈতিক চিন্তা ও শুভবুদ্ধির পরিচয় থাকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উঠলেই যে অভিজ্ঞতার প্রকাশ দেখা যায়, তা কি শুভ বুদ্ধির পরিচায়ক? কথিত ওই নির্বাচনের পেছনে কি শুভবুদ্ধি কার্যকর ছিল? ১৯৮৮ সালে এ দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল, ১৯৯৬ সালে এ দেশে ভোটারবিহীন একটি নির্বাচন দ্বারা সরকার গঠিত হয়েছিল। তারপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন! এসব নির্বাচনকে যদি নির্বাচন বলা হয় তাহলে সামনেও এই রকম নির্বাচনই হবে। মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে অবস্থার উন্নতি করা যায় না। এর মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ইত্যাদি গৎবাঁধা কথার এত পুনরাবৃত্তি কেন করা হয়? আর জনসাধারণই বা কেন এত বেহুঁশ হয়ে, ভোট দিতে যায়? জনসাধারণের মধ্যে কি কোনো বোধ-বৃদ্ধি নেই। সারাদেশে খবরের কাগজ পড়েন, টেলিভিশন দেখেন, ফেসবুকে অনলাইনে সক্রিয়, এমন লোকের সংখ্যা তো কম নয়? গণতন্ত্রের নামে তারা কেবল নির্বাচনতন্ত্র নিয়ে আলোচনায় মত্ত থাকেন কেন? যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে চলছে, তা নিয়ে এত সন্তোষের কারণ কি? সন্তোষ ভালো। কিন্তু সন্তোষ যুক্তিসঙ্গত হওয়া চাই তো! এত প্রগতিবিমুখ কেন বাংলাদেশ?

Depoliticization, নিঃরাজনীতিকরণ, বিরাজনীতিকরণ- এই কথাগুলো ১৯৮০-এর দশক থেকেই লোকমুখে আছে। আসলে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রকৃতি কী? ক্ষমতার লড়াই, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের হীন প্রচেষ্টা, ভাঁওতা, হুজুগ, প্রতারণা, ভণ্ডামি ইত্যাদি ছাড়া আর কী আছে এখনকার রাজনীতিতে। এই রাজনীতিকে উন্নত করার প্রচেষ্টা কোথায়? রাজনীতির উন্নতি কি অসম্ভব? গণতন্ত্রে গণতন্ত্র চাই। রাজনীতিতে রাজনীতি চাই।

উন্নত অবস্থায় উত্তীর্ণ হতে হলে প্রথমে আমাদের বোঝা দরকার এই অবস্থা কী করে সৃষ্টি হয়? রাজনীতি থেকে রাজনীতি হারিয়ে গেল কীভাবে? রাজনীতি নিছক ক্ষমতার লড়াইয়ে এবং অর্থসম্পদ অর্জনের প্রচেষ্টায় পর্যবসিত হলো কীভাবে? তারপরে ভাবতে হবে অবস্থার উন্নতিসাধন কী করে করা যাবে? চলমান গোলকধাঁধা থেকে মুক্ত হয়ে ভালোর দিকে যাত্রা আরম্ভ করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তির বিপ্লব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলোপ আর ওয়াশিংটনের কর্তৃত্বে বিশ্বায়ন পৃথিবীতে যুগান্তর ঘটিয়েছে। বাংলাদেশেও ১৯৮০-এর দশক থেকে ঘটে চলছে যুগান্তর। এনজিও ও সিএসও প্রবর্তন, গণতন্ত্রের নির্বাচনসর্বস্ব ধারণা প্রতিষ্ঠা ও নিঃরাজনীতিকরণ, মৌলবাদবিরোধী আন্দোলন, নারীবাদী আন্দোলন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন, মানবাধিকার আন্দোলন, পরিবেশবাদী আন্দোলন, দাতাসংস্থার (donor agency) ও উন্নয়ন-সহযোগী (development partner) রূপে বৃহৎ শক্তিবর্গের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সব ব্যাপারে নিয়ামক হয়ে ওঠা, সাম্রাজ্যবাদী চাপে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাংলাদেশে গণতন্ত্র চাওয়ার জন্য বৃহৎ শক্তিবর্গের স্থানীয় দূতাবাসগুলোতে এবং ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দিষ্ট ডেস্কে ধরনা দেয়া, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার, রাজনীতিতে একটির পর একটি নাগরিক কমিটির দৌরাত্ম্য, নির্বাচনের জন্য অপরাজনৈতিক নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, কৃষি, পোশাকশিল্প, বিদেশে শ্রমিক রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সৈন্য প্রেরণের মাধ্যমে জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি, বহুত্ববাদ ও অবাধ প্রতিযোগিতাবাদের নীতি গ্রহণ, সমাজে মানুষের কেন্দ্রীয় প্রবণতার (central motive of men and women in society) পরিবর্তন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ঘটেছে যুগান্তর। মানুষ বদলে গেছে। আগের মানুষ আর নেই। আগের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশও নেই। এসবের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতি বদলে গেছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিবাদী সংগঠন ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডও বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। অসামাজিক কার্যকলাপ, হত্যা-আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন দ্রুততর গতিতে বেড়ে চলেছে। উৎপাদন ও সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈষম্য ও সামাজিক অবিচার। বিশ্বায়নের নামে সাম্রাজ্যবাদ নতুন প্রতাপে কর্তৃত্ব বিস্তার করে চলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচনসর্বস্ব গণতন্ত্র ও নিঃরাজনীতিকরণ চলছে। সেই ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় থেকে চলছে এই রাজনীতির ধারা। এই ধারার মধ্যে থেকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা মোটামুটি এই রকমই থাকবে- এতে দেশের শতকরা পঁচানব্বই ভাগ মানুষের অবস্থার কোনো উন্নতি হবে না। হত্যা, গুম, অসামাজিক কার্যকলাপ, ধর্ষণ, দুর্নীতি, জুলুম-জবরদস্তি এতে অনিবার্য। এসব থেকে মুক্ত প্রগতিশীল ব্যবস্থায় উত্তীর্ণ হতে হলে অনেক কিছুর পরিবর্তন দরকার। সব পরিবর্তনের মূলে ও অগ্রভাগে দরকার রাজনীতির পরিবর্তন। রাজনৈতিক উন্নত চরিত্র অর্জন করতে হবে। বর্তমানে সব দলই সে চেষ্টা করতে পারে। নতুন দল গঠিতও হতে পারে। দলগুলোকে ভেতর থেকে গড়ে উঠতে হবে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সব দলের জন্য সমান সুযোগ ও সব দলের অংশগ্রহণে হোক- এটা চাই। তবে এ নিয়ে জাতির চিন্তাশক্তি ও কর্মকৌশল সবটা নিয়োজিত রাখা ঠিক নয়। নির্বাচনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনীতিতে আছে এবং সেদিকে জাতির চিন্তাশক্তি ও শ্রমশক্তি নিয়োগ করা দরকার। ভবিষ্যৎ ভেবে দূরদর্শিতার সঙ্গে চিন্তা ও কাজ করতে হবে। গোটা জাতির মধ্যে প্রগতিশীল চিন্তার দারুণ শূন্যতা বিরাজ করছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হবে।

১৯৮০-এর দশকের শুরু থেকে নিঃরাজনীতিকরণের যে প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে তাতে গোটা জাতির মধ্যে বিরাজ করছে রাজনীতিবিমুখতা। কিছু ব্যক্তিকে অগ্রযাত্রী হয়ে এই রাজনীতিবিমুখতার জায়গায় রাজনীতির প্রতি জনমনে অনুরাগ সৃষ্টি করতে হবে। গোটা জাতির মধ্যে বিরাজ করছে জাতীয় হীনতাবোধ। জাতীয় শ্রেষ্ঠতাবোধ জাতির মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। গণরাজনীতি ও নিকৃষ্ট চরিত্রের নেতৃত্ব দিয়ে এটা হবে না। কিছু লোককে উন্নত চরিত্র ও জনগণের জন্য রাজনীতি নিয়ে অগ্রযাত্রীর ভূমিকা- নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে। চলমান রাজনীতি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকলে বড় বড় কথায় কোনো সুফল হবে না। তাতে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হবে মাত্র।

আধুনিক রাষ্ট্রে সরকার গঠিত হয় রাজনৈতিক দল দিয়ে। কথিত সামাজিক আন্দোলন দিয়ে রাজনীতির কাজ চলে না- তাতে জনগণ ভাঁওতা-প্রতারণা ও হুজুগের শিকার হয় মাত্র। রাজনৈতিক কাজের মধ্যে রাজনৈতিক দল গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নেতৃত্ব গঠিত হয় রাজনৈতিক দল দিয়ে। দল গঠনের উপায় ও কার্যপ্রণালি নিয়ে চিন্তা ও চেষ্টা দরকার। অরাজনৈতিক সামাজিক আন্দোলন প্রকৃষ্ট রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।

প্রচলিত গণতন্ত্রকে বলা হয় উদার গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র সমাজের নিচের স্তরের শতকরা পঁচানব্বই ভাগ মানুষের স্বার্থবিরোধী। আমরা যে গণতন্ত্র চাই তা সর্বজনীন গণতন্ত্র, শতভাগ মানুষের গণতন্ত্র। গণতন্ত্র থেকে উন্নয়নকে আলাদা রাখার চিন্তা গণতন্ত্রবিরোধী। রাজনৈতিক দল জাতির আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নতির কর্মসূচি অবলম্বন করে জনমত গঠন করবে এবং গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়িত করবে। জনজীবনের উন্নতির কাজ মূলত জনগণই করবে- রাজনৈতিক দল নেতৃত্ব দেবে মাত্র। নেতৃত্ব থাকবে জনসম্পৃক্ত।

জাতিকে আত্মনির্ভর হতে হবে। আত্মনির্ভরতা আর স্বয়ংসম্পূর্ণতার পার্থক্য বুঝতে হবে এবং তা মনে রাখতে হবে। স্বয়ংসম্পূর্ণতার চিন্তা ভুল। কিন্তু আত্মনির্ভরতার চিন্তা ও কর্মনীতি অপরিহার্য। জাতীয় ঐতিহ্য অবলম্বন করে আত্মনির্ভরতার নীতি নিয়ে চললে উন্নতি অবশ্যম্ভাবী। বাইরের জগত থেকে সাধ্য অনুযায়ী ভালো জিনিস গ্রহণ করতে হবে। বাইরের জগত থেকে গ্রহণ করতে হবে আত্মনির্ভর থেকে। পশ্চিমা সভ্যতার একদিকে আছে তার মহান জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, প্রযুক্তি ও আদর্শ। এসব আমাদের প্রয়োজন ও সাধ্য অনুযায়ী তা গ্রহণ করতে হবে। পাশ্চাত্য সভ্যতার ওপর দিকে আছে উপনিবেশবাদ, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। এগুলো সভ্যতাবিরোধী। পাশ্চাত্য সভ্যতার এই দিকটা আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে চলার ফল অকল্যাণকর হচ্ছে। এই চক্র থেকে বের হয়ে আমাদের স্বাধীন সত্তায় দাঁড়াতে হবে।

উদার গণতন্ত্রের বদলে সর্বজনীন গণতন্ত্রের আদর্শ আমাদের উদ্ভাবন করতে হবে। তাতে দলভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সরকার গঠনকে গ্রহণ করতে হবে। তার জন্য উন্নত চরিত্রের রাজনৈতিক দল গঠনে গুরুত্ব দিতে হবে।

পশ্চিমা সভ্যতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই অবক্ষয়-ক্লিষ্ট। সে সভ্যতা এখন চলছে বিশ্বায়নের নামে সাম্রাজ্যবাদী নীতি নিয়ে। অবক্ষয়-ক্লিষ্ট সাম্রাজ্যবাদী নীতির আবর্ত থেকে মুক্ত হয়ে আত্মনির্ভর প্রগতিশীল নীতি অবলম্বন করে আমাদের পথ চলতে হবে। যে সম্পর্ক বিরাজ করবে তাতে বিশ্ববাসীর সামনে আমরা পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারি।

আবুল কাসেম ফজলুল হক : চিন্তাবিদ, অধ্যাপক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App