×

মুক্তচিন্তা

স্বাগত পোপ ফ্রান্সিস

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:১৬ পিএম

পোপের এই সফর মিয়ানমার থেকে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় ‘জাতিগত নিধনের’ শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন, সংকট নিরসনে আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগসমূহকে বেগবান করার কাজকে উৎসাহিত করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের অন্যতম একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, পোপ ফ্রান্সিসের সফর নির্বিঘ্ন ও সফল হবে।

সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া সফর করছেন খ্রিস্টধর্মের রোমান ক্যাথলিক শাখার প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। আজ বাংলাদেশে আসছেন তিনি। তিন দিনের সফরে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বাংলাদেশে আমরা শান্তির দূতকে স্বাগত জানাই। পোপ বাংলাদেশে আসছেন মিয়ানমার সফর শেষে। এই সফরে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের স্বরূপ খুব কাছে থেকে অনুধাবন করার সুযোগ হচ্ছে তার। ফলে প্রভাবশালী এই ধর্মগুরুর সফর কূটনৈতিকভাবেও গুরুত্ববহ হবে বলেই আমরা মনে করি।

উল্লেখ্য, এবারের রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতেই রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রা দেখে সহমর্মিতা জানিয়ে তাদের ‘আমার রোহিঙ্গা ভাই-বোন’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন নিপীড়িত মানুষের সবর্জনীন প্রতিনিধি পোপ। কিন্তু এবারের মিয়ানমার-বাংলাদেশ সফরকালে পোপ যাতে রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে মুখ না খোলেন এমনকি রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ না করেন তার জন্য তাকে আগেই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল মিয়ানমারের উগ্রপন্থী বৌদ্ধ সঙ্ঘ মা বা থা। শত শত বছর বসবাস করে এলেও রাখাইনের রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার, তারা এদের ‘অভিবাসী বাঙালি’ হিসেবে দাবি করে থাকে। মিয়ানমারে সফরকালে কোনো বৈঠকে কিংবা ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করতে পোপকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল মিয়ানমারের কার্ডিনাল আর্চবিশপ চার্লস মোং বো’র কাছ থেকেও। বিতর্ক এড়াতেই হয়তো মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করেননি পোপ। মিয়ানমার সফরের প্রথম দিনেই দেশটির শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে ১৫ মিনিটের এক অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন তিনি। বৈঠকে সিনিয়র জেনারেল লাইং ছাড়াও হাজির ছিলেন বিশেষ অভিযান ব্যুরোর তিন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান পরিচালনা এবং সাত লাখের ওপর রোহিঙ্গাকে তাড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর পেছনের মূল হোতা বলে মনে করা হয় জেনারেল লাইংসহ এই সামরিক চক্রটিকে। তিনি বৈঠক করেছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু কির সঙ্গেও।

বাংলাদেশের পোপের সফরসূচির মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ। কূটনীতিক, ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের একটি ছোট প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পোপের দেখা করার কথা রয়েছে। যতদূর জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কোনো সূচি রাখা হয়নি। আমাদের ধারণা, পোপ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে আসত। এতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি বিশ্বনেতাদের নজরে আসতে পারত আরো প্রকটভাবে। তারপরও আমরা আশাবাদী প্রাজ্ঞ এই ধর্মগুরু তার সফরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ব্যাপকহারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ, এ দেশে তাদের মানবেতর অবস্থান, বাংলাদেশের ওপর শরণার্থীর চাপ- এসব নিবিড়ভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। ভ্যাটিকান থেকে যেমন জানানো হয়েছে, পোপের এই সফর মিয়ানমার থেকে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় ‘জাতিগত নিধনের’ শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন, সংকট নিরসনে আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগসমূহকে বেগবান করার কাজকে উৎসাহিত করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের অন্যতম একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, পোপ ফ্রান্সিসের সফর নির্বিঘ্ন ও সফল হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App