×

অর্থনীতি

১০০ টাকা দরে পেঁয়াজ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০১৭, ০২:০৬ পিএম

দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। এ ছাড়া কিছুদিন পরই বাজারে আসছে নতুন পেঁয়াজ। এরপরও বাজারে হু হু করে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম। দাম বাড়তে বাড়তে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের কেজি এখন সেঞ্চুরি করেছে। যেখানে গত বছর এ সময়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে। যেখানে এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮৫ টাকায়। এ ছাড়া গত বছর এই সময়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকায়। টিসিবির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। আর এক বছর আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। শতাংশের হিসেবে দাম বেড়েছে ১৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। আর এক বছর আগে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা কেজি দরে। বছরের ব্যবধনে দাম বৃদ্ধির এ হার ২০০ শতাংশ। এদিকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে এবং ভারত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আমদানি খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি সময়ে টানা বৃষ্টিতে কিছু খেত নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা বিলম্বিত হচ্ছে। এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। শান্তিনগর বাজারে পেঁয়াজের দাম, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রথমে দাম বেড়ে ৯০ টাকা হয়। এরপর বাড়তে বাড়তে এখন ১০০ টাকা হয়েছে। সর্বশেষে কতদিন আগে ১০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন -জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করি। একবার রোজায় মাঝে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হয়ে ছিল। সেটা তাও ৫-৭ বছর আগে। সাম্প্রতিক সময়ে আর কখনো পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হয়নি। রাজধানীর শ্যাম বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আলম বলেন, দুই মাস আগেও ভারত থেকে প্রতিটন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল আড়াইশ’ ডলারের মতো। দফায় দফায় বেড়ে তা গত সপ্তাহে ৮৫০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। পেঁয়াজের আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের বাজারেও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, মজুদ পেঁয়াজ প্রায় শেষের পথে। নতুন পেঁয়াজও বাজারে আসতে দেরি হচ্ছে। কিছু দিন আগে টানা বৃষ্টি হয়েছে, এতেও অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। যে কারণে দাম বেড়েছে। খিলগাঁও তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী মামুন বলেন, পাইকাররা জানাচ্ছেন আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। পুরাতন দেশি পেঁয়াজও খুব বেশি মজুদ নেই। বৃষ্টিতে বেশকিছু খেত নষ্ট হওয়ায় এখনো বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসেনি। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমবে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। বছরে ২০ লাখ টন চাহিদা বিপরীতে দেশেই ১০ লাখ টনের উপরে উৎপাদন হয়। বাকি ১০ লাখ টনের মতো আমদানি করতে হয়। সূত্রটি আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭ লাখ ৯০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। এর বিপরীতে সেটেলমেন্ট হয়েছে ৮ লাখ ৬ হাজার টন। অর্থাৎ চলতি বছরে ইতোমধ্যে আমদানি করা ৮ লাখ ৬ হাজার টন পেঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছেছে। এ ছাড়া বর্তমানে ৫ লাখ টনের মতো দেশি পেঁয়াজ মজুদ আছে। সুতরাং সাম্প্রতিক আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে অথবা নতুন পেঁয়াজ আসা বিলম্বিত হওয়ার কারণ দেখিয়ে দাম বাড়ছে এমন যুক্তি সঠিক নয়। হাঁজিপাড়া বৌ-বাজারে পেঁয়াজ কিনতে সালমা বেগম বলেন, এক সপ্তাহ আগে এককেজি পেঁয়াজ কিনেছিলাম ৭০ টাকা দিয়ে। ওই সময় ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন কিছুদিন পরে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন দাম আরও কমবে। কিন্তু এখন বাজারে এসে দেখি দাম উল্টো বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন এক কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা বেশি দিয়ে ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যতদূর মনে পড়ে আমি কখনো ১০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনিনি। এর আগে তো ৯০ টাকা দিয়েও কখনো এক কেজি পেঁয়াজ কিনিনি। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে সাধারণত পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকায় চলে আসে। এবারই প্রথম দেখলাম এ সময়ে পেঁয়াজের দাম না কমে উল্টো বাড়ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App