×

খেলা

২০তম এশিয়ান আরচারি, বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ

Icon

মাসউদ

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০১৭, ১১:০০ পিএম

এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের ২০তম আসরে প্রথম থেকেই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। দারুণভাবে সে লক্ষ্য পূরণ হয় ‘আরচারির মাশরাফি’ খ্যাত  নড়াইলের আবুল কাশেম মামুনের মাধ্যমে। মঙ্গলবার নড়াইলের এ আরচার স্বাগতিকদের মাঝে আলো হয়ে জ্বলছিলেন কম্পাউন্ড এককের শেষ আটে উঠে। মামুনের চমৎকার নৈপুণ্যে মুখ রক্ষা হয়েছে বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের। তৃতীয় রাউন্ডে চাইনিজ তাইপের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ১৪৯ স্কোর করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন মামুন। নিজের ক্যারিয়ার সেরাই নয়, বাংলাদেশের প্রথম আরচার হিসেবেও এ স্কোর করেছিলেন মামুন। কিন্তু সেমি ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগের দিনের পারফরম্যান্সের ধারে কাছেও যেতে পারলেন না। ভারতীয় আরচার অভিষেক স্কোর করেছেন ১৪৮, মামুনের ১৪১। মামুনের বিদায়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের শেষ সম্ভাবনার বাতিও নিভে গেছে। [caption id="attachment_17214" align="aligncenter" width="755"] আবুল কাশেম মামুন[/caption] সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ ভারতের অভিষেক ভার্মা হওয়ায় এটা অনুমিতই ছিল মামুনের দৌঁড়টা ওখানেই থামবে এবং থেমেছেও। মামুনকে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় করা ভারতের অভিষেক বার্মার গলায়ই উঠেছে এ ইভেন্টের স্বর্ণ। অবশ্য মামুনকে হারানো ভারতের অভিষেক ভার্মাকে স্বর্ণ জিততে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। জমজমাট লড়াই ১৪৭-১৪৭ সমতায় থাকার পর এক তীরের শ্যুট আউটেও ১০-১০ সমতা ছিল। কিন্তু বুলস আইয়ের কাছাকাছি তীর থাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার কিম জংগোকে পেছনে ফেলে স্বর্ণ জিতেন ভারতীয় তীরন্দাজ। [caption id="attachment_17215" align="alignnone" width="802"] মামুনকে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় করা স্বর্ণ জয়ী ভারতীয় তীরন্দাজ অভিষেক ভার্মা [/caption] বাংলাদেশের মামুন সম্পর্কে স্বর্ণজয়ী অভিষেক বলেন, মামুন ভালো খেলোয়াড়। সে তৃতীয় রাউন্ডে ১৪৯ স্কোর করেছেন। এখানেও যদি সেটা পারতেন, তাহলে অবশ্যই ভালো ফল হতো তার। আসলে পারফরম্যান্স ওঠা নামা করতেই পারে। বেশি বেশি অনুশীলন করে এ পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে মামুনও এশিয়ার অন্যতম সেরা আরচার হতে পারবেন। নিজের সাফল্যের রহস্যের কথা জানতে চাইলে অভিষেক বলেন, নির্ভার এবং মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকাই হলো সাফল্য পাওয়ার রহস্য। আপনি যদি বেশি আগ্রাসী হন, তাহলে আপনার পারফরম্যান্সটা নেতিবাচকও হতে পারে। এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে ৩৩টি দেশ অংশ নিচ্ছে ১০ স্বর্ণ পদকের লড়াইয়ে। চ্যাম্পিয়নশিপের গতবারের আসরে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। [caption id="attachment_17217" align="aligncenter" width="781"] তৃতীয় রাউন্ডে চাইনিজ তাইপের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ১৪৯ স্কোর করে সবাইকে চমকে দেয়া মামুন[/caption] নড়াইলের ছেলে মাশরাফি, মামুনও তাই। দুজনের বাড়ির মাঝে দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার। মাশরাফি ক্রিকেটের অধিনায়ক, মামুন আরচারি দলের। কম্পাউন্ডে মামুন সেরা আরচারও। তাই তো তার সতীর্থরা সব সময় মামুনকে ডাকেন ‘আরচারির মাশরাফি’ বলে। জাতীয় আরচারি দলের প্রধান কোচ নিশিথ দাসও মামুনকে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ বলেন। মামুন কী ভেবেছিলেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবেন? ‘আমার একটা স্বপ্ন ছিল। তবে ভাবতে পারিনি যে আমার এমন রেজাল্ট হবে। প্র্যাকটিসে যে স্কোর করেছি তার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে এখানে। শেষ ষোলতে উঠেছিলাম ১৫০ এর মধ্যে ১৪৯ স্কোর করে। দেশের কোনো আরচার এ স্কোর আগে করেনি। আমি নিজেও বছরে এক দুইবার ১৪৫ স্কোর করেছি। যা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমার টার্গেট ছিল ১৪৭, ১৪৬ স্কোর করা। তাহলে অবশ্যই ম্যাচটি জিতব। প্রতিযোগিতায় করেছি তার চেয়ে অনেক ভালো কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার পর বলেন আরচারির ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। [caption id="attachment_17221" align="aligncenter" width="835"] শেষ ষোলতে উঠার লড়াইয়ে ১৫০ এর মধ্যে ১৪৯ স্কোর করে সবাইকে আনন্দে ভাসান মামুন।[/caption] এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের পতাকা যার হাতে ছিল সেই মামুনের আরচারিতে আসার গল্পটা জানা যাক তার কাছেই, “২০০৮ সালে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠে আরচারির যুব ক্যাম্প হয়েছিল। আমি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা সামনে রেখে কি খেলা ঠিক হবে? প্রথমে এটা ভেবেছি। আবার ভাবলাম প্র্যাকটিস যেহেতু বাসার সামনে। খেলি না, দেখি কী হয়। অংশ নিয়ে ক্যাম্পে প্রথম হয়েছিলাম। নূর আলম স্যার আমাকে বাছাই করেন।” এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে কম্পাউন্ড এককে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা মামুন প্রথমে খেলতেন রিকার্ভে। নতুন ইভেন্ট কম্পাউন্ড আসার পর কোচকে বললাম এ ইভেন্ট খেলতে চাই। ২০০৯ সালে বিকেএসপিতে গ্রাঁ প্রি কম্পাউন্ড টিমে দলগত ব্রোঞ্জ পাই। এরপর দিল্লিতে ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে ফিটা গোল্ড অ্যাওয়ার্ড পাই জুনিয়রে সেরা স্কোর করার কারণে- বলেন মামুন। ২০১০ সালে ব্যাংককে গ্রাঁ প্রি এবং ২০১১ সালে ইতালি বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারায় লেখাপড়া আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে খেলা ছেড়ে দেই। বর্তমানে আমি যশোর এমএম কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র। সর্বশেষ বাংলাদেশ গেমসে রুপা পেয়েছিলাম ব্যক্তিগত ইভেন্টে। তারপর চার বছর গ্যাপ। এবার মাত্র এক বছর ক্যাম্পে ছিলাম। ফিরে এসেই চ্যাম্পিয়নশিপ খেলছি।  আরচারি ছেড়ে দিয়ে আবার ফিরে আসার গল্প বলছিলেন মামুন। ফেরাটা তার দুর্দান্তই বটে। মামুনের বাবা হোসেন আলী বন বিভাগে চাকরি করতেন, এখন অবসরে। বাড়ির সামনে নার্সারি আছে। সেই ব্যবসা এবং ছেলের আনসারের ভাতা দিয়ে সংসার চলে। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে মামুন ছাড়া কেউ নেই খেলাধুলায়। তবে ‘আরচারির মাশরাফি’র চাকরি স্থায়ী হয়নি আনসারে। ২০১১ সালে এ সংস্থায় যোগ দিলেও সৈনিক হিসেবে থাকতে চাননি। তবে এশিয়ান আরচারির কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর আনসার বিভাগ থেকে যোগ্যতা অনুসারে তাকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App