×

মুক্তচিন্তা

রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০১৭, ০৫:৪৬ পিএম

খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হোক। অন্যদিকে রোহিঙ্গা পরিদর্শনের মানবিক ইস্যুটিকে উপলক্ষ করে রোড শোর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করাই কি তার উদ্দেশ্য- এরকম প্রশ্নও সঙ্গত কারণেই উঠছে। সংঘাত-সহিংসতা ঘটানো বা এসবকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা খুবই দরকার।
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যেতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সড়কযাত্রাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। সড়কপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কয়েক স্থানে হামলার শিকার হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ১৫-২০টি গাড়ি, যার বেশিরভাগই গণমাধ্যমের। আহত হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। আমরা এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জানা গেছে, শনিবার গুলশান ছাড়ার সময় খালেদা জিয়ার বহরে অর্ধশতাধিক গাড়িতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিল সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কয়েক ডজন গাড়ি। যাত্রাপথে রাজধানীর মতিঝিল, হাটখোলা, যাত্রবাড়ী, কাঁচপুর ব্রিজ মোড়, সোনারগাঁও মোড়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, ববের চর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, নিমসার, চান্দিনা, ময়নামতি সেনানিবাস মোড়, কুমিল্লার বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রামের মিঞাবাজার, ফেনীর মহিপালসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নেতাকর্মী মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানায়। বিএনপি চেয়ারপারসন গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এসব সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শো-ডাউন করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। ফলে ওইসব স্থানে ব্যাপক যানজটেরও সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সময়ে তার নিরাপত্তা কর্মীরা গাড়িটি ঘিরে রাখে। সিনিয়র নেতাদের এ সময় গাড়ি থেকে নেমে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। এরকমটা হবে তা মোটেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। অন্যদিকে আমাদের দেশের যে অসহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতি, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মারমুখী সম্পর্ক তাতে জোর নির্বাচনী হাওয়ার মাঝে বিএনপি নেত্রীর স্থানে স্থানে যাত্রাবিরতিসহ দীর্ঘ সড়কযাত্রায় অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঝুঁকি থাকবে, এটা নিশ্চয়ই বিএনপি নীতিনির্ধারকদের অজানা নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও অনাকাক্সিক্ষত যানজট ও সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বাস্তবে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার এই তিনদিনের সফরকে একটি প্রাক-নির্বাচনী অভিযাত্রা হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা, তারা সেভাবেই এলাকায় এলাকায় শো-ডাউন করেছেন। কিছু কিছু স্থানে প্রতিপক্ষের সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে তাদের। হামলার মুখে পড়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরাও। রাজনৈতিক অপচর্চা বলে এই হামলা-ভাঙচুরের বিষয়গুলোকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা বা বিচারের ঊর্ধ্বে রাখা যাবে না। জননিরপত্তা ও শান্তি রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। এ কাজে কোনো গাফিলতি সরকারের সদিচ্ছাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা চাই খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হোক। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা পরিদর্শনের এই মানবিক কর্মে খালেদা জিয়া কেন সহজ ও সময়-সাশ্রয়ী বিমানপথের বদলে বিশাল বহরসহ দীর্ঘ সড়কযাত্রার ঝুঁকি নিলেন, তাও আমাদের বোধগম্য নয়। রোহিঙ্গা পরিদর্শনের মানবিক ইস্যুটিকে উপলক্ষ করে রোড শোর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করাই কি তার উদ্দেশ্য-এরকম প্রশ্নও সঙ্গত কারণেই উঠছে। সংঘাত-সহিংসতা ঘটানো বা এসবকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা খুবই দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App