×

মুক্তচিন্তা

ট্রাম্পের ঘোষণা সংঘাত ডেকে আনছে

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:১২ পিএম

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমরাও মনে করি ট্রাম্পের এ ঘোষণা প্রত্যাহারই এখন শান্তির পথ সুগম করতে পারে। বিশ্বনেতাদের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরোধিতা করা, সেই সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হওয়া।

পবিত্র নগরী জেরুজালেমকে ইসরায়েলের একতরফা রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি দানের ঘোষণায় আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে গাজা উপত্যকা আর পশ্চিম তীরের শহরগুলোতে। বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে ফের সংঘাত উসকে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয়েছে। আমরাও ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরুদ্ধে শান্তিকামী বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।

ইহুদি, মুসলিম এবং খ্রিস্টান, একেশ্বরবাদী এ তিন ধর্মানুসারীর কাছেই হাজার বছর ধরে পবিত্র নগরী হিসেবে বিবেচিত জেরুজালেম। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে জর্ডানের কাছ থেকে এর পূর্ব অংশ কেড়ে নেয় ইসরায়েল। ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুজালেমে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন আরম্ভ করে তারা। যদিও ইসরায়েলের এ একরোখা পদক্ষেপে কখনই সমর্থন দেয়নি বিশ্ব। প্রায় সাড়ে তিন লাখ ফিলিস্তিন বর্তমানে বসবাস করছেন পূর্ব জেরুজালেমে। ফিলিস্তিনিরা কোনোদিনই পূর্ব জেরুজালেমের দখল মেনে নেয়নি। তারা সবসময় বলে আসছে পূর্ব জেরুজালেম হবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী। ১৯৯৩ সালের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি চুক্তির সময় বলা হয়েছিল শান্তি আলোচনার পরবর্তী ধাপে জেরুজালেমের নিয়তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু ২০১৪ সালে দুপক্ষের মধ্যে সর্বশেষ শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর নতুন আরেকটি শান্তি প্রস্তাবনা প্রণয়নের দায়িত্বে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তা না করে বিশ্বব্যাপী বিরোধিতা সত্তে¡ও সম্প্রতি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইসরায়েল চিরকাল জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে কামনা করে এলেও এতকাল তেলআবিবেই সীমিত রাখতে হয়েছে তাদের তৎপরতা। কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষণায় এবার বিপুল উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি নেতাদের উদ্বেগ, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দিয়ে দেয়া। তাদের কথা, জেরুজালেম তাদের না থাকলে, কোনো টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন কখনই সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বরাবরই মেনে আসছে যে, জেরুজালেম শহরের মর্যাদা, মালিকানা নির্ধারিত হবে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চ‚ড়ান্ত শান্তি রফার অংশ হিসেবে। জাতিসংঘের প্রস্তাবে তা লিখিত আকারে রয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত কোনো দেশই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের একতরফা রাজধানী স্বীকৃতির ঘোষণা শান্তির প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে চরম সংঘাতকে উসকে দিয়েছে। বিক্ষোভ-সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর। গত শুক্রবার শুধু গাজা উপত্যকাতেই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত দুইজন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫০ জন।

এটা ইতিবাচক যে, ট্রাম্পের বিরোধিতা আসছে সর্বমহল থেকেই। মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার আশঙ্কায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয়েছে। এমনকি আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য চরম এক উসকানি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের সিদ্ধান্তটি ‘অকাজের’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। রাশিয়া বলেছে, মার্কিন এ স্বীকৃতি এক বিপজ্জনক ঝুঁকি এবং এটি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে বিশ্বে। বাংলাদেশে গত বৃহস্পতিবারই ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে খারিজ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমরাও মনে করি ট্রাম্পের এ ঘোষণা প্রত্যাহারই এখন শান্তির পথ সুগম করতে পারে। বিশ্বনেতাদের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরোধিতা করা, সেই সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হওয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App