×

জাতীয়

‘ডাক্তার সাহেবরা আমাকে বাংলাদেশে মরতে দেন’

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৭, ০৩:২৪ পিএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের পাঁচ তলা। সেখানে চিকিৎসা চলছে বরেণ্য ভাস্কর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। কাছে যেতেই ভাল করে চোখ মেলে দেখলেন। চিনতে পারলেন না। কেমন আছেন জানতে চাইলে অস্পষ্ট স্বরে কী যেনো বললেন। পরিচয় দেওয়ার পর সামান্য হাসির বলিরেখা ফুঁটে উঠলো মুখে। মাথার কাছে হাত বুলাতে বুলাতে দুজন সাংবাদিক যখন অভয়ের কণ্ঠে বলে উঠলেন, আপনার জন্য সারা দেশের মানুষ চিন্তিত। আপনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ফেরেন। সবাই আপনার সুস্থতার অপেক্ষায়। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী বলে উঠলেন, ‘আমার সুস্থ আর অসুস্থ থাকা একই কথা।’ তারপর আরও কিছুটা সময় চুপচাপ থেকে আবারও একটু একটু করে কথা বলে উঠলেন ফেরদৌসি। দুচোখের কোণা বেয়ে নিজের অজান্তেই যেনো পানি বেয়ে পড়ছে। ক্লান্ত শরীরে ফেরদৌসীর কণ্ঠে বেরিয়ে এতো বলিষ্ঠ কিছু বাক্য- ‘আমার দেশ বেস্ট, আমার দেশের ডক্টর বেস্ট, আমার দেশের ট্রিটমেন্ট বেস্ট, আমার বেস্ট আত্মীয়-স্বজন, আমার বেস্ট বন্ধুবান্ধব সবই এখানে। বিদেশেতো আমার কিছু নেই। সেখানে আমি কেনো যাবো?’ কথা হয় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তার এক চিকিৎসকের সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর চিকিৎসার দেখভাল করা তার চিকিৎসক জীবনের এক বিরল অভিজ্ঞতা। ঐ চিকিৎসক জানান, উনাকে (ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী) যখন ল্যাব এইড হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড থেকে বলা হয়েছে যে আপনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, তখন তিনি চুপ করে শুনলেন। সব চিকিৎসক অবাক হয়ে দেখলেন, হঠাৎ করে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আর একটু স্থির থেকে তিনি গান গেয়ে উঠলেন- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি… শেষ করলেন- ‘এই দেশেতে জন্ম যেনো, এই দেশেতে মরি।’ এরপর সাবলীলভাবে বললেন, ‘ডাক্তার সাহেবরা আমাকে বাংলাদেশে মরতে দেন।’ সেই অভিজ্ঞ চিকিৎসা নিজেও অনেকটাই আবেগ্লাপ্লুত হয়ে বললেন,  ‘উনার চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকে যেভাবে খরচ বহন করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাতে উনি চাইলে যেকোনো সময় বিদেশ যেতে পারেন চিকিৎসা করাতে। কিন্তু এদেশ ছেড়ে তিনি যাবেন না। উনি বিদেশ যাবেন না।’ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী মেয়ে ফুলেশ্বরী বলেন, ‘উনার পেসমেকার বসানো হয়েছে। ডায়াবেটিক হাই। কিডনি বিকল। ৪ বার হার্ট ফেইল করেছে চলতি মাসে। এক পা ভাঙ্গা। একটা ট্রমার মধ্যে চলে গেছেন উনি।’ ‘যখন ইচ্ছা চুপ করে থাকেন। কথা বলেন না। আমি চাই, আমার সাথে একটু কথা বলুক। একটা দুইটা শব্দ বলেন-এই,’ যোগ করেন ফুলেশ্বরী। গত ৮ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। সেখান থেকে দু’দিন বাসায় রাখার পর গত বৃহস্পতিবার তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনা হয়। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর চিকিৎসক জানান, আপাত যা দেখা যাচ্ছে তাই সব নয়। উনার অবস্থা খারাপ। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App