যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের পদত্যাগ দাবি
শামীম আহমেদ
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৫:৪৮ এএম
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। তারা বলেন, তিনি (ড. সিদ্দিকুর) পদত্যাগ না করলে আমরা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের তলবি সভা ডেকে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেবো। ড. সিদ্দিকুর রহমানকে অভিযুক্ত করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশ অমান্য ও দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। স্থানীয় সময় গত ১২ নভেম্বর রোববার রাতে জ্যাকসন হাইটসের ইত্যাদি রেষ্টুরেন্টে যুক্তরাষ্ট্রস্থ সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নের্তৃবৃন্দ’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ড. প্রদীপ রঞ্জণ কর। সাবেক ছাত্র নেতা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস এবং প্রচার সম্পাদক হাজি এনাম (দুলাল মিয়া)’র যৌথ পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক ছাত্র নেতা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম কার্যকরী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ড. মহসীন আলী, ডা. মাসুদুল হাসান, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সমন্বয়কারী ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, সাবেক ছাত্র নেতা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, দপ্তর সম্পাদক প্রকৌঃ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, প্রচার সম্পাদক হাজি এনাম (দুলাল মিয়া), আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. শাহ মোঃ বখতিয়ার আলী, কার্যকরী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা, শরীফ কামরুল আলম হীরা, আশরাফ মাসুক, প্রমুখ।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিউজার্সী আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি সুজন আহমদ সাজু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান, নিউজার্সী আওয়ামীলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, শামিম আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুমানা আক্তার, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দুরুদ মিয়া রনেল, সাধারণ সম্পাদক সুবল দেবনাথ, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি জেড এ জয়, হেলাল মাহমুদ, আবদুস সহীদ দুদু, সিরাজ সরকার, জিয়াউর রহমান মোরশেদ, নাফিসুর রহমান তুরান, ইলিয়ার রহমান, জালাল আহমেদ, টুটুল আহমেদ, আমিনুল হক পান্না, জিল্লু আহমেদ প্রমুখ।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নিউইয়র্কে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ যুক্তরাষ্ট্র শাখার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দকে অশালীন ভাষা ব্যবহার করে দেশ এবং জাতির সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৭১’র স্বাধীনতা, ৬৬’র ছয় দফা, ১১ দফা, ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যাদের গাত্রদাহের কারণ তাদের বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ করার আর কোন অধিকার নেই।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ড. সিদ্দিকের ১/১১ ভূমিকাও রহস্যাবৃত। সম্প্রতি তথাকথিত ফারাক্কা প্রতিরোধ কমিটি অর্থাৎ বিএনপি নেতা আজাহারুল হক মিলন কর্তৃক আয়োজিত সভায় ড. সিদ্দিক বলেন, ”এখনই সময় ভারত প্রতিরোধের”।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নেত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ড. গোলাপ সকলের সামনে ঘোষনা দিয়েছিলেন ৯০ দিনের মধ্য একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। ড. সিদ্দিক কৌশলে কার্যকরী কমিটির মিটিং বাতিল করে, নির্বাচনের পূর্বে কোন সম্মেলন হবে না বলে ঘোষনা দেন। কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে নিজেকে ক্ষমতাধর প্রমান করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বর্তমান জাসদের মূল নেতা হাসানুল হক ইনু জাসদের ভুল স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ড. সিদ্দিকুর রহমান সেই ভুলকে সত্য প্রমাণিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। এটা একটি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমানে জাসদ আমাদের বন্ধুপ্রতিম সংগঠন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মহত্বের মহিমা দেখিয়ে সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে জাসদকে শরীক জোটের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, নির্বাচনের পূর্বে ড. সিদ্দিকুর রহমানের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তিনি কার পার্সপাস সার্ভ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেছেন?লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ড. সিদ্দিকুর রহমানের ন্যুন্যতম আত্মসম্মান জ্ঞান থেকে থাকলে Public Retraction ক্ষমার মাধ্যমে পদত্যাগ করবেন। অন্যথায় ৯০ দিন অতিক্রান্ত হলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক একজন সিনিয়র সদস্যের সভাপতিত্বে নেত্রীর নির্দেশ অমান্য ও দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকায় ড. সিদ্দিকুর রহমানকে “তলবী” সভা ডেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা ড. প্রদীপ রঞ্জণ কর দলীয় গঠনতন্ত্রের ১১ ধারার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলন ডাকা না হলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তলবী সভা আহ্বান করা হবে।
উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে ড. সিদ্দিকুর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
উপদেষ্টা ড. মহসীন আলী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী কয়েস ড. সিদ্দিকুর রহমানের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি তার নের্তৃত্বে দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা ড. সিদ্দিকুর রহমানের ছাত্রলীগ সম্পর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলন না হলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সাধারণ নেতা-কর্মীরা।
দপ্তর সম্পাদক প্রকৌঃ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, ড. সিদ্দিকুর রহমান কখনো ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি একজন হাইব্রিড আওয়ামীলীগার।
সংবাদ সম্মেলনে প্রচার সম্পাদক হাজি এনাম (দুলাল মিয়া) ড. সিদ্দিকুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসে মামুন’স টিউটোরিয়ালে গত ৫ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, কতিপয় গর্দভ ছাত্রলীগ নেতার কারণে জাসদের সৃষ্টি হয়। জাসদ সৃষ্টি না হলে বঙ্গবন্ধুর এভাবে মৃত্যু হতো না। বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরী করেছিল জাসদ। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বাংলাদেশ আজ সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতো।