×

মুক্তচিন্তা

তারেক মাসুদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৪১ পিএম

রায়ে গাড়ি চালকদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার দায় চালককেও নিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে চালকও ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করবে। তা না হলে তারা সতর্ক হবে না। এটা অবশ্যই বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। ক্ষতিপূরণ দেয়ার এই দৃষ্টান্ত বাসচালকদের বেপরোয়া বাস চালাতে নিরুৎসাহিত করবে, যাত্রীদেরও আস্থাশীল করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রয়াত তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের করা এক মামলায় হাইকোর্ট গত রবিবার এ রায় দেন। রায়ে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্যাথরিন মাসুদ। বলা যায়, এই রায়ে একটি স্বীকৃতি পাওয়া গেছে যারা এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হবেন তাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার আছে বিষয়টা নিশ্চিত হলো।

মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের তখনকার সিইও মিশুক মুনীরসহ পাঁচ আরোহী। একটি ছবির জন্য লোকেশন দেখে ফেরার পথে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এ ঘটনায় বাদী হয়ে একটি মামলা করে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বাস মালিক, চালক এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন। গত ১৭ নভেম্বর এ সংক্রান্ত শুনানি শেষে ২৯শে নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। পরে ২৯ ও ৩০ নভেম্বর এবং গত ৩রা ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত রায় পাঠ শেষ করে এ রায় দেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। রায়ে বলা হয়েছে, বাসের তিন মালিক দেবেন ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫২ টাকা, বাসচালক জমির উদ্দিন দেবেন ৩০ লাখ টাকা এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দেবে ৮০ হাজার টাকা। রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে রায়ে।

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নামে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড মহামারী আকার ধারণ করেছে। আনুমানিক হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর অন্তত ১০ হাজার মানুষ নিহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। এ পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, দেশে কী ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে! সড়ক দুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার চিহ্নিত কারণগুলোর মধ্যে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ট্রাফিক আইন না মানা ইত্যাদি। পুরনো গাড়ি চালানো ও গাড়ি চালকদের আইন অমান্য করে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় দেখা যায় গাড়িচালক হেলপারকে দিয়ে গাড়ি চালায়। এ ছাড়া অনভিজ্ঞ ও অপরিপক্ব চালক দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার হয় না বিধায়ই গাড়ি চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায়। বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে অজ্ঞতার কারণেও দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তি বিচারের বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের। মোটরযান অধ্যাদেশ আইন অনুযায়ী প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের অধীনে একটি ট্রাইব্যুনাল থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত যারা মারা যাচ্ছেন তারা ওই ট্রাইব্যুনালে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারছেন না। তারেক মাসুদের ক্ষতিপূরণ মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে এখন থেকে সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করতে পারবেন। রায়ে গাড়ি চালকদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার দায় চালককেও নিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে চালকও ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করবে। তা না হলে তারা সতর্ক হবে না। এটা অবশ্যই বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। ক্ষতিপূরণ দেয়ার এই দৃষ্টান্ত বাসচালকদের বেপরোয়া বাস চালাতে নিরুৎসাহিত করবে, যাত্রীদেরও আস্থাশীল করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। শুধু চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলো নয়, সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রæত বিচার সম্পন্ন হওয়া সড়ক নিরাপত্তার জন্য জরুরি বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App