×

মুক্তচিন্তা

বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরো জোরালো ভূমিকা চাই

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:২৩ পিএম

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গত সোমবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক তিনটি সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কুয়েতের উদ্যোগে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাঁড়ানো খুবই প্রয়োজন। তবে এই সহায়তা উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া যে পাওয়া যায়নি তা বলাই বাহুল্য। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার পাশাপাশি এদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে সংকটের স্থায়ী সমাধানেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো বেশি উদ্যোগী হবেন এই প্রত্যাশা আমাদের।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাঁড়ানো খুবই প্রয়োজন। তবে এই সহায়তা উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া যে পাওয়া যায়নি তা বলাই বাহুল্য। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার পাশাপাশি এদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে সংকটের স্থায়ী সমাধানেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো বেশি উদ্যোগী হবেন এই প্রত্যাশা আমাদের।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কুয়েতের উদ্যোগে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে জেনেভায় ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান এ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) দ্য ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) ও ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফিউজির (ইউএনএইচসিআর) সহযোগে এই প্রতিশ্রুতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ছয় মাসের জন্য ১২ লাখ রোহিঙ্গার জীবন বাঁচাতে ধনী ও দাতা বিশ্বের কাছে ৪৪ কোটি ডলার চাওয়ার বিপরীতে ৩৪ কোটি ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। সম্মেলনে ৩৪ কোটি ডলারের অঙ্গীকার পাওয়ার তথ্য জানিয়ে জাতিসংঘের মানবিকতাবিষয়ক এবং জরুরি ত্রাণ সমন্বয় (ওসিএইচএ) সংস্থার আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক বলেছেন, দ্রুত হারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন সংকট নয়। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা নিপীড়ন, সহিংসতা আর উদ্বাস্তুকরণ চক্রাবর্তের সর্বশেষ সংস্করণ মাত্র। আতঙ্কিত এবং সর্বস্বান্ত নারী, পুরুষ, শিশুরা স্রোতের মতো হাজারে হাজারে এসে ঠাঁই নিচ্ছে বাংলাদেশে। অন্যদিকে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার আশ্রয় এবং সুরক্ষা দেয়ার পরিস্থিতি বাংলাদেশের বাস্তব সামর্থ্য ছাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে অবিলম্বে তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য দেশটির উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের দূত। বলাই বাহুল্য, এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার মৌলিক চাহিদা পূরণের কাজটি খুবই কঠিন। লাখ লাখ মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া। মৌলিক চাহিদা নিবারণে হা-হুতাশ করছে এসব মানুষ। বাংলাদেশ সরকার ও সাধারণ মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করছে রোহিঙ্গাদের চাহিদা পূরণের। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী এ কাজে এগিয়ে এসেছে। থেমে নেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগ। বিদেশি সমব্যথীরাও এগিয়ে আসছেন। যদিও তা চাহিদার তুলনায় মোটেও পর্যাপ্ত নয়। বাংলাদেশ মানবিক কারণে এদের আশ্রয় দিচ্ছে, যদিও আশ্রিতের চাপ বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় রকমের বিরূপ প্রভাব ফেলার ঝুঁকি তৈরি করছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারি নিপীড়ন বন্ধে এবং বাস্তুচ্যুতদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক মহলের আরো জোরালো তৎপরতা দরকার। প্রতিশ্রুতি সম্মেলনের প্রাক্কালে এর অন্যতম উদ্যোক্তা ইইউ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এ সম্মেলন এক মানবিক সংকটে সাড়া দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব নেয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। হিংস্রতা বন্ধের অনিবার্যতার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছে ইইউ। অন্যদিকে সংঘাতকবলিত এলাকায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমারের উদ্দেশে জাতিসংঘের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমারকে, যাতে রাখাইনে নিজেদের অধিকারসহ শান্তিতে বসবাসে সক্ষম হয় রোহিঙ্গারা। আমরা আশা করব, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় রোধে একই সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায়িত্বশীল ভ‚মিকা নিয়ে এগিয়ে আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App