×

মুক্তচিন্তা

সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার সৎ সরকারপ্রধান

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:৩৫ পিএম

বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পাঁচজন সরকারপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত সুখবর এবং সরকারের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বদানকারী মাননীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতাকর্মী এবং প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য অনুকরণীয় একটি দৃষ্টান্ত।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্যারাডাইস পেপারস ও পানামা পেপারস নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। আমাদের জাতীয় পরিমণ্ডলে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসার কারণ- রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা যখন দুর্নীতির সঙ্গে লজ্জাজনকভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছেন, তখন তার আশ্চর্য ব্যতিক্রম মাত্র একজন। যাদের রাজনীতি দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে, লোভ দ্বেষ সঙ্কীর্ণতা যাদের স্পর্শ করেনি, যাদের দিন কাটে সুস্থতা-সত্য-সুন্দর আর মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন চিন্তায়, তাদের স্বতন্ত্রভাবে মূল্যায়ন করা অবশ্য-কর্তব্য। সেই বিবেচনায় ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ বিশ্বের পাঁচজন সরকার / রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছে, যাদেরকে দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, বিদেশে কোনো ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট নেই, উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পাঁচজন সরকারপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত সুখবর এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুসারীদের জন্য, তার সরকারের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বদানকারী মাননীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতা-কর্মী এবং প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীর জন্য অনুকরণীয় একটি দৃষ্টান্ত।

পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স-এর অনুসন্ধান অনুযায়ী বিশ্বের তৃতীয় স্থান অধিকারী সৎ নেতা হওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বলেছেন- ‘আমি মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে, জীবনকে বাজি রেখে বাংলার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমি টাকাপয়সা আছে কি না তা নিয়ে কখনো চিন্তা করি না। ওটা নিয়ে আমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। মাঝে মাঝে এমনও সময় আসে ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি ঘুমাতেও পারি না।’ প্রধানমন্ত্রীর কথিত বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে সাধারণের সম্মুখে উপস্থিত করে, যেখানে একজন সরকারপ্রধানকে ব্যক্তিগত কারণে নয়, রাজনৈতিক প্রতিহংসার কারণে মৃত্যুর মুখোমুখী দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকে তিনি বিশ্বের অন্যতম আর্থনৈতিকভাবে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ যেখানে তার নিরাপত্তা সতত হুমকির মুখে। এই দুঃসাহসিকতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মৌল বৈশিষ্ট্য, তার শক্তি নিঃস্বার্থ সেবার মানসিকতা।

ইতোপূর্বে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক ফরচুন ম্যাগাজিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে। এতে বলা হয়, মুসলিম দেশসমূহের সংস্থায় (ওআইসি) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র নারী নেতা শেখ হাসিনা। তিনি প্রজ্ঞার সঙ্গে ইসলামি ঐতিহ্য ও নারী অধিকার সম্পর্কিত দাবিগুলো বিবেচনা করেছেন। তিনি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নিবেদিতপ্রাণ। নারীদের আইনি সুরক্ষা এবং তাদের শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারীর অন্তত মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা রয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক সংহত। উপরি-কথিত বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ কথা বলা যায় যে, বাংলার অনগ্রসর নারী সমাজ হাজার বছরের ইতিহাসের অবহেলিত অবস্থান থেকে শেখ হাসিনার শাসনকালীন সময়েই মুক্তির দিগন্ত স্পর্শ করেছে। তার ঐকান্তিক চেষ্টায়ই সম্ভব হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন।

পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স-এর প্রতিবেদনটি বলছে, ১৭৩ জন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সৎ সরকারপ্রধান হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মরকেল। ৫টি প্রশ্নে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৯০। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং ৮৮ পেয়ে সৎ সরকারপ্রধানদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন। ৮৭ নম্বর পেয়ে এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮৫ নম্বর পেয়ে বিশে^ চতুর্থ সৎ সরকারপ্রধান বিবেচিত হয়েছেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলাবার্গ। আর ৮১ নম্বর পেয়ে এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধন-সম্পদ মানুষের চিরদিন থাকে না, মানুষকে মরতে হয়। সব রেখে চলে যেতে হয়। তবুও মানুষ অবুঝ। সম্পদের লোভে সে অস্থির হয়ে পড়ে এটা ঠিক। এটা মানুষের একটা স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তিটাকে যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সেই পারে দেশকে কিছু দিতে, জনগণকে দিতে। আমরা এখানে দিতে এসেছি।’

পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স নামক সংস্থার গবেষণায় ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে তারা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের ৩য় সৎ সরকারপ্রধান হিসেবে এবং বিশ্বের ৪র্থ কর্মঠ সরকারপ্রধান হিসেবে অভিমত দিয়েছে। বিচারের মানদণ্ড তবে দুটি- প্রথমত সততা, দ্বিতীয়ত কর্মক্ষমতা, সদিচ্ছা। একটি নিম্ন আয়ের দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং পরবর্তী পর্যায়ে উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে একজন ত্যাগী, উচ্চতর মানবিকবোধসম্পন্ন সরকার প্রধানের নেতৃত্ব যে আবশ্যক তা বলাই বাহুল্য। জাতির কাছে প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, তার দেশ ও জাতির কল্যাণচিন্তা নিখাদ এবং দেশের প্রতি তিনি নিবেদিতপ্রাণ।

সৎ সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের তালিকার শীর্ষে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মরকেল এবং দ্বিতীয় সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। অন্যদিকে কর্মঠ সরকার প্রধানের তালিকায় শেখ হাসিনা রয়েছেন ৪র্থ স্থানে। এর আগে চীন, ইরান এবং তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানরা রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি এখনো বলব, কী পেলাম, কী পেলাম না- সে হিসাবে মেলাতে আমি আসিনি। কে আমাকে স্বীকৃতি দিল, কে দিল না, সে হিসাবটাও আমার নাই। আমার একটাই হিসাব- এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কতটুকু কাজ করতে পারলাম।’ একজন সরকার প্রধানের এই উপলব্ধি জাতির জন্য সৌভাগ্যের বটে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, গবেষণায় যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, তাদের দেশে জনসংখ্যা কত? আর আমার দেশের জনসংখ্যা কত? এটা যদি তারা একটু তুলনা করতেন তাহলে হয়তো হিসাবটা পাল্টে যেত। কারণ আমাদের মতো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যদিয়ে তাদের চলতে হয়নি। কেউ গ্রেনেড হামলার শিকার হননি বা তাদের কাউকে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রেখে হত্যার চেষ্টাও হয়নি।’ প্রধানমন্ত্রীর এই দৃষ্টিভঙ্গি তুলনামূলক বিচার বা গবেষণার দাবি রাখে। এবং তা যদি করা হতো সেই গবেষণার ফল হতো ভিন্ন। প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে একটি উন্নয়নশীল দেশকে অগ্রগতির ও উন্নয়নের মহাসড়কে ধরে রাখা যে কত কষ্টসাধ্য কর্ম তা মরকেলের অভিজ্ঞতার ঊর্ধ্বে। উন্নত দেশের সরকার প্রধানের সাথে উন্নয়নশীল দেশের সরকার প্রধানের তুলনা খুব যৌক্তিক নয়। তা যে নয়, সে কথাও প্রধানমন্ত্রীর যুক্তিতে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় কথা- ‘আমাদের ক্ষুদ্র ৫৫ হাজারের কিছু বেশি বর্গমাইলের ভূখণ্ডে ১৬ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। তারপরও তালিকার শীর্ষে যারা রয়েছেন তাদের কিন্তু বাবা-মা বা আপনজন হারাতে হয়নি। অত্যাচারিত-নির্যাতিত হতে হয়নি, জেলের ভাত খেতে হয়নি, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত এমনকি তাদের উপর এতবারের প্রাণঘাতি হামলাও হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশের পরিবেশটাই আলাদা।’

ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে শেখ হাসিনা পিছিয়ে গেছেন। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দেশে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ চলে, অবাধ গণতন্ত্রের অভাব থাকে। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব থাকে; সেই দেশে দুর্নীতিটা শিকড় গেড়ে যায়। সেই শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়।’ প্রধানমন্ত্রীর আলোচ্য বক্তব্য, তার বিচক্ষণতার পরিচায়ক এবং একই সঙ্গে প্রশাসনিক কর্মে নিজের অসুবিধার গুপ্ত চোরাবালির প্রতি ইঙ্গিতও রয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মতে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রশাসনিক দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাটের পরিমাণ বছরে গড়ে ৬ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও রাজস্ব খাতে সরকারি ক্রয় এবং আমদানি বাবদ কমিশন ও ঘুষ গ্রহণের পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় সে সময়ে। শুল্ক ও কর খাতে লোপাটের পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। মিথ্যা মামলা, মামলা থেকে রেহাই, হয়রানি, গণগ্রেপ্তার প্রভৃতি খাতে সর্বসাধারণ ও বিরোধী দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে আদায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বাজেটের সরবরাহ, সেবা, মেরামত সংরক্ষণ খাত থেকে কমিশন বাবদ আদায় আরো ৫ হাজার কোটি টাকা। স্কুল ছাত্রদের জন্য কম্পিউটার ক্রয় প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে নেদারল্যান্ড সরকারের (সে দেশের আদালতে) দায়ের করা মামলায় খালেদা সরকারকে ৩১ কোটি টাকা জরিমানা করায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী জোট সরকার। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা খাতে লুটপাট হয় ৬৩৫ কোটি টাকা। প্রতিটি সেক্টরেই করা হয় নজিরবিহীন অনিয়ম আর দুর্নীতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দেশে সামরিক স্বৈরশাসন চালু, যে দেশে গণতন্ত্রের অভাব, যে দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকে, সেদেশে দুর্নীতিটার শিকড় গেড়ে যায়। সেই শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়। ’৭৫-এর পর থেকে ২১ বছর কিন্তু আমাদের দেশে সেই অবস্থাটাই চলেছে। এরপরে আবার ২০০১-২০০৮ (জামায়াত-বিএনপি জোটের শাসন) পর্যন্ত এই অবস্থা। ওইরকম একটা অবস্থা অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে আমি কী পেয়েছি, পেয়েছি সামরিক স্বৈরশাসন, সামরিক আইন, অনিয়ম, অবিচার, অত্যাচার যার ফলে সেই দুর্নামের এখনো ভাগীদার হতে হচ্ছে। তবে, হ্যাঁ আমি নিজে সততার সঙ্গে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি। বড় বড় দুর্নীতি যদি হতো মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হতো না। এত বড় বড় জিনিস অল্প সময়ে তৈরি করা সম্ভব হত না। এই দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে কিন্তু আমরা পদ্মা সেতু তৈরি করছি। আমি নিজে সততার সঙ্গে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি। আমার স্পিকার, একটি কথা মনে রাখবেন মাথায় পচন ধরলে সারা শরীরেই ধরে। যেহেতু মাথায় পচন নাই, শরীরে কোথাও একটু আধটু ঘা-টা থাকে সেগুলো আমরা শেষ করতে পারব।’

বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ এই প্রেক্ষাপটে সৎ নেতার সন্ধান করেছে। ৫টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেতৃত্বের সততার মান বিচার হয়েছে। প্রথম প্রশ্ন ছিল, সরকার/রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে তিনি কি তার রাষ্ট্রের বাইরে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করেছেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ক্ষমতায় আসীন হবার পর তার ব্যক্তিগত সম্পদ কতটুকু বেড়েছে? তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, গোপন সম্পদ গড়েছেন কিনা? চতুর্থ প্রশ্ন সরকার/রাষ্ট্র প্রধানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ আছে কিনা? আর পঞ্চম প্রশ্ন ছিল, দেশের জনগণ তার সম্পর্কে কী ভাবেন?

পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্সের ওই গবেষণায় দেখা গেছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশের বাইরে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। সংস্থাটি গবেষণায় বলছে, বেতন ছাড়া শেখ হাসিনার সম্পদের স্থিতিতে কোনো সংযুক্তি নেই। শেখ হাসিনার কোনো গোপন সম্পদ নেই বলে নিশ্চিত হয়েছে পিপলস অ্যন্ড পলিটিক্স। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ৭৮ ভাগ মানুষ মনে করেন সৎ এবং ব্যক্তিগত লোভ লালসার উর্ধ্বে। তবে, তার সরকারের বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতিতে যাদের সৎ ভাবা হতো, যাদের অনুকরণীয় মনে করা হতো তাদের অনেকেই কলঙ্কিত হয়েছেন পানামা পেপারস এবং প্যারাডাইস পেপারসে। রানি এলিজাবেথ থেকে শুরু করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নাম এসেছে অনৈতিক আর্থিক লেনদেনে। পানামা পেপারসের ধাক্কায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর ডেভিড গুনলাগসন। তথাকথিত সৎ দেশগুলোকে কাঁপিয়ে দিয়েছে গোপনে ‘করস্বর্গে’ বিনিয়োগের ফাঁস হওয়া তথ্যভাণ্ডার।

স্বাধীনতার দীর্ঘকাল পরে হলেও বিশ্বমাঝে বাংলাদেশ স্বকীয়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বতন্ত্র উন্নয়ন-পরিকল্পনা, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আর্থিক যোগান, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার আর মানবসম্পদকে দক্ষ করে কাজে লাগানো- এগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বংলাদেশ। এখন আর উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য অন্য কারো দিকে চেয়ে থাকতে হয় না। উন্নয়নের ধারাক্রমে কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বে অনুকরণীয় মডেলও হয়েছে বাংলাদেশ। অগ্রগতির সড়কে এখন বাংলাদেশ প্রায় অপ্রতিহত গতিতে অগ্রসরমান। সরকারের সঙ্গে জনগণের আকাক্সক্ষার নিকট সম্পর্ক এর পেছনে যোগাচ্ছে শক্তি। দূরদর্শী সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে সকল কার্যক্রম। এক সময় যারা বাংলাদেশকে বাঁকা চোখে দেখতেন, তাদের চোখেই এখন রাজ্যের আগ্রহ ছোট্ট এ দেশ নিয়ে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে রয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এটি কেবলই তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব, গভীর জীবনবোধ, দেশ ও মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, দেশের উন্নয়নে গভীর প্রত্যয়েরই ফল। ঘটনার পরিক্রমায় সাধারণ জীবনযাপন থেকে আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী একক নেতৃত্বেই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছেন। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। প্রতিভার স্বীকৃতি প্রাপ্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিজের নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে মেলে ধরেছেন। কোটি বাঙালির পক্ষ থেকে আপনাকে পুষ্পিত অভিনন্দন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ড. শরীফ এনামুল কবির : সাবেক সদস্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশন; সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App