×

মুক্তচিন্তা

দুই ছাত্রলীগ কর্মী খুন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:০৯ পিএম

শাবাব এবং মাহী হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক, খুনিরা উপযুক্ত শাস্তি পাক। খুনি সন্ত্রাসীদের পরিচয় যাই হোক তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে। সরকারকেও তার ভাবমূর্তির স্বার্থেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাস বন্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আবারো ছাত্রলীগের খুনাখুনির খবর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগ কর্মী শাবাব রহমান ও মাহী আহমদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড। আমরা রাজনীতির নামে এই নৃশংস খুনাখুনির তীব্র নিন্দা জানাই।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে গত অক্টোবর মাসে সংঘটিত সংঘর্ষে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী আক্তার হোসেন, শাহান আহমেদ, মাহবুব হোসেন ও রোকসান আহমেদ আহত হন। এরপর নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনছার আলীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মবশ্বির আলী। চলমান অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ছাত্রলীগ কর্মী শাবাব এবং মাহী হত্যার শিকার হতে পারে বলে স্থানীয় মহল এবং পুলিশ প্রশাসনেরও ধারণা। শাবাব রহমান মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং মাহী আহমদ স্থানীয় একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। সন্ত্রাসের বলি হয়ে অকালে ঝরে গেল দুটো তাজা তরুণ প্রাণ।

শুধু মৌলভীবাজারেই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সংঘাত, খুনাখুনি প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে চট্টগ্রামে মেধাবী ছাত্র ছাত্রলীগ কর্মী সুদীপ্ত বিশ্বাস খুন হয়। সারাদেশে ছাত্রলীগের এমন খুনখারাবির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। ছাত্রলীগের ওপর যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। এটা স্পষ্ট যে, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের রাশ টানতে পারছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও অভিভাবক রাজনৈতিক দল। গোলাগুলি আর কোপাকুপির কারণে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গত কয়েক বছরে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মারা গেছেন নিজ সংগঠনে আধিপত্য বিস্তারজনিত কোন্দলে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এখন এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের প্রধান কাজ হচ্ছে জবরদখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণেও তাদের হাত রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। নারীঘটিতসহ অপকর্মের সঙ্গে এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম আসছে একের পর এক। কিন্তু তাদের অনেককেই বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

ছাত্রলীগের এহেন অপকর্ম সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। ছাত্রলীগের দুষ্কর্মে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হচ্ছে সরকারকেও। সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ড। আমরা চাই, শাবাব এবং মাহী হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক, খুনিরা উপযুক্ত শাস্তি পাক। খুনি সন্ত্রাসীদের পরিচয় যাই হোক তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে। সরকারকেও তার ভাবমূর্তির স্বার্থেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাস বন্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুরো ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকার ও সরকারি দলের গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App