×

মুক্তচিন্তা

নিবন্ধন সফল হওয়া জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১১ পিএম

সরকার আশা করছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সব রোহিঙ্গার নাম নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসতে। আমরাও চাই, দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হোক। তবে এই নিবন্ধন কার্যক্রমে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে। নিবন্ধনে রোহিঙ্গাদের নিরুৎসাহিত করতে তৎপর রয়েছে একটি মহল। এদের নিবৃত করাসহ সব বাধা ডিঙিয়ে নিবন্ধন সফল করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে।
সেনাবাহিনীর হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন শুরু করছে সরকার। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে এসব শরণার্থীদের। দেখা যাচ্ছে, অনেকের নিবন্ধনের বিষয়ে অনীহা রয়েছে। পুরনো রোহিঙ্গাদের একটি চক্র নিবন্ধনে নিরুৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ উঠছে। সরকারের তরফ থেকে প্রতিটি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের জন্য অনুরোধ জানিয়েও আশাতীত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার চাইছে আশ্রিতদের চিকিৎসাসেবা, খাবারসহ দেশি বা বিদেশি সাহায্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এই নিবন্ধনকে গুরুত্ব দেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা, তাদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম সুশৃঙ্খল করা, এমনকি তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতেও এই নিবন্ধন জরুরি। সংশ্লিষ্টদের কাজ হবে এদেশে আশ্রয় নেয়া সব রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া এবং যথাযথ কর্মকৌশল গ্রহণ করা। নিবন্ধন ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৬৭ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরীক্ষামূলকভাবে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের সময় তাদের নাম, পিতা-মাতার নাম, দেশের নাম, ধর্ম, লিঙ্গ ও পেশার তথ্য লিপিবদ্ধ হচ্ছে। এসব তথ্য নেয়ার পর ছবি তোলা হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেকের আঙুলের ছাপ নেয়া হয়। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর যেভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিস্তারিত তথ্য বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের মাধ্যমে ডাটাবেইজে ধারণ করে, একইভাবেই রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হচ্ছে। নাম নিবন্ধনের অনীহার কারণ হিসেবে আজ ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্বের দিক থেকে মিয়ানমার এবং ধর্মের দিক থেকে মুসলিম লেখার ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা তা মানতে নারাজ। তারা মিয়ানমারের নাগরিকের পরিবর্তে রোহিঙ্গা মুসলিম বলতেই বেশি পছন্দ করে। তারা নিবন্ধন ফরমে রোহিঙ্গা মুসলিম লেখার দাবি জানাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে উস্কানি দিচ্ছে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা পুরাতন রোহিঙ্গারা। তাদের পরামর্শেই নতুন রোহিঙ্গারা নিবন্ধন থেকে অনেকে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে নতুন এবং পুরাতনদের মধ্যে যারা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানকালে বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারাই বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছেন। আইওএম সূত্র মতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৫ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। এদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এভাবে পালিয়ে আসা অব্যাহত থাকলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে আরো ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসবে বলে জাতিসংঘ ধারণা করছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিপীড়ন শুরু হয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর আগে থেকে এবং তখন থেকেই তারা শরণার্থী হয়ে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। এরপরে ভিন্ন সময়ে লাখে লাখে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে জীবন বাঁচানোর জন্য। শুধুমাত্র গত এক বছরেই প্রবেশ করেছে তিন লাখের বেশি মানুষ। বিগত সরকারগুলো কেউই যথাযথভাবে এ বিষয়টিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কখনোই যথাযথভাবে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়নি। তারা কোথায় থাকছে, কি করছে, কাদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে তার কোনো খোঁজ-খবর রাখা হয়নি। ফলে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে মাদক চোরাচালানের বাহক হিসেবে এবং রোহিঙ্গা তরুণরা ধর্মীয় উগ্রবাদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। এছাড়াও অনেক অপরাধকর্মে সম্পৃক্ত হচ্ছে তারা। এবার নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে এটা খুবই জরুরি একটা কাজ, এর সফল বাস্তবায়নই এখন প্রত্যাশিত। সরকার আশা করছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সব রোহিঙ্গার নাম নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসতে। আমরাও চাই, দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হোক। তবে এই নিবন্ধন কার্যক্রমে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে। নিবন্ধনে রোহিঙ্গাদের নিরুৎসাহিত করতে তৎপর রয়েছে একটি মহল। এদের নিবৃত করাসহ সব বাধা ডিঙিয়ে নিবন্ধন সফল করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App