×

খেলা

হারিয়ে যাননি প্রমাণ করলেন মুশফিক

Icon

শামসুজ্জামান শামস

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১০:৪৯ পিএম

গত কদিন বড় ঝড়ই গেছে মুশফিকের ওপর। গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পরই নানা ঘটনায় বিব্রত ছিলেন বাংলাদেশ দলের এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। তবে মুশফিকের ওপর দিয়ে সবচেয়ে বড় ঝড়টা গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। কেন টানা দুই টেস্টে টস জিতে ফিল্ডিং নিলেন? কেন সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজের বোলারদের ধুয়ে দিলেন? কেন প্রোটিয়াদের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ? কেন টিম ম্যানেজমেন্টের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিলেন? তার দিকে কত প্রশ্ন ধেয়ে গেছে এ কদিনে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান তো বলেই দিলেন, দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন মুশফিক! ২০০৭ বিশ্বকাপে যে ম্যাচে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল, সেই ম্যাচে সর্বোচ্চ ৮০ রান করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এরপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। জয় পাওয়া ওই দুই ম্যাচে সর্বোচ্চ রান ছিল সৌম্য সরকারের। একটি ছিল অপরাজিত ৮৮ এবং অন্যটি ছিল ৯০ রানের। সৌম্য সরকারের ৯০ রানই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। রোববার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সৌম্যকে ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিকুর রহিম। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ১১০ রানে অপরাজিত থাকলেন তিনি। সেঞ্চুরি করতে তিনি খরচ করেছেন ১১৬টি বল। এটি মুশফিকের ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। দুই ছক্কা ও ১০ বাউন্ডারির মাধ্যমে অসাধারণ ইনিংসটি খেলেন মুশফিকুর রহিম। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হওয়া মুশফিক এ নিয়ে মোট ১৭৭ ওয়ানডে খেলেছেন। টেস্ট সিরিজে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করায় কাঠগড়ায় উঠেছিল মুশফিকের নেতৃত্ব। প্রশ্ন উঠেছিল তার সাম্প্রতিক ব্যাটিং ফর্ম নিয়েও। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টের চার ইনিংসে ছিল না কোনো ফিফটি। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই চওড়া ব্যাটে সব সমালোচনার জবাব দিলেন মুশফিক। তার ১১৬ বলে ১১০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে ২৭৮/৭ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটাই সর্বোচ্চ সংগ্রহ বাংলাদেশের।

[caption id="attachment_3822" align="aligncenter" width="900"] রোববার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে অপরাজিত ১১০ রানের ইনিংস খেলার পথে বলকে মাঠ ছাড়া করছেন টাইগার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম[/caption]

রানটা আরো বেশি হতে পারত বাংলাদেশের। হাতে উইকেট রেখে যখন ঝড় তোলার কথা, তখনই প্রত্যাশামতো ঝড়টা ওঠেনি। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৪১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। অথচ হাতে ছিল ৬ উইকেট। মুশফিকও ছিলেন উইকেটে। ছিলেন নাসিরও। সিরিজের আগেই গ্লাভস জোড়া মুশফিককে তুলে দিতে হয়েছে লিটন দাসের হাতে। পরে তো তার অধিনায়কত্ব নিয়েই উঠেছে জোর প্রশ্ন। তার অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেও। তবে নিশ্চিত এক যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে মুশফিককে কখনো পড়তে হয়নি। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন কিংবা শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেই নয়, তার লড়াই ছিল জেঁকে বসা বিষম চাপের বিপক্ষেও। মাঠের বাইরে যা-ই হোক, ২২ গজে অন্তত চাপে ভেঙে না পড়ার মানসিকতায় মুশফিক বরাবরই এ প্লাস পেয়েছেন।  রোববার কিম্বার্লিওতে সেটির ব্যতিক্রম হয়নি। রাজ্যের চাপ আর অনাকাক্সিক্ষত সব বিতর্ক থেকে মুক্তির পথ হিসেবে মুশফিক বেছে নিয়েছেন ২২ গজকে। কিম্বার্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে কোনো সংস্করণে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শুধু সেঞ্চুরিই পাননি মুশফিক, ঘিরে ধরা রাজ্যের চাপ-বিতর্ক থেকে বেরিয়ে স্বস্তিতে নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ পেলেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক। চাপের মুখে কী এক দুর্দান্ত ইনিংসই না খেললেন মুশফিক। বাংলাদেশের পুরো ইনিংসে আর কারো ফিফটি নেই। ত্রিশই পেরোতে পেরেছেন একজন। বাংলাদেশের পুরো ইনিংসটা মুশফিককে ঘিরে আবর্তিত হলো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরির কীর্তি এখন মুশফিকের। প্রোটিয়াদের মাটিতে তিন ফরমেট মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও এখন তিনি। আর এ সেঞ্চুরির মাধ্যমে মুশফিক প্রমাণ করলেন তিনি হারিয়ে যাননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App