×

ফিচার

সম্ভাবনাময় জুটির অপমৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ০২:৪০ পিএম

সাম্প্রতিক ঢাকাই সিনেমায় জনপ্রিয় জুটি খুব বেশি নেই। এই জুটিগুলোর পাশাপাশি আরো জুটি তৈরিতে নির্মাতারা সচেষ্ট। প্রায়শ নতুন জুটি নিয়ে ঘোষণা আসে নতুন ছবির। এর মধ্যে কিছু জুটি পত্রিকার পাতায়ই রয়ে যায়। কারণ হুট করেই ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। কিছু জুটির অপমৃত্যু ঘটে মহরতের পর। কিছু জুটি ফটোসেশন করেও শুটিংয়ে নামতে পারে না। কিছু জুটি কিছুদিন শুটিং করে আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ পান না। এমনই কিছু সম্ভাবনাময় জুটির অপমৃত্যুর কথা জানাচ্ছেন এম রহমান
বাপ্পি-তানহা ওয়াজেদ আল সুমনের পরিচালনায় টাইগার মিডিয়ার প্রযোজনায় ‘জানবাজ’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন বাপ্পি চৌধুরী। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করার কথা ছিল তানহা তাসনিয়ার। ২০১৫ সালে বাপ্পির জন্মদিনে উপহার হিসেবে নতুন ছবিতে বাপ্পিকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে বলে তখন জানান ছবির অন্যতম প্রযোজক জাহিদ হাসান অভি। টাইগার মিডিয়ার অফিসে নতুন নায়িকা তানহাকে পাশে বসিয়ে বাপ্পি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তিবদ্ধ হলেও পরে আর ছবিটির কাজ এগোয়নি। ছবিটিতে পরীমণিরও কাজ করার কথা ছিল। মাহি-আসিফ ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে পরিচালক মালেক আফসারী, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও নায়ক আসিফ নূরকে সাইনিং মানি প্রদানের মধ্য দিয়ে একটি ‘চুক্তি স্বাক্ষর’ অনুষ্ঠানে আমিন খানের প্রযোজক হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল। রফিক-উজ-জামান যখন ‘ধামাকা’ নামে ছবিটির গল্প লিখতে ব্যস্ত, তখনই মাহি-আসিফ জুটি অনিশ্চয়তায় পড়ে। আমিন খান ও মালেক আফসারীর মধ্যে মতবিরোধের কারণে ‘ধামাকা’র নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পরে সাইমন-মাহি অভিনীত ‘গোলাপতলীর কাজলে’ বিশেষ চরিত্র পান আসিফ। কিন্তু এ ছবিটিরও শুটিং থমকে আছে। পপি-জায়েদ ১৯৯৭ সালে সিনেমায় আসেন পপি। জায়েদ খান আসেন ২০০৪ সালে। তারা প্রথমবারের মতো জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন একটি ছবিতে। ছবির নাম ‘বিয়ে হলো বাসর হলো না’। ছবিটি পরিচালনা করছিলেন রাকিবুল আলম। এফডিসিতে মহরতের মধ্য দিয়ে ছবির শুটিং শুরু হয় ২০১৪ সালে। ঢাকার অদূরে হোতাপাড়ায় একটানা কয়েক দিন শুটিং হয়েছিল। ছবির অন্য অভিনয়শিল্পীরা ছিলেন আমান, সুচরিতা, মিজু আহমেদ, শিবা সানু প্রমুখ। ঈদুল ফিতরে ছবিটি মুক্তিরও টার্গেট করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর ছবিটির কাজ শুরু হয়নি। শাকিব খান-জানভী জানভীর সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় হয়েছে ‘জানে না এ মন’ নামের একটি একশন ছবিতে। ওই ছবিতে ইমনের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন জানভী। এই জানভীকে বড় ধরনের ব্রেক দিতে চেয়েছিলেন পরিচালক এম এ রহিম। এই নির্মাতা শাকিব খানের বিপরীতে জানভীকে কাস্ট করেছিলেন ‘রানা দ্য ফাইটার’ ছবিতে। ছবিটির কিছুদিন শুটিং হওয়ার পর নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে জানা যায়, শাকিব-জানভী জুটি কখনোই দর্শকদের সামনে আসবে না। নিরব-মম ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবে মহরত অনুষ্ঠিত হয়েছিল রফিক শিকদার পরিচালিত ‘আমি শুধু তোর হবো’র মহরত। ১ আগস্ট পাবনার বিভিন্ন লোকেশনে ছবিটির শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রফিকের অন্যান্য ছবির মতো এটিও শুটিংয়ের মাঝখানে বন্ধ হয়ে যায়। এ ছবিতে জুটিবদ্ধ হয়ে রাজধানীর একটি স্টুডিওতে ফটোসেশনে অংশ নিয়েছিলেন নিরব-মম। ওই সেশনের স্থিরচিত্র ছাড়া ‘আমি শুধু তোর হবো’র আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ‘আমি শুধু তোর হব’ ছবিতে নিরব, মম ছাড়াও অভিনয় করার কথা ছিল সুচরিতা, সুব্রত, প্রমিথিউস ব্যান্ডের ভোকাল বিপ্লবসহ অনেকের। বাপ্পি-আইরিন ২০১৫ সালের জুলাই থেকে শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘লাভার বয়’ ছবির। এতে প্রথম বাপ্পি চৌধুরী ও আইরিনের জুটিবদ্ধ হওয়ার কথা ছিল। ছবিটি প্রযোজনা করছিলেন আরশাদ আদনান। তার মালিকানাধীন ভার্সেটাইল মিডিয়ার অফিসে নায়ক-নায়িকার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়েছিল। আরশাদ আদনানের অন্য ছবিগুলোর মতোই আটকে যায় ‘লাভার বয়ে’র কাজ। আজ পর্যন্ত এ ছবির কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। ইমন-দীপালি ২০১২ সালের মে মাসে এফডিসিতে শুটিং হয়েছিল ‘পায়রা’ ছবির। শুটিং হয়েছিল উত্তরার শুটিং হাউসেও। কিন্তু ৫ বছর পর ‘পায়রা’ নামে আর কোনো ছবির অস্তিত্ব নেই। কারণ মাঝপথে হারিয়ে গেছে ছবিটি। ‘লাল টিপ’ মুক্তির পরপরই ইমন ‘পায়রা’য় যুক্ত হোন। এ ছবিতে ইমনের সঙ্গে উড়তে চেয়েছিলেন দীপালি। দীপালি পরে আরো কিছু ছবিতে কাজ করতে পারলেও তার জমকালো অভিষেক হয়নি ইমনের বিপরীতে। বাপ্পি-মারজান মারজান জেনিফার অভিষেক হয় ২০১৬ সালে আশিকুর রহমানের ‘মুসাফির’ ছবিতে। এতে নায়ক ছিলেন আরিফিন শুভ। কিন্ত এর সিক্যুয়েল ঘোষণা দেয়ার সময় মারজান ও ছবির প্রযোজক তার স্বামী জুবায়ের ‘মুসাফির টু’র নায়ক হিসেবে বলেন বাপ্পির নাম। বাপ্পি-মারজান ফ্রেমবন্দি হয়ে ফেসবুকে ছবিও প্রকাশ করেন। দেড় বছর হতে চলেছে ‘মুসাফির টু’র কোনো খোঁজ নেই। সংসার নিয়ে দিব্যি ব্যস্ত আছেন মারজান। জায়েদ-পিয়া জায়েদ খান ও পিয়া বিপাশার জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করার কথা ছিল বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’তে। সেটা পরে আর হয়নি। ওই ছবি না হলেও আরেকটি ছবিতে তারা জুটি গড়ার সুযোগ পান। তারা প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ‘মনের রাজা’ ছবির জন্য। এটি পরিচালনা করছিলেন রকিবুল আলম রকিব। কিন্তু কিছুদিন শুটিং হওয়ার পর ছবিটি মাঝপথে থমকে যায়। পরিচালক জানান, ছবিটির কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। নিরব-পিয়া নিরব ও পিয়া ২০১৩ সালের নভেম্বরে মাসখানেক আফ্রিকায় শুটিং করেন। ‘প্রবাসীর প্রেম’ নামের ছবিতে তারা প্রথম জুটিবদ্ধ হোন। কিন্তু ছবিটি অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়ে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। গত চার বছরে ছবিটির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে পিয়ার অভিষেক হয়ে গেছে সিনেমায়। ‘প্রবাসীর প্রেম’ পরিচালনা করছিলেন আহমেদ আলী মÐল। এতে আরো অভিনয় করছিলেন ওমর সানী, আমান এবং আফ্রিকার একজন অভিনেতা। আইরিন-মেহমুদ প্রথমবার সিনেমা নির্মাণে নেমেছিলেন সুস্ময় সুমন। ২০১৫ সালের ১০ এপ্রিল শুরু হয়েছিল ‘তোকে হেব্বি লাগছে’র শুটিং। এতে জুটি হয়ে অভিনয় করছিলেন মেহমুদ ও আইরিন। ‘সর্বনাশা ইয়াবা’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় মেহমুদ সিদ্দিকীর। আইরিন ও মেহমুদ ছাড়াও এতে অভিনয় করেছেন কাজী উজ্জ্বল, শিখা, মৌ, শাহিন জুয়েল, সেতুসহ অনেকে। কিন্তু মেহমুদ-আইরিনের আর রুপালি পর্দায় আসা হবে না বলেই জানা গেছে। তাদের প্রথম ছবিটি শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শ্রাবণ-তানিয়া সোহানুর রহমান সোহান পরিচালকের চেয়ারে যখন, তখন ছবিটি যে আলোচনায় আসবে তাই স্বাভাবিক। ‘অবলা নারী ওয়াও বেবি ওয়াও’ ছবিটি শুরুর পর থেকেই নামের কারণে আলোচিত। কিন্তু ২০১৫ সালের শুরুর দিকে ছবির কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি আজো। তিন বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় আর কখনো শেষ হবে কিনা তাই নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছবিতে শ্রাবণ খান ও তানিয়া বৃষ্টি জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কখনো সিনেমা হলে দেখা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। আরজু-মাহি ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রং’ মুক্তির আগে মাহিয়া মাহি কিছুদিন একটি ছবির শুটিং করেন। আবুল খায়ের বুলবুল ছিলেন ‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম’ নামে ছবিটির পরিচালক। মাহির বিপরীতে জুটি বাঁধেন আরজু। এটিই বাপ্পি ছাড়া অন্য কোন নায়কের সঙ্গে মাহির প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো। কয়েকদিন শুটিং হওয়ার পর মাহির শিডিউল জটিলতা বাঁধে। এই জট আর কাটেনি। ছবিটি ২০১২ সালেই চিরদিনের জন্য ক্যানবন্দি হয়ে যায়। নিরব-মেহজাবিন নিরব ও মেহজাবিন দুজনেই বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন করে পরিচিতি পেয়েছেন। এই দুজনকে নিয়ে ২০১২ সালে নিজের দ্বিতীয় ছবি ‘পরবাসিনী’র কাজ শুরু করেছিলেন প্যারিস প্রবাসী পরিচালক স্বপন আহমেদ। কিন্তু শুটিংয়ের কিছুদিন পর দুজনকেই ছবি থেকে বাদ দিয়ে দেন পরিচালক। ইমন ছবির নায়ক ছিলেন শুরু থেকেই। তিনি ছবির নায়ক হিসেবে থেকে যান। চলতি বছর ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App